Advertisement
  • এই মুহূর্তে দে । শ
  • অক্টোবর ৭, ২০২৫

সাংসদ-বিধায়ককে আক্রমণ: এনআইএ তদন্তের দাবি রাজ্য বিজেপির, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ভূমিকায় নিচুতলায় ক্ষোভ

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
সাংসদ-বিধায়ককে আক্রমণ: এনআইএ তদন্তের দাবি রাজ্য বিজেপির, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ভূমিকায় নিচুতলায় ক্ষোভ

বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য রাজ্যের দুই নেতা—বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু এবং বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের উপর হামলার ঘটনায় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-কে দিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন যে, ঘটনায় ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও অভিযুক্তদের এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। শমীক ভট্টাচার্য এই পরিস্থিতির জন্য রাজ্য প্রশাসনকে একহাত নিয়েছেন এবং তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “এখনও কেন এক জনও গ্রেফতার হয়নি? এটা প্রশ্নযোগ্য।”

এদিকে, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও এই হামলার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে মিরিকের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন কেন্দ্রীয় সংসদ বিষয়কমন্ত্রী কিরেন রিজিজু এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁরা ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের সঙ্গী হন দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তাও।

মোদি-শাহ জুটির প্রশাসনিক দক্ষতায় বিজেপি কর্মীরা গর্বিত হলেও, খগেন মুর্মুর রক্তাক্ত ছবি এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীকে অসহায় দেখার পর সেই আস্থায় কিছুটা টালমাটাল এসেছে। এটাই প্রথমবার নয়, এর আগেও বিজেপি নেতাদের ওপর হামলা হয়েছে এবং দলীয় কর্মীদের ক্ষোভ প্রকাশ পায়। তবে, সোমবার নাগরাকাটায় সাংসদ খগেন মুর্মু এবং বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের ওপর হামলার পর, বিজেপির নিচুতলার ক্ষোভের অভিমুখ এখন নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহের দিকে ঘুরে গিয়েছে।

কেন্দ্রীয় নিরাপত্তার মধ্যে দলের সাংসদ মার খেয়ে রক্তাক্ত হলে সাধারণ কর্মীদের কী অবস্থা হবে, এই প্রশ্ন বিজেপির অন্দরমহলে জোরালো হয়ে উঠেছে। অনেকেই সমাজমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পোস্ট কিছুটা স্বস্তি দিলেও, নিচুতলার কর্মীরা এখন কেন্দ্রীয় পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন।

শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, “এই ধরনের ঘটনা আর হতে দেওয়া যাবে না। কেউ যদি মনে করে কোনও সাংসদকে আক্রমণ করে, রক্তাক্ত করে বিজেপিকে ভয় দেখানো যাবে, তা হলে তা ভুল ধারণা।” বিজেপি রাজ্য সভাপতি আরও বলেন, “যারা এই হামলা চালিয়েছে, তারা যদি পাতালেও লুকিয়ে থাকে, আমরা তাদের আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে বের করে আনব।”

সোমবার, জলপাইগুড়ির নাগরাকাটায় দুর্যোগের পরবর্তী পরিস্থিতি পরিদর্শন করতে যান বিজেপির সাংসদ খগেন মুর্মু এবং বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। সেখানে তাঁদের উপর একটি হামলা চালানো হয়। খগেন মুর্মু ইটের আঘাতে রক্তাক্ত হন এবং শঙ্কর ঘোষকেও ধাক্কা দিয়ে চড়-ঘুষি মারা হয়। এই ঘটনার পর খগেন মুর্মু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

বুধবার, কিরেন রিজিজু হাসপাতাল পরিদর্শন করে হামলার ঘটনার সম্পর্কে মন্তব্য করেন। তিনি জানান, “লোকসভার স্পিকার রাজ্য সরকারের কাছে একটি রিপোর্ট তলব করেছেন। যদি রিপোর্ট সময়মতো না দেওয়া হয়, তবে আমরা স্বাধিকারভঙ্গের প্রস্তাব অনুসারে পদক্ষেপ করব।”

বিজেপির অভিযোগ, হামলা একটি পূর্বপরিকল্পিত ঘটনা। শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “যে এলাকায় হামলা হয়েছে, সেখানে তৃণমূল রাজনৈতিক সুবিধা করতে না পেরে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।” বিজেপি এই হামলার জন্য তৃণমূলকেই দায়ী করেছে এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ করার অভিযোগ তুলেছে।

এই হামলার ঘটনা নিয়ে বিজেপির অভিযোগকে তৃণমূল খণ্ডন করেছে। তারা বলেন, বিজেপির অভিযোগ ভিত্তিহীন। তবে, এই ঘটনার নিন্দা করেছে তৃণমূল, এবং দাবি করেছে যে বিজেপি রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য ঘটনাটিকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।

এই ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এক্স হ্যান্ডলে করা পোস্টের পরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, “প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যে উত্তরবঙ্গে রাজনীতি করতে নেমেছেন প্রধানমন্ত্রী।” প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে এই পাল্টা পাল্টি আক্রমণ-বিক্ষোভ আরও উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে রাজ্য রাজনীতিতে।

এভাবে, নাগরাকাটার হামলার ঘটনা রাজ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনার নতুন মাত্রা নিয়ে এসেছে, এবং এই ঘটনার তদন্তে এনআইএ তদন্তের দাবি জোরদার হয়েছে।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!