- দে । শ
- মে ২৪, ২০২২
তৌসিফ-এর সামর্থ্যে ফুটপাথে ফ্রিজ, বাসস্টপে বুক শেলফ

তৌসিফ রহমান । শৌখিন। পরিশ্রমী আর জনদরদী যুবক। গ্রীষ্মে পথিকের তৃষ্ণা মেটাতে, ফুটপাথে একের পর এক ফ্রিজ বসিয়েছেন। এবার তাঁর নতুন উদ্যোগ, বুক শেলফ নির্মাণ করে ক্লান্ত, অপেক্ষামান যাত্রীদের মানসিক খোরাক যোগানো আর বই পড়ার অভ্যেস বাড়িয়ে তোলা। শেলফ জুড়ে থাকবে হিন্দি, বাংলা, ইংরেজি বইপত্র। পাশাপাশি নানা ধরনের ম্যাগাজিন। বাড়ি, মধ্য কলকাতার আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে। সম্পন্ন পরিবারের সন্তান । পরোপকারি বললে কম বলা হয় তাঁকে ।
সাধনা সমাজসেবা । লক্ষ্য প্রধানত দুস্থজন ।ইতিমধ্যে বহু মহৎ কাজ সেরেছেন । দরিদ্র মানুষকে টানা একবছর অন্নদান, অন্তত ৪৯ হাজার কেজি চালবন্টন এবং রোগী সেবা ইত্যাদি । তাঁর সেবা ধর্ম একটি বেনজির দৃষ্টান্ত বলে লিমকা বুক অফ রেকর্ডস তাঁদের তালিকায় তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে ।এই সম্মান পেয়েও তাঁর হইচই নেই। নিঃশব্দ কাজ, ব্যবসা আর সেবাই তাঁকে সামনে এগিয়ে দিচ্ছে। নিজের সম্পর্কে বলতে অভ্যস্ত নন। শুধু এইটুকু জানিয়েছেন, আমি একজন স্ট্রাটেজিস্ট। জীবসেবা আমার স্ট্র্যাটেজি। এটাকে রাজনীতি বলতে পারেন, সমাজকর্মও বলতে পারেন। যে নামেই ডাকুন, প্রথমত আমি মানুষ। দ্বিতীয়ত, মানুষ। তৃতীয়ত, মানুষ এবং বহুমুখী কলকাতার বাসিন্দা। সারাদিন ব্যবসার কাজে দিন কাটে। প্রতিবেশী, চেন-অচেনা মুখের কষ্ট নিবারণে সকাল থেকেই দৌঁড়ঝাপ শুরু হয় তাঁর।
আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে নিজের খরচে ফুটপাথের উপর ফ্রিজ বসিয়েছেন। প্রবল গরমে এ ফ্রিজের জল গলায় ঢেলে তেষ্টা মেটায় পথিকজন । তাঁর কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে যাচ্ছেন। দুস্থজনের অসুখের খবর পেলেই রোগী নিয়ে হাসপাতালে হাজির।
তৌসিকের এসব কর্মকাণ্ডে অবাক তাঁর পারিপার্শ্বিক । ব্যস্ততা বাড়ছে। এইধরনের কাজ বাড়িয়ে তুলতে প্রবল আগ্রহী। সংবাদপত্রকে জানিয়েছেন— পিজি, চিত্তরঞ্জন হাসপাতাল, ইসলামিয়া হাসপাতালের সামনে ভাবছি ফ্রিজ রাখব। গত একবছর জুড়ে, জোড়া গির্জার আশেপাশের দুঃস্থজনকে খাবার জুগিয়েছি। প্রচারের ঢাকঢোলকে প্রশ্রয় দিইনি। যথাসম্ভব নিভৃতে আমার সংগঠিত টিম এসব সাধনকর্মে লিপ্ত। সরাসরি রাজনীতি করি না। অবশ্যই আমার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক মতাদর্শ আছে । সেবার সঙ্গে এর যোগ নেই ।
রিপন স্ট্রিটের সেন্ট মেরিজ স্কুল আর ভবানীপুর কলেজের প্রাক্তনী। বাণিজ্যে স্নাতক। পারিবারিক ব্যবসা রেঁস্তোরা। নাম রহমান গ্রুপ। কলকাতা, ঢাকা, দুবাইয়ে ছড়িয়ে আছে তাদের ব্যবসা। দুবাইয়ে ব্যবসা চালান তাঁর দাদা । হাসিমুখে তৌসিফ বলেছেন, সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে চাই। নেবার চেয়ে দেওয়ার আনন্দটাই বেশি। আমি তৃপ্ত ।নিজেকে রইস ভাবি না, দৈনন্দিনের রেসকার ড্রাইভার ভাবতে ভালো লাগে। হ্যাঁ, আলাদা একটা শখ আছে, নানা ধরনের জুতোর নমুনা সংগ্রহ । ধরা যাক প্রায় ৪০০ জোড়া। অক্সফোর্ড, ডার্বি, গুচি এরকম অসংখ্য ।একই ধরনের পাদুকা পরতে ভালো লাগেনা। একই পথে হাঁটতে ভালো লাগে না । দুস্থজনকে একই দুস্থ অবস্থায় দেখতে ভালো লাগে না। একই ধরনের জনসেবা নিয়ে মেতে থাকতে পারি না। আমার চাই বৈচিত্র আর নির্মোহপ্রেমে একাগ্রতা । যা, ব্যক্তি ও সমাজের, সুবিচার আর সাম্যের সহযাত্রী হয়ে থাকবে। মানুষ আমার পাশে, আমি মানুষের পাশে। আমরা সবাই একে অন্যকে আলিঙ্গন করে বাঁচতে চাই, যেমন বৃক্ষ বাঁচে—অরণ্য বাঁচে—বাঁচে নদ-নদী এবং পরিবেশের দূষিত-অদূষিত ভার বুকে নিয়ে বেঁচে থাকে শহরের অনাথ জলাশয়।
সৌজন্য: সব্যসাচী সরকার ।
❤ Support Us