- দে । শ
- জুন ২০, ২০২৪
ভারতীয় রেলের উদাসীনতা আর কত কাড়বে প্রাণ ? স্মৃতির ক্ষত উসকে প্রশ্ন পরিজনহারাদের
করমণ্ডল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো যাত্রীদের পরিবারগুলির সদস্যদের আজও আক্ষেপ, ‘১০০ দিনের কাজ যদি কেন্দ্র সরকার বন্ধ না করত, বকেয়া মজুরি যদি মিটিয়ে দিত, তাহলেতো আর কাজের জন্য ভিনরাজ্যে ছুটতে হত না । এতগুলো প্রাণ অকালে চলে যেত না
ওড়িশার বালাসোরের কাছে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় পূর্ব বর্ধমানের ১৩ জনের । কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় হতাহতদের পরিবারের শোকে কাঁদল করমণ্ডল কাণ্ডের বলি কাটোয়ার কৈথন, করুই, মঙ্গলকোটের কৈচর, কুরুম্বা, মন্তেশ্বরের তেঁতুলিয়া, রাইগ্রাম, পূর্বস্থলীর বড়পোতার পরিবারগুলি । করমণ্ডল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো যাত্রীদের পরিবারগুলির সদস্যদের আজও আক্ষেপ, ‘১০০ দিনের কাজ যদি কেন্দ্র সরকার বন্ধ না করত, বকেয়া মজুরি যদি মিটিয়ে দিত, তাহলেতো আর কাজের জন্য ভিনরাজ্যে ছুটতে হত না । এতগুলো প্রাণ অকালে চলে যেত না । করমণ্ডল দুর্ঘটনায় জখম হয়ে বাড়ি ফেরা দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের যাত্রী পূর্বস্থলী ২নং ব্লকের বড়পোতা গ্রামের আলমগীর শেখ, আল আমিন শেখরা বলছিলেন, ‘১০০ দিনের কাজের মজুরিতে অনেকেরই সংসার চলত । সেই কাজ বন্ধ হয়ে যায় । আবার যে কাজ করেছিলাম, তার মজুরিও জোটেনি । বাধ্য হয়েই ভিনরাজ্যে ছুটতে হয়েছিল আমাদের । আমরা তবু প্রাণে বেঁচেছি । কিন্তু কতজনতো চলে গেল । রেলের উচিত দুর্ঘটনা বন্ধ করতে সত্যিসত্যিই কিছু করা ।’ দুর্ঘটনাকবলিত করমণ্ডলের যাত্রী পূর্বস্থলী ১নং ব্লকের আকবপুরের হাফিজউদ্দিন শেখ ও তার ছেলে রহিম শেখ জানালেন, ‘করমণ্ডলের পর কাঞ্চনজঙ্ঘা । রেল আর কত প্রাণ কাড়বে? দুর্ঘটনা রোখাটাকে অগ্রাধিকার দিক রেল ।’
করমণ্ডল দুর্ঘটনায় জেলার হতাহতরা প্রত্যেকেই দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের । তাদের পাশে দাঁড়ায় রাজ্য সরকার । আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । মৃতের পরিবারগুলি ৫ লক্ষ টাকা করে অর্থসাহায্য দেওয়া হয় । গুরুতর আহতরা ১ লাখ, বেশি আহতরা ৫০ হাজার ও কম আহতরা ২৫ হাজার টাকা করে অর্থসাহায্য পান । সেইসঙ্গে ৪ মাস ২ হাজার টাকা ও চাল, ডাল দেয় রাজ্য ।
করমণ্ডল কাণ্ডে সন্তান হারানো মঙ্গলকোটের কৈচরের কৃষ্ণা সর্দার, কাটোয়ার কৈথন গ্রামের তহমিনা বিবিরা কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার খবর শুনে বলছিলেন, ‘রেল আর কবে শিক্ষা নেবে? প্রত্যেক বছরইতো ট্রেন দুর্ঘটনা লেগেই আছে । আর কত মানুষকে মারবে?’ বছর উনিশের ছেলে ছট্টুকে নিয়ে কাজের সন্ধানে সেই অভিশপ্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেসে চেন্নাই যাচ্ছিলেন কাটোয়ার করুই গ্রামের সুখলাল সর্দার। নিজে বাঁচলেও বাঁচাতে পারেননি ছট্টুকে। ছট্টুর সঙ্গে দুর্ঘটনার বলি হয়েছে এলাকার সাদ্দাম শেখ, সৃষ্টি রায়, কলেজ সর্দার, সঞ্জিত সর্দাররা। কাটোয়া শ্মশানের একই চিতায় দাহ করা হয় সুখলালের ছেলে ছট্টু ও একই কামরার আর ৩ যাত্রী সৃষ্টি, সঞ্জিত ও কলেজকে। কাঞ্চনজঙ্ঘা দুর্ঘটনায় নতুন করে পুত্রশোক ফিরল সুখলালের পরিবারে। জলভরা চোখে হতদরিদ্র সুখলাল বিড়বিড় করেন, ‘ছেলেটা আমাকে খুব খেয়াল করত জানেন। ছেলেটাকে না নিয়ে ওপরওয়ালা যদি আমাকে নিত ! তবে বাইরে আর কাজে যাচ্ছি না। এখানে যাহোক একটা কিছু জুটে যাচ্ছে। মাথার উপরে মমতা দিদিতো আছেন তো ।’
❤ Support Us