Advertisement
  • এই মুহূর্তে বৈষয়িক
  • ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৫

ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির মান সর্বকালের সর্বনিম্ন

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির মান সর্বকালের সর্বনিম্ন

আন্তর্জাতিক লেনদেনের মুদ্রা মার্কিন ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির ব্যাপক দরপতন হয়েছে। সোমবার সকাল নাগাদ ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির মান ৬৭ পয়সা কমেছে। অর্থাৎ এখন এক ডলার কিনতে ভারতীয় মুদ্রায় ৮৭ দশমিক ২৯ রুপি ব্যয় করতে হবে।

প্রাথমিক লেনদেনে রুপির এহেন দরপতন মূলত বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা ও আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের শক্তিশালী অবস্থানের কারণে হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মেক্সিকো, কানাডা ও চিনের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই অর্থবাজারে অস্থিরতা । আজ সোমবার ভারতীয় রুপি প্রাথমিক লেনদেনে ৬৭ পয়সা অবমূল্যায়িত হয়ে ডলারের বিপরীতে ৮৭ দশমিক ২৯ রুপিতে পৌঁছেছে। এই অবস্থান মার্কিন ডলারের বিপরীতে সর্বনিম্ন মান।

বিশ্লেষকদের মতে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া এবং বিনিয়োগকারীদের রুপির প্রতি আস্থা কমে যাওয়ায় এর মান আরও হ্রাস পাচ্ছে। আন্তঃব্যাংক লেনদেনে আজ সকালে দর ছিল ৮৭ রুপি, পরে তা কমে ৮৭ দশমিক ২৯ রুপিতে। গত শুক্রবার এই দর ছিল ৮৬ দশমিক ৬২ রুপি। অর্থাৎ মাত্র একদিনের ব্যবধানে ৬৭ পয়সা কমেছে। আগামী ৬ থেকে ১০ মাসের মধ্যে মান আরও কমতে পারে এবং প্রতি ডলার ৯০ থেকে ৯২ রুপি পর্যন্ত হতে পারে। ভারতীয় শেয়ারবাজারের সূচক নিফটি ফিফটি ও সেনসেক্সের গত এক বছরের বৃদ্ধিও তুলনামূলকভাবে কম, যা মুদ্রার মান কমার আরেকটি কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

সিআর ফরেক্স অ্যাডভাইজার্সের এমডি অমিত পাবারি বলেন, ‘সপ্তাহের শুরুতে আর্থিক বাজারগুলো চাপের মধ্যে ছিল। কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর শুল্ক হুমকি বাস্তবায়ন করেছেন, মেক্সিকো, কানাডা এবং চীনের থেকে আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করে।’

এর আগে, ভারতীয় বাণিজ্যকেন্দ্রিক সংবাদমাধ্যম মানি কন্ট্রোলের বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ভারতের শেয়ারবাজারের সূচক নিফটি এবং সেনসেক্স এক বছরে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ পয়েন্ট পর্যন্ত বেড়েছে। কিন্তু এই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এসঅ্যান্ডপি-৫০০ সূচক ২৬ শতাংশ পয়েন্ট পর্যন্ত বেড়েছে। মার্কিন সূচকের তুলনায় ভারতের সূচকের বৃদ্ধি অনেক কম। এ ছাড়াও, এক বছরে ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির ৩ শতাংশ পর্যন্ত অবমূল্যায়নের ফলে এই পার্থক্য আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় ভারতীয় সূচক দুটি যদি কাঙ্ক্ষিত গতি লাভ করতে না পারে তবে রুপির তীব্র অবমূল্যায়নের সম্ভাবনা আরও বেড়ে যাবে।

