- দে । শ
- মে ১৫, ২০২৩
৩৬ হাজারের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে, ডিএ আন্দোলনকারীদের হুঁশিয়ারি মমতার

“আদালতের নির্দেশে ৩৬০০০ শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি গেছে। এই চাকরি হারাদের অনেকেই তাঁকে ফোন করছেন।এদের মধ্যে অনেকে অবসাদে ভুগছিলেন। কারোর যদি কিছু হয়ে যায় দায় কে নেবে?এদের পরিবারেও অনেক মানুষ আছেন। বিয়ের দাবিতে যারা আন্দোলন করছেন, আমাদের জন্য আজও ৩৬০০০ শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি গেল। আদালতের নির্দেশ মেনে নিয়েও রাজ্য সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে যাবে।”
সোমবার নবান্ন থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করে এভাবেই ৩৬০০০ শিক্ষক-শিক্ষিকার পাশে দাঁড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী বন্দোপাধ্যায়। পাশাপাশি তিনি আন্দোলনকারীদের সতর্ক করে দিয়ে বললেন, “কাজের সময় সভা মিছিল করা হচ্ছে। সার্ভিস বুক এর মধ্যে পড়ে? কেন্দ্রীয় সরকার আজকাল অনেকের চাকরি নিয়ে নিচ্ছে সঠিকভাবে কাজ না করার জন্য। আমি অতটা অমানবিক নই। ৩ পার্সেন্ট ডিএ আরো দেওয়া হয়েছে। সরকারের হাতে যদি টাকা থাকে তখন খুশি হয়ে এই টাকা দিয়ে দিই। আপনারা এখানে বসে আন্দোলন করছেন, পাচ্ছেন না দিল্লিতে গিয়ে আমাদের বকেয়া যে টাকা সেটা নিয়ে আসতে ? তাহলে তো আরো ৩ পার্সেন্ট দিয়ে দিয়ে দিতাম। সরকারি কর্মচারীরা কেউ আমার পর নয়। সবাইকে আমার পরিবারের মতই ভাবি। কিন্তু আজ ৩৬০০০ ছেলেমেয়েদের চাকরি গেল এই দিয়ে আন্দোলনকারীদের জন্য। কেন্দ্রের হারে দিয়ে পেতে গেলে রাজ্যের চাকরি করছেন কেন? সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টের চাকরি করুন।”
অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী তার এবার তার মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন ৩৬০০০ চাকরি চলে যাওয়ার ছেলে মেয়ের পাশে থাকার বার্তা দিলেন পাশাপাশি ডিএ আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যেও সতর্কবার্তা দিয়ে রাখলেন। ”
এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য শোনার পর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যা বলছেন তা পাগলের প্রলাপ। কেন্দ্রের থেকে টাকা আনতে পড়া যাবে কেন? আপনি আছেন কি করতে? আপনি ছেড়ে দিন, তারপর কি করে টাকা আনতে হয় আমরা নিয়ে আসছি। আপনি রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বলছেন ডিএ তাদের অধিকার নয়? ওরা যখন চাকরি পেয়েছেন সেই চাকরির শর্ত বিয়ের কথা উল্লেখ ছিল। ওরা পড়াশোনা করে চাকরি পেয়েছে, দিয়ে চাকরি পেয়েছে। দাঁড়াবার মত মানুষের কাছে ভোট ভিক্ষা করে কোথায় বসেনি।এসব বলে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের অপমান করছেন। আপনার কথা শুনে একে পাগলের প্রলাপ ছাড়া অন্য কিছু বলতে পারছিনা।”
আদালতের রায় যা বলা হয়েছে তাতে এই সমস্ত চাকরিপ্রার্থীর পরীক্ষা হল তাদের কোনও অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট হয়নি। যারা পরীক্ষা নিয়েছেন তারাই এসব বলেছেন। যে কয়েকজন চাকরিপ্রার্থীকে এই মামলায় ডেকেছিল, তাঁরাও জানিয়েছেন কোন অ্যাপটিটিউড পরীক্ষা তাদের হয়নি। আদালত এই তথ্যের ভিত্তিতে প্রাথমিক শিক্ষক পদ থেকে ৩৬০০০ ছেলে মেয়ে চাকরি খারিজ করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি তাহলে আদালতের নির্দেশ মানছেন না? তিনি কি বলতে চান এই নিয়োগে কোন দুর্নীতি হয়নি? এমন প্রশ্ন করছে বিরোধীরা।
তবে মুখ্যমন্ত্রী সোমবার নবান্ন থেকে স্পষ্ট বলেছেন, “দিল্লি থেকে নির্দেশ ছিল যারা চাকরি পেয়েছেন তাঁরা এক বছরের মধ্যে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিলেই হবে। আমার জানা, তারা প্রশিক্ষণ নিয়েছে। তবে আদালতের নির্দেশকে আমি মান্যতা দিয়েই বলছি এই বিষয়ে আমি আর কিছু বলবো না, সরকার পক্ষের আইনজীবীরা বলবেন। তবে এই রায়ের বিরুদ্ধে সরকার ডিভিশন বেঞ্চে যাচ্ছে। ”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নবান্ন থেকে বলেন, “সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি এরা নিজেদের ব্যাঙের মা ভাবছে।এরা লোকের চাকরি কেড়ে নিচ্ছে। এসব হওয়ার ফলে স্থগিতাদেশ হয়ে যদি চাকরির প্রক্রিয়া আটকে যায় আমার কিছু করার থাকবে না। এই মুহূর্তে বিভিন্ন দপ্তর মিলিয়ে সাড়ে ৪ থেকে ৫ লক্ষ শূন্য পদ আছে।তাতে নিয়োগ হতে পারে। বিরোধীরা কি ভাবছে এভাবে চাকরি খেলে, মানুষের ক্ষতি করলে তাঁদের লাভ হবে? বাম আমলে কি হত? মাইনে দিতে তোমার শেষ হয়ে যেত। ৩৫% ডিএ বাকি ছিল। আমি নিজে দেখেছি মানুষ পিঁপড়ের ডিম খেয়ে রয়েছে। এখন ১০০ দিনের কাজে আমরা চারবার দেশের মধ্যে প্রথম হয়েছি। আবাস যোজনা, সড়ক যোজনা ইত্যাদিতেও আমরা কেন্দ্রের থেকে পুরস্কার পাচ্ছি। রাজ্য থেকে আমাদের প্রকল্প গুলো দেখতে আসছে।তা সত্বেও রাজ্যে থেকে রাজ্যের মানুষ হয়ে, বিরোধীরা দিল্লী গিয়ে বলে আসছে যাতে রাজ্যকে টাকা না দেওয়া হয়।”
কোন যেদিন তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে একটা বিষয় স্পষ্ট করে দেন, এবার থেকে করলে, রাস্তায় বসে আন্দোলন করলে রাজ্য সরকার করা সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে। মানবিক সরকার দেখে এখনো তেমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। সেদিনই বুঝিয়ে দেন জে ৩৬ হাজার ছেলেমেয়ে চাকরি চলে গেছে তাদের পাশে তাদের পরিবারের পাশে তিনি এবং তাঁর সরকার আছে।
মুখ্যমন্ত্রীর এই বার্তাকে বিরোধীরা ভোটের রাজনীতি বলেই করেছেন। বিরোধীদের বক্তব্য, তার সরকার নিয়োগ দুর্নীতির কাজ করলো তিনিই আবার সাফাই গাইছেন? অন্যের সমালোচনা করছেন?
❤ Support Us