- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- জুন ১৭, ২০২৫
ওবিসি মামলার আবার ধাক্কা, রাজ্যের নতুন বিজ্ঞপ্তির উপর কলকাতা হাইকোর্টের অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ

নতুন ওবিসি তালিকা নিয়ে বড়ো ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার। রাজ্যের নতুন ওবিসি তালিকা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি ও তা ঘিরে জারি হওয়া নির্দেশিকাগুলির উপরে ৩১ জুলাই পর্যন্ত অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করল কলকাতা হাই কোর্ট। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার এই রায় দিয়েছেন। রাজ্য সরকার যে নতুন তালিকা প্রকাশ করেছিল, তাতে অন্তর্ভুক্ত ছিল মোট ১৪০টি সম্প্রদায়। সে তালিকা ও তা ঘিরে রাজ্যের বিভিন্ন বিজ্ঞপ্তির উপরে প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলাকারীরা অভিযোগ করেন, উচ্চ আদালতের পূর্ব নির্দেশ লঙ্ঘন করে ‘অসম্পূর্ণ সমীক্ষা’-র ভিত্তিতে ওই তালিকা তৈরি হয়েছে।
আজ শুনানিতে, বিচারপতি মান্থা কটাক্ষ করে বলেন, ‘আপনারা ২০১২ সালের ওবিসি আইনের অর্ধেকটা মানলেন, আবার ১৯৯৩ সালের আইনে ফিরে গেলেন ! কেন ?’ আদালতের মতে, রাজ্য সরকারের একের পর এক পদক্ষেপ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে হয়েছে। রাজ্যের উদ্দেশে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ‘আমরা তো আগেই বলেছিলাম, ৬৬টি বৈধ ওবিসি সম্প্রদায়কে নিয়ে কাজ করুন। তখন বলেছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করছেন। তাহলে নতুন বিজ্ঞপ্তি কেন? আমরা যদি না চাইতাম, তাহলে কি আপনারা থেমে থাকতেন ?’ যদিও মামলাকারীর আইনজীবীদের দাবি ছিল, সমীক্ষা নিয়ে কোনও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি। কমিশনের আইনজীবী অবশ্য জানিয়েছিলেন, আদালতের সমস্ত নির্দেশ মেনেই সমীক্ষা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার বিধানসভা অধিবেশনে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, আদালতের নির্দেশে নতুন অনগ্রসর সম্প্রদায়ের তালিকা তৈরি হয়েছিল। কোন কোন জনজাতিকে ওবিসি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে, তার একটি নির্দিষ্ট তালিকা কিছুদিন আগে প্রকাশ করেছিল অনগ্রসর সম্প্রদায় উন্নয়ন কমিশন। সেখানে ১৪০টি জনগোষ্ঠীকে ওবিসি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
২০২৩ সালের মে মাসে হাই কোর্টের একক বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, ২০১০ সালের পরে রাজ্য যেসব সম্প্রদায়কে ওবিসি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, সেই সব শংসাপত্র অবৈধ। অর্থাৎ, প্রায় ১২ লক্ষ শংসাপত্র বাতিল হয়। আদালতের যুক্তি ছিল, এই অন্তর্ভুক্তির পিছনে সমাজতাত্ত্বিক, আর্থিক ও পেশাগত নিরীক্ষা ছিল না। শীর্ষ আদালতে সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে যায় রাজ্য। সওয়াল করেন কপিল সিব্বল। তিনি জানান, নতুন করে রাজ্যজুড়ে সমীক্ষা শুরু হয়েছে, সময় লাগবে আরো তিন মাস। সুপ্রিম কোর্টও মামলার পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারণ করে জুলাই মাসে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের অপেক্ষায় থাকার কথা বললেও, হঠাৎই রাজ্য নতুন ওবিসি তালিকার খসড়া প্রকাশ করে। এমনকি, ডিজিটাল পোর্টালের মাধ্যমে সমস্ত সরকারি দপ্তরে কাস্ট সার্টিফিকেট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় রাজ্য। এই নির্দেশই চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে ফের মামলা দায়ের করেন অমলচন্দ্র দাস নামে এক ব্যক্তি। তাঁর দাবি, আদালতের পূর্ব নির্দেশে সমীক্ষা প্রসঙ্গে যা বলা হয়েছিল, তার কোনোটাই মানেনি রাজ্য। জেলা ভিত্তিক অল্প কয়েকটি পরিবারের উপর সমীক্ষা চালিয়ে তালিকা তৈরি হয়েছে। আদালতে কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল অশোককুমার চক্রবর্তী জানান, জাতীয় অনগ্রসর শ্রেণি কমিশন ইতিমধ্যেই রাজ্যের তালিকা থেকে ৩৫টি সম্প্রদায় বাদ দিয়েছে। তাঁর মতে, এমন সিদ্ধান্তে ‘ডেঞ্জারাস ডেমোগ্রাফিক এফেক্ট’ পড়তে পারে। অর্থাৎ, সামাজিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কেন্দ্র আরও জানায়, জনগণনার ভিত্তি ছাড়া কারা ওবিসি হবেন, তা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। ২০২৬ সালে পরবর্তী জনগণনার পরিকল্পনা রয়েছে। দুই বিচারপতির স্পষ্ট বার্তা, আদালতের রায় মানা হয়নি। তাঁরা বলেন, ‘আপনারা কি আমাদের রায়ের বিশ্লেষণ করতে এসেছেন? সেটা সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে করুন। এখানে তো রায় দিয়েছে এই বেঞ্চই। আপনারা যদি পদক্ষেপ না নেন, আমরা বাধ্য হচ্ছি হস্তক্ষেপ করতে।’ প্রসঙ্গত সরকারি চাকরিতে এর আগে ওবিসিদের জন্য ১৭ শতাংশ সংরক্ষণ চালু করেছিল রাজ্য। যা নিয়ে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। ওই মামলায় রাজ্যের সংরক্ষণ নির্দেশ বাতিল করে হাইকোর্ট জানিয়েছিল, ‘ধর্মের ভিত্তিতে কোনো সংরক্ষণ করা যায় না’।
রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত আদালতে জানান, বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। সেই কারণেই রাজ্য চায়, ‘সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে। তিনি আরো বলেন, মুখ্যমন্ত্রী এবং বিরোধী দলনেতার উপস্থিতিতে এই নিয়ে বিধানসভায় আলোচনা হয়েছে। তখন বিচারপতি পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘বিধানসভায় আলোচনার আগেই কি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা যায়? গেজেট প্রকাশ হয়নি বললে কি বিজ্ঞপ্তির দায় এড়ানো যায়?’ এরপরই মামলার রায় ঘোষণা করেন বিচারপতিরা। রায়ে বলা হয়েছে, আপাতত রাজ্যের যাবতীয় বিজ্ঞপ্তি ও নির্দেশিকার উপরে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে ৩১ জুলাই পর্যন্ত। শীর্ষ আদালতে পরবর্তী শুনানি ২৪ জুলাই। এই সময়কালে ওবিসি শংসাপত্র গ্রহণের যাবতীয় অনলাইন প্রক্রিয়াও বন্ধ থাকবে।
❤ Support Us