মার্কিন অর্থনীতি প্রত্যাশার চেয়েও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ২০২৫ সালে নির্দেশিত সুদহার কমানোর সংখ্যা চার থেকে কমিয়ে দুটিতে আনাতে বাধ্য হয়েছে। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের ক্ষেত্রে তার সম্প্রসারণমূলক করসংস্থান ও শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাবে উচ্চতর মুদ্রাস্ফীতির সম্ভাবনা তৈরি করেছে। যা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভকে শক্তিশালী নীতিমালা গ্রহণের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ট্রাম্পের নয়া নীতির কারণে যেমন মুদ্রাবাজারে ইউরোজোনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধির পার্থক্য হয়েছে বাড়ছে, ডলারের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির সূচকে শক্তিশালী অবস্থানে রাখছে। অন্যদিকে চিন ডলারের রিজার্ভ কমানোর পাশাপাশি মন্দা মোকাবিলায় আরো বেশি মুদ্রায় লেনদেনের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। যার ফলে ডলারের বাজারসূচকের ক্ষেত্রে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে। যুক্তরাষ্ট্র জিডিপি-ঋণ অনুপাত কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ফলত, ডলারকে স্থিতিশীল রাখার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। প্রসঙ্গত, গোটা বিশ্বে নীতিগত অনিশ্চয়তা বাড়াচ্ছে, রাজনৈতিক ঝুঁকি ডলারের সূচক বৃদ্ধির আরেকটি সহায়ক কারণ।

ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপি বিগত দুই বছরে দৃঢ় অনমনীয়তা প্রদর্শন করেছে। এটি করা সম্ভব হয়েছে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের আগ্রাসী ফরেক্স রিজার্ভ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে। মুদ্রা অনমনীয়তা পরিমাপের হার অনুসারে ভারতীয় রুপির নমনীয়তার হার ১। যেখানে ‘০-শূণ্য’ নির্দেশ করে পূর্ণ নমনীয় মুদ্রার এবং ‘১’ প্রতিনিধিত্ব করে সর্বোচ্চ অনমনীয়তার। ২০২৪ সালের অক্টোবরের পর থেকে এখন পর্যন্ত ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৭ বিলিয়ন ডলার কমে গেছে। ফলে ৪ ট্রিলিয়ন রুপির সমপরিমাণ অর্থের তারল্য সৃষ্টি হয়েছে। ডলারের দ্রুত শক্তিশালী হয়ে ওঠার বিষয়টি এই অবস্থাকে আরও স্পর্শকাতর করেছে। এদিকে, রিজার্ভের ঘাটতির কারণে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। কারণ, বাড়তি বাণিজ্যিক লেনদেন রুপি দুর্বল হওয়ার পক্ষেই কাজ করতে পারে। ২০০৮ সাল থেকে ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির অবমূল্যায়ন – ৯০ শতাংশ, অন্যান্য মুদ্রার তুলনায় অনেকখানি বেশি ।

সাম্প্রতিককালে, দেশে কোম্পানিগুলোর মুনাফা মহামারির সময়ে অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পর আবার সংকুচিত হয়েছে। চাহিদার দুর্বলতা এবং মুনাফার চাপে আগামী বছরগুলোতেও বাজারের আরো মন্দার পূর্বাভাস আছে। ২০২৫-২৭ অর্থবছরের জন্য নিফটির বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি ১১ শতাংশ ধরা হয়েছে। এটি ২০২৫ সালের জন্য মার্কিন সূচকের – ১৬ শতাংশ, তুলনায় বেশ কম। বৈশ্বিক মডেলের অনুমান, ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৬ শতাংশ হবে। এর ফলে, মার্কিন সুদহার বর্তমান ৪ দশমিক ৬ থেকে ৪ শতাংশে নামাতে পারে। এর বাইরে স্বল্প মেয়াদে মূল্যস্ফীতি কমার কারণে ডলার আরও শক্তিশালী হবে। এ ক্ষেত্রে ভারতীয় রুপির মূল্য ৭ – ১০ শতাংশ পর্যন্ত অবমূল্যায়িত হতে পারে।

প্রসঙ্গত, গত ৩১ জানুয়ারি থেকে চলছে কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেট অধিবেশন। গত ১ ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বাজেট পেশ করেছেন। আশ্চর্যজনক ভাবে তিনি ভারতীর মুদ্রার ক্রমাগত নিম্নপতনের বিষয়ে একটিবারের জন্যও মুখ খোলেননি দীর্ঘ ভাষণে। দেশের অভ্যন্তরে মুদ্রাস্ফীতি ও আন্তর্জাতিক বাজারে রুপির মান কমে যাওযার মোকাবিলা সীতারমণের কাছে সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!