- পা | র্স | পে | ক্টি | ভ রোব-e-বর্ণ স | ফ | র | না | মা
- জুন ২৩, ২০২৪
পাহাড়ে দেশবন্ধুর বাড়িতে

দার্জিলিং এ দেশবন্ধুর বাড়ি
স্বাস্থ্য উদ্ধারে দার্জিলিং গিয়ে অন্তত চারজন বিশিষ্ট বাঙালির মৃত্যু হয়েছে সেখানে: ১. ভাওয়ালের রাজা রমেন্দ্রনারায়ণ রায় (মৃত্যু ৭মে ১৯০৯ বিতর্কিত) ২. ভগিনী নিবেদিতা ( মৃত্যু -১৩ অক্টোবর ১৯১১) ৩. রাজা সুবোধ মল্লিক (মৃত্যু -১৪ নভেম্বর ১৯২০) এবং ৪. দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ( মৃত্যু – ১৬ জুন১৯২৫)। দেশবন্ধুর কথা ভাবলে বা স্মরণ করলে মনের প্রসারতা বাড়ে। সেই কবে পড়েছিলাম তাঁর কবিতা: ‘অপরের দুঃখ জ্বালা হবে মিটাইতে / হাসি-আবরণ টানি দুঃখ ভুলে যাও।
৪ জুন ২৪ সংসদ ভোটের ফলাফলে মনোযোগ না দিয়ে দার্জিলিং ম্যালে বেরিয়ে পড়ি সপরিবার। ঠিকই করেছিলাম এবার দেশবন্ধুর বাড়ি ‘শেড অ্যাজাইড’ দেখবই। নেপালি ভাষার কবি ভানুভক্ত-র গৌরবময় মূর্তি পেরিয়ে ম্যালের পূর্বঢালে নেমে গেলাম দেশবন্ধু রোড ধরে। মন ভরে গেল সদ্য রং করা সাদা বাড়ি দেখে। সম্ভবত মৃত্যুদিবস ১৬জুন উদযাপন উপলক্ষে রঙের এই প্রলেপ। রাজভবনের দিকেও একসঙ্গে গান্ধি-সুভাষ-চিত্তরঞ্জনের মূর্তি স্বমহিমায় উজ্জ্বল।
এখনকার নেতাজি ওয়ার্ডটি আসলে একটি দোতলা বাড়ি। দোতলায় তখন ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায়, দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত, কিরণশঙ্কর রায় প্রমুখ। নিচে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, দেশগৌরব সুভাষ চন্দ্র বসু, কাজী নজরুল ইসলাম, দেশপ্রাণ বীরেন্দ্রনাথ শাসমল প্রমুখ। এই বাড়ির বাঁ দিকে এসইউসিআই ফাইল, তখন ছিল বম্ব ওয়ার্ড।বন্দি ছিলেন সতীশ পাকড়াশী, মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী ও মেছুয়াবাজার বোমার মামলায় ধৃত অগ্নিযুগের অন্যান্য বিপ্লবীরা
কেউ কেউ বলেন আমার লেখায় জেলের ছোঁয়া থাকলে পড়তে ভাল লাগে। বেশ, দেশবন্ধুর প্রসঙ্গ নিয়ে চলে যাই ১৯২১ সালের আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে। এখনকার নেতাজি ওয়ার্ডটি আসলে একটি দোতলা বাড়ি। দোতলায় তখন ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায়, দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত, কিরণশঙ্কর রায় প্রমুখ। নিচে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, দেশগৌরব সুভাষ চন্দ্র বসু, কাজী নজরুল ইসলাম, দেশপ্রাণ বীরেন্দ্রনাথ শাসমল প্রমুখ। এই বাড়ির বাঁ দিকে এসইউসিআই ফাইল, তখন ছিল বম্ব ওয়ার্ড।