Advertisement
  • এই মুহূর্তে দে । শ
  • জুন ১৪, ২০২৩

পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশে বিলম্ব, বাড়ছে অসন্তোষ। জেলায় জেলায় দল বদলের হিড়িক, ঘাসফুল শিবিরে বাড়ছে উদ্বেগ

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশে বিলম্ব, বাড়ছে অসন্তোষ। জেলায় জেলায় দল বদলের হিড়িক, ঘাসফুল শিবিরে বাড়ছে উদ্বেগ

পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশে বিলম্ব এবং প্রার্থীর নাম নির্বাচন নিয়ে সংঘর্ষে  উত্তরবঙ্গ জুড়ে তৃণমূল ত্যাগের সংখ্যা বাড়ছে। মালদা,আলিপুরদুয়ারের বেশিরভাগ জায়গায় মনোনয়নে বিলম্ব হওয়ার ঘটনায় স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে শীর্ষ নেতৃত্বের দুরত্ব বাড়ছে, তাই গত বারের পঞ্চায়েতে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা অন্য দলে নাম লেখাচ্ছেন।

সোমবার, মালদা জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্য সাবিনা ইয়াসমিন সহ বেশ কিছু নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং ব্লক স্তরের দলীয় নেতারা জেলার মানিকচকে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে তৃণমূলের ৫০০ সমর্থক তৃণমূল ছাড়ে।

সাবিনা ইয়াসমিন বলেছেন, “দুর্নীতিতে লিপ্ত দলে থাকা আমাদের পক্ষে সম্ভব সম্ভব নয়। এমনকি প্রার্থী করার জন্য তৃণমূলের একাংশ থেকে টাকা চাওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা নিঃশর্তভাবে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছি।”

কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক মোত্তাকিন আলম তৃণমূল থেকে আসা এই নেতা-কর্মীদের দলে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, “মানিকচকের তৃণমূলের প্রায় অর্ধেক বিশিষ্ট মুখ কংগ্রেসে চলে গেছে।” তবে এই ঘটনায় তৃণমূলের নেতারা অবশ্য নিশ্চুপ।

মানিকচকের তৃণমূল বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র বলেন, “তাদের দলত্যাগ পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের পারফরম্যান্সকে প্রভাবিত করবে না।” আলিপুরদুয়ারের কালচিনিতে, ব্লকের চার তৃণমূল নেতা, যারা নির্বাচিত প্রতিনিধিও,তাঁরা তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন।

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক রাজ্যব্যাপী প্রচারের সময় দলের পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রার্থী নির্বাচনের ভোট নিয়েও দলত্যাগী তৃণমূলীরা প্রশ্ন তুলেছেন।

কালচিনি পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য জোসেফ কুজুর বলেছেন, “আলিপুরদুয়ার হল দ্বিতীয় জেলা যেখানে অভিষেক নব জোয়ার চলাকালীন প্রার্থীদের নির্বাচিত করার জন্য ভোট দেওয়া হয়েছিল, যা এখনও চলছে৷ কিন্তু আমাদের কালচিনি ব্লকের প্রার্থীদের সম্পর্কে আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে তাদের অধিকাংশই ভোটের ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়নি। এই ভাবে ভোট করে প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের গুরুতর সন্দেহ রয়েছে এবং তাই আমরা দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
মালদা জেলার গাজোল ব্লকে, উপজাতীয় সম্প্রদায়ের প্রায় ১০০ সদস্য মঙ্গলবার তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে চলে গেছে।

রবিবার, কোচবিহারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের একটি দল বিজেপিতে যোগ দেয়। তারা সিতাই বিধানসভা আসনের ওকরাবাড়ি থেকে ভেটাগুড়িতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ওনস্থানীয় বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিকের বাসভবনে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন।

এলাকার বিজেপি নেতা জিনারুল হক জানান, “সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রায় ৩০০ পরিবার বিজেপিতে যোগ দিয়েছে। তারা তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিরক্ত, যা প্রার্থী বাছাইয়ের বিষয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তীব্র হয়ে উঠছে।”
পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণার পর কোচবিহারে বেশ কিছু হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে।

শনিবার, দিনহাটা থানার অন্তর্গত ওকরাবাড়িতে তৃণমূল কর্মীদের দুটি গোষ্ঠী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে, কারণ তারা স্থানীয় পঞ্চায়েত আসনে প্রার্থী বাছাই নিয়ে সহমত ছিলেন না। এই ঘটনায় আহত দুই দলীয় কর্মীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।

মঙ্গলবার জেলার সাহেবগঞ্জ থানার অন্তর্গত কুড়সমারী এলাকা থেকে গুলি চালানোর খবর পাওয়া গেছে। জানা গেছে, তৃণমূল সমর্থকরা  নিজেদের মধ্যে গোষ্ঠী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে চার রাউন্ড গুলি চালানো হয়।
পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে এবং একজনকে আটক করেছে।

জলপাইগুড়ির মালবাজার পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সভাপতি রিনা বড়া সোমবার নির্দল হিসাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
রিনা বলেন, “আমি দলের মালবাজার ব্লক সভাপতি সুশীল প্রসাদের বিরুদ্ধে তাঁর কিছু অনৈতিক কাজের জন্য অভিযোগ করেছিলাম। দল তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু ভোটকে সামনে রেখে আবারও দল তাঁকে পুনর্বহাল করে। এটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি।”

অভিযোগ, তাঁর সমর্থনে দাঁড়িয়েছে অখিল ভারতীয় আদিবাসী বিকাশ পরিষদ। সুশীল প্রসাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। জেলার সদর ব্লকে, বিজেপির বেশ কয়েকজন নির্বাচিত প্রতিনিধি, যাঁরা তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন, মঙ্গলবার তাঁরা আবার বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।

একজন তৃণমূল দলত্যাগী বলেন, “তৃণমূল পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য প্রার্থী তালিকা প্রকাশে অনাবশ্যকভাবে দেরি করছে।”

এদিকে আয়েশা বিবি, ৪৫, পঞ্চায়েত নির্বাচনের সিপিএম প্রার্থী, মঙ্গলবার কোচবিহারে তাঁর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য বিডিও অফিসে যাওয়ার পথে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান৷

মৃত এই সিপিএম প্রার্থী, চেঙ্গেরকুঠি-খালিশামারির বাসিন্দার স্থানীয় পঞ্চায়েতে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ছিল। তিনি একটি দুচাকার গাড়িতে করে মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার সময়  রাস্তা নির্মাণের কাজে নিয়োজিত একটি ডাম্পারের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে ঘটনাস্থলেই আয়েশার মৃত্যু হয়। শীতলকুচি থানার পুলিশ মৃত আয়েশার দেহ উদ্ধার করেছে। তারা ডাম্পারটিকে আটক করলেও চালক পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!