- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- ডিসেম্বর ৩, ২০২৩
হাতে অনাস্থা। হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যেই মোদি ম্যাজিক
গোবলয়ের ৩ রাজ্যে সেভাবে দাগই কাটতে পারল না হাত কংগ্রেস। অথচ এই চার রাজ্য থেকেই ভালো ফলের প্রত্যাশা করেছিল রাহুল-সোনিয়ার দল। অন্তত ৩ রাজ্যে সরকার গড়ব,এটাই ছিল কংগ্রেসের নির্বাচনের শুরু থেকেই দাবি। তবে কংগ্রেস ধাশায়ী হল ৩ রাজ্যে। কেন কংগ্রেসের এই ভরাডুবি হল? এই প্রশ্নই এখন জাতীয় রাজনীতির সবচেয়ে বড় আলোচ্য।
নরেন্দ্র মোদি “বিশ্বগুরু”, এটা বিশ্বে চাউর হয়ে গেছে। তাঁকে গুরু বলে মানছেন অনেক দেশের প্রধানেরা। কেউ তো আবার নরেন্দ্র মোদির পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম পর্যন্ত করছেন। আর বিজেপি তাই এই পাঁচ রাজ্যের প্রচারে বলেছে, “মোদি হ্যায়, তো মুমকিন হ্যায়।” তিন রাজ্যের ভোটের ফল বিজেপির এই স্লোগানকে সার্থক করল। অথচ মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও রাজস্থানে বিজেপির লড়াইটা শক্ত ছিল। তবে স্রেফ মোদিকে সামনে রেখে সেই শক্ত এবং কঠিন লড়াই সহজে জয় করে নিতে সক্ষম হল বিজেপি। এই তিন রাজ্যে বিজেপির প্রচারের মুখ ছিলেন বিজেপি। কংগ্রেস এই নির্বাচনে স্থানীয় নেতাদের সামনে রেখে লড়াইয়ের রূপরেখা তৈরি করলেও বিজেপি কিন্তু সেই ঝুঁকি না নিয়ে প্রচারের মুখ করেছে নরেন্দ্র মোদিকেই। আর মোদি ম্যাজিকে উড়ে গেছে রাহুল গান্ধির সব যুক্তি, মোদি বিরোধী প্রচারের কৌশল। কংগ্রেস যখন এই রাজ্যগুলোতে বিজেপির স্থানীয় নেতাদের দুর্নীতিকে তুলে ধরে প্রচার চালিয়েছে,তখন সেই প্রচারকে নিমেষে উড়িয়ে দিয়েছে মোদি নামক বিজেপির প্রধান ঢাল। আর এই মোদিই গোবলয়ে শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের পথের কাটা হয়ে দাঁড়ালেন। যদিও গোবলয়ে কংগ্রেসের বরাবরই বিজেপির সঙ্গে লড়াইয়ে অসহায় অবস্থা হয়। তবে এবার বিজেপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল কংগ্রেসকে বাড়তি জয়ের পথে সহায়তা দেবে মনে করেছিলেন রাহুল-সোনিয়ার দল। তবে মোদির প্রচার বিজেপির যাবতীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে বিজেপিকে তিনটি রাজ্য উপহার দিল।
শচীন পাইলট বনাম অশোক গেহলট, টিএস সিংদেও বনাম ভুপেশ বাঘেল, কমল নাথ বনাম দিগ্বিজয় সিং, উত্তর ভারতের এই তিন রাজ্যে ভোট হয়েছে কংগ্রেসের কোন্দলে জর্জরিত অবস্থায়। এবাট রাজস্থানে পাঁচ বছর পর পর সরকার বদলের রীতি পালটে ফেলার একটা সুবর্ণ সুযোগ ছিল কংগ্রেসের সামনে। কিন্তু শচীন পাইলট- অশোক গেহলটের দ্বন্দ্বই শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের পরাজয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াল। রাজস্থানে কংগ্রেস অশোক গেহলটকে প্রচারের ও ভোটের মুখ করায় প্রচারে সেই অর্থে পাওয়াই যায়নি শচীন পাইলটকে। এই সুযোগে গুর্জর ভোটে ভাগ বসাল বিজেপি। ছত্তিশগড়ে মুখ্যমন্ত্রী ভুপেশ বাঘেল এবং উপমুখ্যমন্ত্রী টিএস সিংদেওয়ের লড়াই সর্বজনবিদিত। তাঁরা দুজনেই লড়েছেন, তবে একে অপরের হাত ধরে নয়, একে অপরের বিরুদ্ধে, তাতেই ছত্তিশগড় কংগ্রেসের হাতছাড়া হয়েছে। মধ্যপ্রদেশেও শেষবেলায় কমল নাথ এবং দিগ্বিজয়ের মতোবিরোধ সামনে এসে পড়ে।
তবে রাজনৈতিক অভিজ্ঞরা বলছেন, ইন্ডিয়া জোটের কাউকে প্রচারে না ডেকে কংগ্রেস বড় ভুল করেছে। মধ্যপ্রদেশ-রাজস্থানে সমাজবাদী পার্টি- সিপিএমের মতো ছোট দলগুলিকে ভোট প্রচারে পাত্তাই দেয়নি কংগ্রেস। এমনকী ইন্ডিয়া জোটের নেতারা ভোপালে যৌথ জনসভা করতে চেয়েও কংগ্রেসের সম্মতি পায়নি। কমল নাথের এই ভুলের মাশুল দিতে হল মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস শিবিরকে। দেশজুড়ে রাহুল গান্ধি মোদি বিরোধী প্রচার চালিয়েছিলেন। ভারত জুড়ে পদব্রজে যাত্রা করে, সমাজের বিভিন্ন স্তরের, পেশার মানুষের সঙ্গে মিশে, তাঁদের জীবনযাপন সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে রাহুল গান্ধি হয়তো খুব সহজ ভাবে বিশ্বাস করেছিলেন, কংগ্রেস নেতারা ধরেই নিয়েছিলেন, সাধারণ মানুষই কংগ্রেসকে ভোটে জিতিয়ে দেবে। তীব্রভাবে নরেন্দ্র মোদির বিরোধীতা করবে। রাহুল গান্ধির ভারতবাসীকে নিয়ে সহজ, সরল এই বিশ্বাস, এই ভাবনাকে হয়তো সঠিক মর্যাদা দিল না কেউই। এটা বাস্তব না ভাবনা সেটা ভবিষ্যৎ বলবে। ভবিষ্যতে এটাও প্রমাণ হবে এই বেকারি, মূল্যবৃদ্ধি, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিক্রি করে দেওয়ার পরও নরেন্দ্র মোদির দলকে তিন রাজ্যে ফিরিয়ে আনা ঠিক না বেঠিক হল। তবে কংগ্রেস তাই বলে ত্রুটিমুক্ত সেটাও কিন্তু নয়। যে দুই রাজ্যে কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল, সেই দুই রাজ্যে কংগ্রেসের নামে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগও ছিল। হয়তো তাই লঘু পাপে গুরু দন্ড পেতে হল কংগ্রেসকে।
❤ Support Us