- এই মুহূর্তে ন | ন্দ | ন | চ | ত্ব | র
- জানুয়ারি ৯, ২০২৫
প্রয়াত প্রীতিশ নন্দী

শেষ হল এক কৃতী বাঙালির বর্ণময় জীবন, প্রয়াত হলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা, সাংবাদিক, লেখক, চিত্রশিল্পী, সাংসদ ‘পদ্মশ্রী’ প্রীতিশ নন্দী। বুধবার মুম্বাইয়ে নিজের বাড়িতে হ্রদরোগে আক্রান্ত হয়ে জীবনাবসান হয় তাঁর। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। কাছের বন্ধুকে হারিয়ে শোকপ্রকাশ করেন অভিনেতা অনুপম খের।
কৃতী বাঙালির বর্ণময় চরিত্র হিসাবে সমুজ্জ্বল প্রীতিশ নন্দী ভারত জুড়ে নিজের ছাপ রেখেছেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে বহুগুণের অধিকারী ছিলেন তিনি। একাধারে ছিলেন সাংবাদিক, চলচিত্র নির্মাতা, চিত্রকর, কবি ও লেখক, ছিলেন সাংসদও। বুধবার মুম্বাইয়ে নিজের বাড়িতে হ্রদরোগে আক্রান্ত হয়ে জীবনাবসান হয় তাঁর। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। বর্ষীয়ান সাংবাদিকের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন তাঁর ছেলে কুশন নন্দী।
১৯৫১ সালে বিহারের ভাগলপুরে জন্ম প্রীতিশ নন্দীর। উচ্চশিক্ষার জন্য চলে আসেন কলকাতায়। লা মার্টিনিয়ার কলেজ ও প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা করেন। আশির দশকে ‘দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া’ উচ্চপদে কাজ করেছেন তিনি। পেশায় সাংবাদিক হলেও নানাক্ষেত্রে তাঁর ছিল অবাধ বিচরণ। লেখক, চিত্রকর, রাজনীতিবিদ, চলচ্চিত্র নির্মাতা-সমস্ত ভূমিকাতেই তাঁকে দেখা গিয়েছে। পশু অধিকার রক্ষা করতে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও গড়ে তোলেন তিনি। সাংবাদিকতার পাশাপাশি একাধিক বই লেখেছেব তিনি। তাঁর ইংরেজি কবিতার বইয়ের সংখ্যা ৪০, করেছেন বাংলা, উর্দু, পাঞ্জাবি কবিতার ইংরাজি অনবাদ। ইশ-উপনিষদের ইংরেজি অনুবাদও করেছিলেন। সাহিত্যে তাঁর বিপুল অবদানের জন্য ১৯৭৭ সালে মাত্র ২৬ বছর বয়সে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে ভূষিত হন।
‘সুর’, ‘কাঁটে’, ‘ঝংকার বিটস্’, ‘চামেলি’, ‘হাজ়ারো খোয়াইশে এইসি’, ‘পেয়ার কে সাইড এফেক্টস্’-এর মতো সিনেমাগুলি তাঁর প্রযোজনা সংস্থার হাত ধরেই মুক্তি পেয়েছিল। সম্প্রতি ‘ফোর মোর শটস্ প্লিজ়’ ওয়েব সিরিজ়ও তাঁর প্রযোজনা সংস্থা থেকেই প্রকাশ হয়। ৯০-এর দশকে দূরদর্শনে ‘দ্যা প্রীতীশ নন্দী শো’ ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয়। নির্মাতা হিসাবে ২৪টি চলচিত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, দুরদর্শনে পরিচালনা করেছেন ৫০০ টির বেশি অনুষ্ঠান। প্রবীণ এই চলচিত্র নির্মাতার প্রয়াণে শোকস্তব্ধ সিনেমা জগত। কাছের বন্ধুর মৃত্যুতে শোকাহত অভিনেতা অনুপম খের স্মৃতিচারণ করে লিখেছেন, আমার সবচেয়ে প্রিয় এবং কাছের বন্ধুর মৃত্যুতে আমি শোকাহত এবং মর্মাহত। প্রীতিশ একজন অসামান্য কবি, লেখক, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাহসী সাংবাদিক। মুম্বইয়ে আমার কেরিয়ার শুরুতে ও আমার পাশে ছিল। আমাকে মনের জোর জুগিয়েছে নানান সময়ে। আমরা অনেক কিছু শেয়ার করেছি একটা সময়ে। ও খুবই নির্ভীক মানুষ। আমি অনেক কিছু শিখেছি। যদিও পরবর্তীতে আমাদের যোগাযোগ কমে গিয়েছিল তবুও একসময় আমরা ছিলাম খুব কাছের। ও একবার আমাকে ফিল্মফেয়ারে কভারে ছেপে এমন চমকে দিয়েছিল। আরেকবার ইলাস্ট্রেডেট উইকলির কভারে ছেপেও চমকেছিল। আমি কোনওদিন ভুলব না সেসব। বন্ধুত্বের এমন নিদর্শন কমই পাওয়া যায়। ওকে এবং আমাদের একসঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো চিরকাল মনে পড়বে।’
বাঙালি অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় শোক প্রকাশ করে লিখেছেন, ”প্রীতিশ নন্দীর কলম, কণ্ঠস্বর ও দৃষ্টিভঙ্গি যেভাবে শিল্পজগৎকে প্রভাবিত করেছে, কাজের মাধ্যমে এমনভাবে প্রভাব বিস্তার করার নিদর্শন এমন কমই আছে। প্রকৃত প্রতিভাবান, কাজের মাধ্যমেই ওঁ চিরকাল জীবিত থাকবেন।’
তবে শুধু চলচিত্র নির্মাতা, কবি বা সাংবাদিক নন দীর্ঘ কাজের সময়ে তাঁকে নানান বর্ণময় চরিত্রে দেখা গেছে। ১৯৯৮ সালে সিবসেনার সাথে যুক্ত হয়ে রাজ্যসভার সাংসদ হইয়েছিলেন প্রীতিশ নন্দী। এছাড়াও নানান স্বেচ্ছাসেবি সংগঠনের সঙ্গে ছিল তাঁর যোগাযোগ। পশু অধিকার রক্ষা করতে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও গড়ে তোলেন তিনি।
পদ্মশ্রী সম্মান প্রাপ্ত প্রীতীশ নন্দীর এই বর্ণময় ও কর্মময় জীবনের ইতি হল ৭৩ বছরে। তবে এই কৃতী বাঙালির কাজে চিরদিন মানুষ তাঁকে মনে রাখবেন।
❤ Support Us