Advertisement
  • দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
  • নভেম্বর ৫, ২০২৫

শিক্ষক নেই ! এসআইআর-এ বিএলও জোগাতে গিয়ে বাংলার কয়েক হাজার স্কুলে পড়াশোনা স্তব্ধ

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
শিক্ষক নেই ! এসআইআর-এ বিএলও জোগাতে গিয়ে বাংলার কয়েক হাজার স্কুলে পড়াশোনা স্তব্ধ

বাংলার প্রাথমিক স্কুলগুলোর পড়াশোনা গভীর সংকটে। প্রায় ৪ হাজার শিক্ষক শূন্য থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সমস্যা শুধু সংখ্যার নয়, পড়াশোনার স্বাভাবিক চলাচলেও প্রভাব ফেলছে। বিগিত দিনে অনেক স্কুলে দেখা গেছিল, একজন শিক্ষকই স্কুলের সব দায়িত্ব সামলাচ্ছেন; শিক্ষাদান, মিড-ডে মিল, স্কুল প্রশাসন সবকিছুই। এসআইআর-এর দৌলতে এবার বিএলও অফিসের কাজও যুক্ত হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট করে দিয়েছে, ‘এসআইআর ফুলটাইম জব।’ অর্থাৎ বিএলও হিসেবে যেসব শিক্ষক নিয়োজিত, তারা স্কুলে নিয়মিত উপস্থিত থাকতে পারছেন না। ফলে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। জেলাগুলোর শিক্ষা প্রশাসন আপাতত এক সাময়িক সমাধান নিয়েছে। পাশের স্কুল থেকে শিক্ষক নিয়ে শূন্য থাকা স্কুলগুলোর পাঠদান চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। যেখানে একাধিক শিক্ষক আছে, তাদেরকে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, এটি এক অস্থায়ী ও অপরিকল্পিত ব্যবস্থা। দীর্ঘমেয়াদে এর ফল ভুগতে হবে কচিকাঁচাদের।

বহু একক শিক্ষকের স্কুল চালানোর অভিজ্ঞতা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। একজন শিক্ষককে পড়ানো ছাড়াও মিড-ডে মিলের দায়িত্ব, প্রশাসনিক কাজ সামলাতে হচ্ছে। এবার এসআইআর-এ বিএলওর কাজে সম্পূর্ণ নিয়োজিত হলে স্কুলের নিয়মিত পঠনপাঠন থমকে যাবে অচিরেই। রাজ্য শিক্ষা দফতরের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘রাজ্যের অনেক প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক সংখ্যা আগে থেকেই কম। এবার প্রায় চার হাজার শিক্ষক বিএলও হিসেবে যুক্ত হলে সরকারি স্কুলগুলিতে পঠনপাঠনের অবস্থা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হতে পারে।’ অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ প্রবল। অনেকেই বলছেন, ‘শিক্ষক না থাকলে শিশুরা কীভাবে শিখবে? এমন অবস্থা চলতে থাকলে শিক্ষার মান একেবারেই নেমে যাবে।’ এখন দেখার বিষয়, শিক্ষা দফতর বা প্রশাসন কি করে এই সংকটের স্থায়ী সমাধান করে।

প্রসঙ্গত, রাজ্যের স্কুলগুলোতে মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা শুরু হয়েছে ৩ নভেম্বর থেকে। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নির্দেশ, ১৩ নভেম্বরের মধ্যে সব স্কুলে এই পরীক্ষা শেষ করতে হবে। কিন্তু একই সময়ে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের কাজও শুরু হয়েছে। ফলে সে কাজে বহু শিক্ষক-শিক্ষিকাকে বুথ লেভেল অফিসার হিসেবে নিযুক্ত করায় স্কুলে পঠনপাঠনের ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।রাজ্যে প্রাথমিক থেকে উচ্চ প্রাথমিক পর্যন্ত প্রায় ৬৬,০০০ স্কুল রয়েছে। মোট শিক্ষক সংখ্যা প্রায় ৩,৪০,০০০। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ৮০,৬৮১ জনকে বিএলও করা হয়েছে। শহর ও শহরতলির স্কুলের শিক্ষক সংগঠনগুলো বলছে, ‘একসাথে দুটি দায়িত্ব সামলানো সম্ভব নয়। পরীক্ষা নেওয়া, খাতা দেখানো আর নিয়মিত ক্লাস করানো, সবকিছুই ব্যাহত হচ্ছে।’ দক্ষিণ ২৪ পরগনার কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক চন্দন মাইতি জানিয়েছেন, ‘আমাদের স্কুলে ৫ হাজারের বেশি পড়ুয়া। শিক্ষক সংখ্যা ৫৪। কিন্তু ১০ জন শিক্ষককে বিএলও হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে ক্লাস করানো আর খাতা দেখা—সবকিছুতেই সমস্যা হচ্ছে।’

কলকাতার প্রাথমিক স্কুলগুলোর অবস্থা আরও চিন্তার বিষয়। প্রায় ১২০০ প্রাথমিক স্কুলের ৭,০০০ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে সাড়ে ৩ হাজারকে এসআইআর কাজে যুক্ত করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান কার্তিক মান্না বলেছেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন শিক্ষকদের দায়িত্ব নিয়েছে। সাংবিধানিক কারণে আপত্তি আনা সম্ভব নয়। তবে পরীক্ষা ও অন্যান্য স্কুল কার্যক্রমের সময় অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়ায় শিক্ষাদান ব্যাহত হচ্ছে।’ শুধু শিক্ষক নয়, শিক্ষাকর্মীদেরও বিএলও হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। ফলে বহু স্কুলে নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশনসহ অন্যান্য কাজ ঠিকমত হচ্ছে না। শিক্ষক ও স্কুল প্রশাসকরা বলছেন, নির্বাচন কমিশনের কাজ অবশ্য গুরুত্বপূর্ণ, তবে পরীক্ষার সময় এত বড়ো সংখ্যায় শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়ায় প্রবল সমস্যার সম্মুখীন রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!