মমতার নেতৃত্বে ঘাসফুল শিবিরে শক্তি বাড়ালো নারীশক্তি, পদ্মশিবিরে বুমেরাং

নারী শক্তির হাতেই কি পর্যুদস্ত হল পদ্ম শিবির ! ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের ফল অন্তত তাই বলছে। সারা বঙ্গে সাড়া ফেলেও পদ্ম শিবিরের একজনও মহিলা প্রার্থী জিততে পারলেন না । যদিও মহিলাপ্রার্থীর সংখ্যা ছিল মাত্র সাত। মালদা দক্ষিনে শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী, কৃষ্ণনগরে রাজমাতা অমৃতা রায়, বোলপুরে প্রিয়া সাহা ,দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রে দেবশ্রী চৌধুরী, পশ্চিম মেদিনীপুর কেন্দ্রে অগ্নিমিত্রা পাল, হুগলীতে লকেট চট্টোপাধ্যায় ও বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে রেখা পাত্র । তবে কেউই দাগ কাটতে পারলেন না।

রাজনৈতিক মহলের মত , ভোটের ফলের অনেকখানি নির্ভর করে নির্বাচনী সভা সমিতির ওপর। সেক্ষেত্রে বিজেপির প্রার্থীরা অনেক ক্ষেত্রেই হাতিয়ার করেন রাজনৈতিক ‘অপশব্দ’কে, যা হয়ত মেনে নিতে পারেননি সমাজের একটা বড় অংশের নারীরাই । মহিলা ভোটব্যাঙ্ক চিরকালই অবহেলিত । তবে এই ভোট ব্যাঙ্কই যে ঘাস ফুল শিবিরের ফিক্সড ডিপোজিট , তা বেশ বোঝেন পোড় খাওয়া রাজনীতিক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তাই তাঁর সবকটি প্রকল্পের প্রধান উপভোক্তা মহিলারাই। কন্যাশ্রী, রুপশ্রী, লক্ষ্মীর ভান্ডার, এমনকি স্বাস্থ্যসাথী কার্ডেও বাড়ির বয়োজেষ্ঠা মহিলারাই প্রাধন মুখ । ফলে রাজনৈতিক কুৎসা যে আদৌ ছাপ ফেলেনি তার প্রতিফলন গতকালের নির্বাচনের ফল।

প্রার্থীরা নিজেরাও জড়িয়েছেন বিতর্কে। প্রথমেই যার নাম আসবে তিনি বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী সন্দেশখালির ‘প্রতিবাদী মুখ’ রেখা পাত্র। নির্বাচনে প্রার্থী রূপে মনোনীত হওয়ার পর থেকে বিতর্ক ঘিরে রয়েছে তাঁকে। এলাকার মানুষেরও তাঁর প্রার্থীপদ প্রাপ্তিতে খুব একটা সমর্থন ছিলনা। তবে সন্দেশখালি ইস্যু জাতীয় স্তরে চলে যাওয়ায় সে প্রভাবকে কাজে লাগাতে চেয়েছিল পদ্ম শিবির। ফল রেখার টিকিট প্রাপ্তি। ভোট চলাকালীন স্টিং অপারেশনের ভূমিকাও এক্ষেত্রে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছেনা।
কৃষ্ণনগরের রাজমাতা অমৃতা রায় সাম্প্রদায়িকতা প্রসঙ্গ এবং তাঁর পূর্বসূরি মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের ব্রিটিশ শাসকের হাত ধরার কাহিনী জনমানসে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। সে প্রসঙ্গে তৃণমূল সুপ্রিমো নিজে তাঁর সমালোচনা করতে ছাড়েননি। বাকি পদ্ম প্রার্থীরা ক্রমাগত অপশব্দ ব্যবহার করে রাজ্যের মহিলাদের মনেও কি নিজেদের কিছুটা নেতিবাচক জায়গা করেছিলেন !

তবে নতুন সংসদ ভবনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল এবার ইন্ডিয়া জোটের বৃহত্তম শরিক রূপে কেন্দ্রীয় আইনসভায় আসন অলঙ্কৃত করতে চললেন। মোট ২৯ টি জয়ী আসনে তাঁর মুখে হাসি ফুটিয়েছেন মহুয়া মৈত্র, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, প্রতিমা মণ্ডল, সায়নী ঘোষ, মালা রায়, রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, মিতালি বাগ, জুন মাল্য, শর্মিলা সরকার, শতাব্দী রায়-দের’মহিলা ব্রিগেড’। শত অপমান, কুৎসার পরে ওরা পৌঁছে গেলেন সংসদের অন্দরে। ‘নারী শক্তি’-র যে প্রচার পদ্ম শিবির জারি রেখেছিল, তাও নারী শক্তিকেই কুৎসায় ভরিয়ে, এবার কি সেই কর্মফলের সাজা পেল বিজেপি?