- দে । শ
- জানুয়ারি ১৪, ২০২৩
দিদির দূত প্রকল্পকে ঘিরে দিকে দিকে বিক্ষোভের মুখে তৃণমুল নেতা-বিধায়করা, অভিযোগ জানাতে গিয়ে মন্ত্রীর অনুগামীর কাছে ‘চড়’ খেলেন এক গ্রামবাসী

পঞ্চায়েত নির্বাচনকে লক্ষ্য করে চালু করা ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচিকে ঘিরে এখন জনগণের তীব্র ক্ষোভের মুখোমুখি তৃণমূল নেতা বিধায়করা। মানুষের অভাব অভিযোগের কথা শুনতে গিয়ে গ্রামবাসীরাই বহু জায়গায় গ্রাম ছাড়া করলেন ‘দিদির দূত’দের। কোথাও আবার অভিযোগ জানাতে গিয় নিগৃহীত হলেন সাধারণ মানুষও।
শনিবার সকালে উত্তর ২৪ পরগণায় দিদির সুরক্ষা কবচ কর্মসূচিতে যোগ দেন এলাকার খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ। দিদির দূত হয়ে তিনি পৌঁছেছিলেন ইছাপুর নীলগঞ্জ পঞ্চায়েতের সাইবনা এলাকায়। সেখানে গ্রামের রাস্তা, পানীয় জল এবং আবাস যোজনায় ঘর পাওয়ার সমস্যা নিয়ে গ্রামবাসীদের অনুযোগ-অভিযোগের কথা শুনছিলেন মন্ত্রী রথীন। সেখানেই নিজেদের কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে গিয়েছিলেন স্থানীয় একটি মন্দির কমিটির কয়েক জন সদস্য। সেখানে মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে কথা বলতে যান সাগর বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তি। তাঁর কথায় মন্দিরে সামনে রাস্তা ও নাট মন্দির নিয়ে কথা বলতে গিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎই এক তৃণমূল কর্মী তাকে চড় মেরে বসেন। যা ঘিরে এলাকায় তৈরি হয়েছে চাঞ্চল্য।
বছরের শুরুতে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দলীয় সভা থেকে দিদির সুরক্ষা কবচ কর্মসূচির সূচনা করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল সরকারি প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা এলাকার সমস্ত মানুষ পাচ্ছেন কিনা তা জানা। আর এই কর্মসূচিঁ বাস্তবায়নে নিয়োজিত হয়েছিলেন তৃণমূলের নেতা মন্ত্রী থেকে শুরু করে দলীয় বিধায়করা। দিদির দূত হয়ে মানুষের সমস্যা অভাব অভিযোগের কথা শুনে তা তৃণমূল দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানানোর জন্য তাঁদের গ্রামে গ্রামে , পাড়ায় পাড়ায় পাঠানো হয়। গ্রামবাসীদের অভিযোগ সম্পর্কে তথ্য নিয়ে দূত বা তৃণমূলের প্রতিনিধিদের নির্দিষ্ট অ্যাপের মাধ্যমে তা দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে পৌঁছে দেওয়ার কথা। যাতে সরকার ঐ গ্রামে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে। এখন জায়গায় জায়গায় দিদির দূতকে কেন্দ্র করে সংঘটিত বিক্ষোভ পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তৃণমূল দলকে বেকায়দায় ফেলে দিল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
১১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে দিদির দূত কর্মসূচি। কর্মসূচির তৃতীয় দিনে বীরভূম ও পুরুলিয়ায় প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়লেন তৃণমূলের সাংসদ শতাব্দী রায় ও নেতা অর্জুন সিংহ। তৃণমূলের জনপ্রিয় মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্য দলীয় কর্মীদের নিয়ে বালিজুড়ি গ্রামে গেলে তাকে এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ জানান গ্রামবাসীরা। বিক্ষোভ দেখালেও দেবাংশু ঠাণ্ডা মাথায় তাঁদের অভাবঅভিযোগের কথা শোনেন। তাঁদের সমস্যা গুলোর যথাযথ সমাধান হবে বলে তাঁদের আশ্বাসও দেন।
তৃণমূল নেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় বাঁকুড়ার জুনবেদিয়া গ্রামে তালড্যাংরার বিধায়ক অরুপ চক্রবর্তীকে নিয়ে যান। সেখানে তাঁদের সামনে পেয়েই স্থানীয় মানুষরা এলাকার পানীয় জলের সমস্যার কথা জানাতে থাকেন। অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা না পাওয়া নিয়েও। মজার ব্যাপার হল , স্থানীয় তৃণমূল নেতারা ঘর ঘরে জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে কৃতিত্ব দিয়ে শ্লোগান করতে থাকেন। কিন্তু গ্রামের বহু এলাকায় জল না পৌঁছানোর অভিযোগ আসতেই তারা দলনেত্রীর নামে জয়ধ্বনি দেওয়া বন্ধ করে দেন।
সবথেকে বিতর্ক তৈরি হয়েছে তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়ের সফরকে ঘিরে। বীরভূমের রামপুরহাটের কাছে মেলেডাঙা গ্রামে দলের কর্মীদের সঙ্গে অভিনেত্রী সাংসদ পৌঁছালে নিকাশি ও রাস্তা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন সাধারণ মানুষ। পঞ্চায়েতকে জানিয়েও সমস্যার সুরাহা হল না কেন তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা। শতাব্দীও সরকারি প্রকল্পের সমস্ত সুযোগ সুবিধা পাওয়ার ব্যাপারে তাঁদের আশ্বাস দেন।গ্রামের এক তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে শতাব্দী সহ অন্যান্য নেতাদের মধ্যাহ্ন ভোজনের কথা ছিল।কিন্তু শুধু ছবি তুলেই তিনি পংক্তিভোজের আসর থেকে উঠে যান বলে অভিযোগ। প্রচার মাধ্যমেও এই খাবার ছেড়ে উঠে যাওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। যদিও শতাব্দী এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
দিদির দূত কর্মসূচিকে ঘিরে এলাকায় এলাকায় বিক্ষোভকে তৃণমূলের উন্নয়নের প্রকৃত স্বরূপ বলে কটাক্ষ করেছেন বিরোধী নেতারা। দুর্নীতির মামলায় জেরবার তৃণমূল। এখন পঞ্চায়েতের আগে জনমোহিনী কিছু কর্মসূচি নিয়ে ভোটের ময়াদানে বাজিমাত করতে চান তাঁরা। কিন্তু মানুষের এই বিক্ষোভের প্রতিফলন ভোট বাক্সেও হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় বিজেপি নেতারা। দিদির দূত কর্মসূচি ভোটের দিকে লক্ষ্য রেখে চালু হলেও অত্যন্ত জনমুখী এক কর্মসূচি। তবে বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূল নেতা কর্মীদের কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে কতটা পড়বে তা নিয়ে কোনো ইতিবাচক বক্তব্য এখনই রাখতে রাজী নন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
❤ Support Us