- এই মুহূর্তে দে । শ
- অক্টোবর ২৮, ২০২৩
দর্শনকে লগইন আইডি তিনিই দিয়েছেন স্বীকার তৃণমূল সাংসদের।২ কোটি টাকা নেওয়ার অভিযোগ হাস্যকর বললেন মহুয়া
শুক্রবার তৃণমূলের কৃষ্ণনগরের সাংসদ একটি সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানির কাছ থেকে কয়েক বছর আগে তিনি তাঁর জন্মদিনে স্কার্ফ, আইশ্যাডো আর লিপস্টিক উপহার পেয়েছিলেন। ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দু’কোটি টাকা নগদ নেওয়ার যে অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে তোলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও হাস্যকর। মহুয়া মৈত্র দাবি করেছেন, একটি বিদেশি প্রসাধনী প্রস্তুতকারক সংস্থার তৈরী ওই সামগ্রী তাঁকে দর্শন জন্মদিনের উপহার হিসাবে। দুবাই বিমানবন্দর থেকে কেনা ওই সামগ্রী ছিল শুল্কহীন। মহুয়া ওই সাক্ষাৎকারে বলেন, মুম্বই গেলে দর্শন বন্ধু হিসাবে বিমানবন্দরে তাঁর জন্য গাড়ি পাঠাতেন। ভবিষ্যতেও তিনি মুম্বই গেলে বন্ধু দর্শনকে গাড়ি পাঠাতে বলবেন।
বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে “টাকার বিনিময়ে সংসদে প্রশ্ন” উত্থাপন করার অভিযোগ জানিয়ে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি দিয়েছিলেন। মহুয়া মৈত্রর প্রাক্তন বন্ধু জয় অনন্ত দেহাদ্রাইও মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে চিঠি দেন সিবিআই প্রধানকে। নিশিকান্তের ওই চিঠি লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা এথিক্স কমিটিতে পাঠিয়ে দেন। বৃহস্পতিবার এথিক্স কমিটির বৈঠক বসে এবং সেখানে বক্তব্য শোনা হয় নিশিকান্ত এবং আইনজীবী জয় অনন্তর। এথিক্স কমিটির কাছে দু’জনেই অভিযোগ করেছেন, দুবাইয়ের ব্যবসায়ী হীরানন্দানির কাছ থেকে অর্থ ও উপহার নিয়ে মহুয়া মৈত্র সংসদে শিল্পপতি গৌতম আদানি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিশানা করে প্রশ্ন তুলেছেন।
শুক্রবার সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে মহুয়া বলেন, “দর্শনের যে তথাকথিত হলফনামা এথিক্স কমিটিতে পেশ হয়েছে বা প্রকাশ্যে রয়েছে, তাতে দু’কোটি টাকা নগদের কথা উল্লেখ করা নেই। এথিক্স কমিটি দর্শনকে ডাকুক, আমার মুখোমুখি বসাক।’’ মহুয়া প্রশ্ন তোলেন, কবে, কোথায় তাঁকে নগদ টাকা দেওয়া হয়েছে তার প্রমাণ দিতে পারবেন অভিযোগকারীরা? অভিযোগ যাঁরা করেছেন অভিযোগ প্রমাণের দায়িত্ব তাঁদের। মহুয়ার সাফ কথা, তিনি টাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি। বরং আদানির বিরুদ্ধে তিনি যাতে প্রশ্ন না তোলেন তার জন্য তাঁর মুখ বন্ধ করার চেষ্টা হয়েছিল।
মহুয়ার প্রাক্তন বন্ধু ও আইনজীবী জয় অনন্ত মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেছিলেন, দর্শনের কাছ থেকে মহুয়া দামি ব্র্যান্ডের জুতো, ব্যাগ-সহ অন্যান্য জিনিস উপহার নিয়েছিলেন। মহুয়া পাল্টা দাবি করেছেন, যে যে তালিকা দেওয়া হয়েছে, তার সপক্ষে কোনও নথি দিতে পারবেন না অভিযোগকারীরা। তৃণমূল সাংসদ আরও বলেন, ‘‘অভিযোগ কারা করেছেন? এক জনের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা ছিল। তাঁর সঙ্গে পোষ্যের মালিকানা নিয়ে আমাদের বিবাদ হয়। আর দ্বিতীয় জন বিজেপির সাংসদ। যাঁর সঙ্গে গত তিন-চার বছর ধরেই আমার রাজনৈতিক সংঘাত লেগেই রয়েছে।’’
মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তাঁর দিল্লির টেলিগ্রাফ লেনের বাংলো নতুন করে সাজিয়েছেন ব্যবসায়ী দর্শনের টাকায়। সাক্ষাৎকারে মহুয়া একটি বাংলোর নকশা দেখিয়ে দাবি করেন, দর্শনের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সখ্য রয়েছে। সেই সূত্রে তিনি ব্যবসায়ী বন্ধুকে বলেছিলেন, তাঁর সংস্থার আর্কিটেক্টরদের দিয়ে নকশা করিয়ে দিতে। সেই নকশা তাঁকে দর্শনের আর্কিটেক্ট পাঠান এবং সেই নকশা অনুযায়ী বাংলো সংস্কারের কাজ করেছে সরকারি সংস্থা সিপিডব্লিউডি। এই খরচগুলো সরকারই বহন করে থাকে।
এদিকে বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে অভিযোগ করেছেন, সংসদের ওয়েবসাইটে লগ ইন করার জন্য নিজের লগ-ইন-কোড এবং পাসওয়ার্ড হীরানন্দানিকে মহুয়া মৈত্র দিয়েছিলেন। ওই ব্যবসায়ী দুবাইয়ে বসে তার ‘সুযোগ’ নিয়েছেন। এটি একটি জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন। এই অভিযোগের বিষয়ে মহুয়া মৈত্র পাল্টা দাবি করেন বলেছেন, সমস্ত সাংসদের লগ ইন কোড এবং পাসওয়ার্ড প্রকাশ করা হোক। তা হলেই বোঝা যাবে, আরও কেউ ওই একই কাজ করেন কি না। কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদের দাবি, তিনি বেশির ভাগ প্রশ্ন হাতে লিখে সই করে দেন। কোনও কোনও সময়ে তা সাংসদের লগ ইন আইডি ব্যবহার করে লেখেন। কখনও তিনি দর্শনকে বলেছেন, তাঁর সংস্থার কর্মচারীদের দিয়ে টাইপ করিয়ে দেওয়ার জন্য। তাছাড়া সাংসদই তাঁদের লগ ইন আইডি অন্যদের দিয়ে রাখেন। মহুয়ার বক্তব্য, প্রশ্ন লিখলেও ফোনে ওটিপি আসে। সেটা অন্য কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। ওটিপি দিয়েই সাইট খুলতে হয়।
মহুয়াকে নিয়ে বিতর্কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন নীরব? এই প্রশ্নের জবাবে মহুয়া বলেন, ‘‘আমি তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী। মমতা বন্দ্যাপাধ্যায় আমার রাজনৈতিক মা। তাঁর অনেক বড় লড়াই রয়েছে। এই লড়াইটা আমি একই লড়তে পারব।’’
আগামী ৩১ অক্টোবর তৃণমূল সাংসদ মহুয়াকে ডেকে পাঠিয়েছে লোকসভার এথিক্স কমিটি। বৃহস্পতিবার সেই চিঠি পাওয়ার পর শুক্রবার মহুয়া কমিটির চেয়ারম্যান বিনোদ সোনকরকে লিখিত ভাবে জানান, ওই দিন তাঁর পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ তাঁর লোকসভা কেন্দ্রে বিজয় সম্মেলন রয়েছে। ৪ নভেম্বর পর্যন্ত পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি রয়েছে। ৫ নভেম্বরের পর যে কোনও দিন, যে কোনও সময়ে ডাকলে তিনি যেতে পারেন।
এবার দেখার মহুয়ার দাবি মতো দর্শনকে লোকসভার এথিক্স কমিটি ডাকে কি না। তবে মহুয়ার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ যে ভিত্তিহীন সেটা মহুয়া এই সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তবে এবার নিশিকান্ত ও জয়কে তাদের অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে পাশাপাশি মহুয়াকেও প্রমাণ করতে হবে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই।
❤ Support Us