Advertisement
  • এই মুহূর্তে দে । শ
  • জানুয়ারি ১৭, ২০২৫

আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসকের ওপর যৌন অত্যাচার এবং হত্যার রায় ঘোষণা আগামীকাল

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসকের ওপর যৌন অত্যাচার এবং হত্যার রায় ঘোষণা আগামীকাল

আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসক যৌন নির্যাতন ও খুনের ঘটনায় উত্তাল হয়েছিল রাজ্য। এরমধ্যে কেটে গেছে ১৬২ দিন। শনিবার সেই মামলার চুড়ান্ত রায় ঘোষণা করবে শিয়ালদহের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত।

২০২৪ সালের ৯ আগষ্ট, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাতে উদ্ধার হইয়েছিল তরুণী চিকিৎসকের মৃতদেদ। ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ উঠেছিল। এই নারকীয় ঘটনার প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছিল মহানগরী। প্রাথমিক দতন্তে নেমে এক সিভিক ভলেন্টিয়ারকে মূল অভিযুক্ত হিসাবে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পরবর্তীকালে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ঘটনার তদন্ত শুরু করে সিবিআই। তথ্য প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ত সন্দীপ ঘোষ ও টানা থানার অফিস-ইন চার্জ অভিজিৎ মণ্ডল।  শনিবার মামলায় চুড়ান্ত রায় ঘোষণা করবে শিয়ালদহের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত ।

ইতিমধ্যে ৫২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ করেছে আদালত। যার মধ্যে রয়েছেন তরুনী চিকিৎসকের পরিবারে লোকজন, সিবিআই ও পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তারা, তরুণীর সহপাঠী ডাক্তার ও ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের ফাঁসির সাজার দাবি করা হয় সিবিআইয়ের তরফে। এই মামলায় বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল গত ১১ নভেম্বর। গত ৯ জানুয়ারি অভিযুক্তের তরফের আইনজীবী নিজেদের তরফে হলফনামা জমা দেন। নির্যাতিতার পরিবারের তরফে আইনজীবী আদালতে সওয়াল করতে গিয়ে যদিও তদন্তপ্রক্রিয়া নিয়ে অসন্তোষ উগরে দেন। তদন্ত ঠিক ভাবে হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি । কেবলমাত্র ধৃত ১ জন একা এই নারকীয় ঘটনা ঘটাতে পারেনা বলে অভিযোগ নির্যাতিতার পরিবারের।  রুদ্ধদ্বার কক্ষে এই শুনানি চলাকালীন বিচারপতি জানান আগামী ১৮ জানুয়ারি মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হবে। সেদিন আদালতের বাইরে নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবীরা বলেছিলেন, সব পক্ষের সওয়াল-জবাব শেষ হওয়ার পর ১৮ জানুয়ারি দিনটিকে রায়দানের জন্য ঠিক করেছেন বিচারক। তাঁরা বলেন, “আমরা বিচার চাইতে এসেছি। যে বা যারা যুক্ত, তারা যেন সর্বোচ্চ সাজা পায়। লিখিত আকারে আমাদের আবেদন জমা দিয়েছি। আমাদের বক্তব্যের পর সিবিআই উত্তর দিয়েছে। সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট এখনও জমা পড়েনি। পুরোপুরি শেষও  হয়নি তদন্ত। আরও কেউ এই ঘটনার সাথে যুক্ত থাকলে, তাদের নামও সামনে আসবে বলে আশা করছি। সিবিআই কোর্টে সর্বোচ্চ সাজা দাবি করেছে।” সঞ্জয়কে বলির পাঁঠা করা হচ্ছে বলে যে অভিযোগ উঠছে, সেই তদন্ত নিয়েও একাধিক  প্রশ্ন উঠছে। তা নিয়ে নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী জানিয়েছেন, আদালত সবদিক খতিয়ে দেখবে বলে আশাবাদী তাঁরা। ইতিমধ্যেই  সিবিআইয়ের তদন্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছেন নির্যাতিতার অভিভাবকরা।
আরজি করের ঘটনার আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা রাজ্যে। বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছিলেন কাতারে কাতারে মানুষ। ‘রাতদখল’ কর্মসূচি করেছেন মহিলারা। নাগরিক সমাজে চাপা ক্ষোভের বাঁধ ভেঙে গেছিল এই ঘটনায়। কর্মক্লখেত্রে মহিলাদের সুরক্ষা প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে উঠে এসেছিল ক্ষোভ। জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি, রাজপথে বিচারের দাবিতে ধর্ণামঞ্চে বসে থাকবার চিত্র দেখেছিল গোটা দেশ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একাধিক বৈঠকের পরেও নিজেদের অবস্থানে দৃঢ় ছিলেন নির্যাতিতার ডাক্তার সহযোদ্ধারা। অনেক দূর জল গড়িয়েছিল, রাজ্য ছাড়িয়ে দেশে লেগেছিল ঘটনার উত্তাপ।  আরজি কর-কাণ্ডে ‘স্বতঃপ্রণোদিত’ মামলা দায়ের হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে জাতীয় টাস্ক ফোর্সও গঠন করে দিয়েছিল দেশের শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।সুপ্রিমকোর্টে সেই মামলা এখনো চলছে।

অন্যদিকে, মেদিনীপুরে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় গাফিলতির অভিযোগে রাজ্য সরকার ১২ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করার সীদ্ধান্ত নেয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, ১৩ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তদন্ত কমিটি এবং সিআইডি-র তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ওই চিকিৎসকদের গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল।  এর জেরে শুক্রবার কর্মবিরতির হুশিয়ারি দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। যদিও শুক্রবার সকালে স্বাভাবিক সম্পূর্ণ কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন চিকিৎসকরা।  কলকাতা থেকে জুনিয়র চিকিৎসকদের সংগঠনের কয়েকজন প্রতিনিধি মেদিনীপুর মেডিক্যালে যাচ্ছেন বলে খবর।  অন্যদিকে স্যালাইন কাণ্ডে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। সেই নির্দেশ মতো মঙ্গলবার মেদনিপুরের হাসপাতালে পৌঁছেছে তদন্তকারী সংস্থার দুই সদস্যের প্রতিনিধি দল। পিটিজি চিকিৎসক প্রসূতির অপারেশন করেছিলেন এই অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবারই মুখ্যসচিব জানিয়েছিলেন , অস্ত্রোপচার হলে সব সময় এক জন সিনিয়র চিকিৎসকের উপস্থিতি থাকা আবশ্যক। তাঁদের উপস্থিতিতে জুনিয়র ডাক্তারেরা সেই কাজ করে থাকেন। কিন্তু মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের প্রসূতিদের চিকিৎসার সময় সেই নিয়ম মানা হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, কোনও এসওপি মেনে চিকিৎসা হয়নি।’ যাঁদের গাফিলতি, তাঁদের কোনওভাবেই রেহাই দেওয়া হবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনা, কঠোরতম পদক্ষেপ নিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়. হাসপাতালের আরএমও, পিজিটি সহ ১২জন চিকিৎসকদের সাসপেন্ড করার পাশাপশি প্রতিটি হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের গেট পর্যন্ত সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!