Advertisement
  • এই মুহূর্তে দে । শ
  • মার্চ ১৩, ২০২৫

গ্রামোন্নয়নে ৪৪ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা বরাদ্দ অনুমোদন বিধানসভায়

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
গ্রামোন্নয়নে ৪৪ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা বরাদ্দ অনুমোদন বিধানসভায়

২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের রাজ্যবাজেটে তৃণমূল সরকার গ্রামোন্নয়নের জন্য ৪৪,১৩৯.৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল, বৃহস্পতিবার বিধানসভায় তা অনুমোদিত হয়েছে। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ২,৮২২ কোটি টাকা। বিরোধী বিধায়কদের অনুপস্থিতিতেই এই বরাদ্দ পাস হয়। বিধানসভায় তৃণমূল বিধায়কেরা কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ তোলেন, বিশেষ করে ১০০ দিনের কাজের অর্থ বন্ধ থাকা নিয়ে সরব হন। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে গ্রামীণ ভোট নিশ্চিত করতেই এই বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত।

২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের জন্য তৃণমূল সরকার যে পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করেছিল, তাতে গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য ৪৪,১৩৯.৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় রাজ্যের অর্থ দফতর সে বরাদ্দের অনুমোদন দিয়েছে। বিশেষ করে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের জন্য বৃহৎ প্রকল্পের আওতায় ২,৮২২.০৭৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। এই বরাদ্দ পাশ হওয়ার সময় বিজেপি বিধায়কেরা অনুপস্থিত ছিলেন। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় এই বাজেট বরাদ্দ নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী, সমীর জানা, শ্যামল মণ্ডল, সুকান্ত পাল, শেখ শাহনওয়াজ, বীণা পাল ও শওকত মোল্লা। অপরদিকে, বিরোধীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আইএসএফ-র বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। এদিন, নওশাদ সিদ্দিকি পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ অর্থনীতির দুর্বলতার বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, ‘পরিসংখ্যান অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ দেশের মধ্যে ১৩তম স্থানে রয়েছে। আমাদের গ্রামাঞ্চলে জনপ্রতি দৈনিক খরচের ক্ষমতা মাত্র ১২ টাকা।’ তিনি আরো অভিযোগ করেন, রাজ্যের শাসক দল দ্বিচারি আচরণ করছে, গ্রামোন্নয়নের প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। নওশাদের অভিযোগের জবাব দেন রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। তিনি বলেন, ‘২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ‘স্বপ্নভঙ্গ’ হওয়ার পর থেকেই কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। গ্রামীণ উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের জন্য কেন্দ্র থেকে অর্থ বরাদ্দ বন্ধ রাখা হয়েছে। বারবার মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছেন, দিল্লি গিয়েও দাবি জানিয়েছেন, কিন্তু কেন্দ্র সহায়তা দিচ্ছে না।’

পাথরপ্রতিমার বিধায়ক সমীর জানা বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের প্রতি চরম বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের উদ্যোগে ১২ লক্ষ আবাস নির্মাণের পরিকল্পনা করেছেন। এটি শুধুমাত্র তৃণমূলের সমর্থকদের জন্য নয়, বরং সবার জন্য। কেন্দ্রের ১০০ দিনের কাজ ও আবাস প্রকল্পের অর্থ না মেলায় রাজ্য সরকার ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্প চালু করেছে, জবকার্ড হোল্ডারদের বকেয়া মিটিয়েছে।’ ৬ লক্ষ মানুষ ‘বাংলার বাড়ি’ পাবেন, এই প্রেক্ষিতে ৯৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । ১৬ লক্ষ অতিরিক্ত যোগ্য পরিবারকে প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে বাংলার বাড়ি প্রকল্পের অধীনে অন্তর্ভুক্ত করতে চলেছে রাজ্য সরকার। এই পর্যায়ের প্রথম কিস্তির টাকা, পরিবার পিছু ৬০,০০০ টাকা হারে, এই বছর ডিসেম্বর মাসের মধ্যে প্রদান করা হবে বলে বাজেটে জানানো হয়েছে। যে কারণে ৯,৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। বলা হয়েছে এই পর্যায়ের দ্বিতীয় কিস্তির টাকা বাড়ি নির্মাণের অগ্রগতির ভিত্তিতে দেওয়া হবে গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়নের অংশ হিসেবে ‘পথশ্রী-৪’ প্রকল্পের অধীনে ২২ হাজার কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের প্রায় ১.৭১ লক্ষ কোটি টাকা বকেয়া থাকলেও ঋণের বোঝা কমাতে রাজ্য নিজস্ব আয় বৃদ্ধির পথ খুঁজছে।

২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এটি ছিল রাজ্য সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তৃণমূল সরকার গ্রামীণ ভোটকে টার্গেট করেই বাজেটের মূল ফোকাস ঠিক করেছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের তরফ থেকে কিছু বলা হয়নি, তবে প্রশাসনের একাংশের মতে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল দেখে তৃণমূল বুঝতে পেরেছে, গ্রামে সংগঠনের শক্তি বাড়াতে পারলে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সুবিধা পাওয়া যাবে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ১২টি আসনে জয়ী হয়েছিল, যেখানে ২০১৯ সালে তারা ১৮টি আসন পেয়েছিল। পর্যালোচনায় উঠে এসেছে, গ্রামীণ বাংলায় তৃণমূলের শক্তি বাড়লেও শহরাঞ্চলে আশানুরূপ ফল হয়নি। কলকাতা, বিধাননগর, শিলিগুড়ি, আসানসোলের মতো শহরগুলোতে বিজেপি তুলনামূলকভাবে এগিয়ে রয়েছে। এই পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেই ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বাজেটে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কারণ, রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে প্রায় ১৭০-১৮০টি আসনে গ্রামীণ ভোট নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে কিছু আসন পুরোপুরি গ্রামাঞ্চলের, আবার কিছু আসন আধা-শহর ও আধা-গ্রামের মিশ্রণ। এই বাস্তবতা মাথায় রেখেই রাজ্য সরকার প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকার বিশাল বাজেট বরাদ্দ করেছে গ্রামোন্নয়নের জন্য, যা বৃহস্পতিবার বিধানসভায় অনুমোদিত হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, এই বাজেট বরাদ্দ বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলে কীভাবে উন্নয়ন হয় এবং আগামী নির্বাচনে তা কতটা প্রভাব ফেলে।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!