বন্দি ছিলেন সতীশ পাকড়াশী, মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী ও মেছুয়াবাজার বোমার মামলায় ধৃত অগ্নিযুগের অন্যান্য বিপ্লবীরা। সেবার জেলের ভেতর পা নাড়ানোর জায়গা নেই, অসহযোগ আন্দোলনের সত্যাগ্রহীদের এত ভিড়। রাতে অনেক ওয়ার্ডের গেট বন্ধ করা যেত না। সারারাত চলত হৈচৈ।বম্ব ওয়ার্ডে থাকত শ্বেতাঙ্গ প্রহরী। বিশিষ্টজনের সামনেও পাহারা থাকত দেশীয় সিপাহি। একদিন মাঝারি মানের এক নেতা দেশবন্ধুর কাছে নালিশ জানালেন, বম্ব ওয়ার্ডের তরুণরা সত্যাগ্রহী ছেলেদের হিংসাত্বক কার্যকলাপে যুক্ত হতে প্রলোভন দিচ্ছে। উত্তরে দেশবন্ধু বললেন, তাদের ত্যাগের কথা ভাবলে নিজেরই অহংকার চূর্ণ হয়ে যায়। তারপর আর কেউ কাছ ঘেঁষেনি।
আলিপুর সেন্ট্রাল জেল
দেশবন্ধু মাঝে মাঝে সতীশ পাকড়াশীদেরও নিমন্ত্রণ করে খাওয়াতেন, পরিবেশন করতেন প্রিয় শিষ্য সুভাষ নিজে। যদি ভাবেন জেলে রান্না করে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে বুঝি, তা কিন্তু নয়, ইংরেজ জেল মানে বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো
বাংলাদেশের বিভিন্ন জেল ঘুরে এখন বিপ্লবীরা এই জেলে। গ্রীষ্মের নানারকম ফল, সন্দেশ, পায়েস ইত্যাদি চোখেই দেখেননি বছরের পর বছর। দেশবন্ধু, দেশপ্রাণ ও সুভাষের বাড়ি থেকে ফলটল বা ভাল খাবার এলে ত্রৈলোক্য চক্রবর্তীদের ডেকে এনে খাওয়াতেন খুব আদর করে। সুভাষ তো তাঁর মনের মতো গুরু পেয়ে নিজহাতে রান্না করে খাওয়াতেন। দেশবন্ধু মাঝে মাঝে সতীশ পাকড়াশীদেরও নিমন্ত্রণ করে খাওয়াতেন, পরিবেশন করতেন প্রিয় শিষ্য সুভাষ নিজে। যদি ভাবেন জেলে রান্না করে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে বুঝি, তা কিন্তু নয়, তখন ছিল এখন বরং চুল্লি কেউ রাখলে বা বানালে তল্লাশি করে ভেঙে দেওয়া হয়। ইংরেজ জেল মানে বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো। নাহলে দিনদুপুরে দু দুটো জ্যান্ত পিস্তল ঢুকে যায় প্রেসিডেন্সি জেলে ! পিস্তল না ঢুকলে এবং নরেন গোঁসাই খুন না হলে অন্য খাতে বইত বিপ্লবের ধারা।

দার্জিলিংএ দেশবন্ধু সংগ্রশালা
যাকগে সে কথা। সময় পেলেই দেশবন্ধু সুভাষকে নিয়ে বসতেন সাহিত্য আলোচনা ও কবিতা পাঠে, খুবই মনোরম সে মুহূর্ত, কিন্তু বড্ড অস্বস্তিতে পড়তেন সুভাষ যখন দেশবন্ধু আলোচনায় বসতেন তাঁর সম্পত্তি কোন্ কোন্ কাজে দান করবেন, তা নিয়ে ঘরোয়া কথাবার্তায় কারণ শিষ্যের এত শরিক যে তাঁর একার ভাবনায় তার সমাধান নেই। এখন হাজরা মোড়ের উত্তরে যখন দেখি বিশাল অঞ্চল জুড়ে ক্যানসার রিসার্চ সেন্টার, ক্যানসার হসপিটাল, প্রসূতি সদন ইত্যাদির ২৪ ঘন্টা নানা কর্মযজ্ঞ তখন আন্দাজ করতেও ভাল লাগে যে পূর্ণ জীবন পেলে তাঁর বেঙ্গল প্যাক্ট, স্বরাজ দল বা দানধ্যানের বিষয়গুলো কোথায় গিয়ে পৌঁছতো ?
♦·•——·•♦ ♦·•——·•♦ ♦·•——·•♦
লেখক সুপরিচিত কবি।
❤ Support Us