Advertisement
  • প্রচ্ছদ রচনা
  • মার্চ ২১, ২০২২

স্বনির্ভরতা ও সামাজিক উন্নয়নই বিশ্বের বৃহৎ এনজিও ব্র্যাকের একমাত্র লক্ষ্য

সমাজ থেকে দারিদ্রতা বিমোচনে কাজ করে যাব, সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবে অঙ্গীকারবদ্ধ সংস্থার কর্মকর্তারা।

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
স্বনির্ভরতা ও সামাজিক উন্নয়নই বিশ্বের বৃহৎ এনজিও ব্র্যাকের একমাত্র লক্ষ্য

বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের এক বছর পরই ব্র্যাকের জন্ম। এর লক্ষ্য ছিল সদ্য স্বাধীন দেশের মানুষের উন্নয়ন। ৫০ বছরে বাংলাদেশ উন্নয়নের মডেল হিসেবে বিশ্বে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশের এই অগ্রগতির সঙ্গে সব সময় থেকেছে ব্র্যাক। দেশের সীমা ছাড়িয়ে এখন বিশ্বের নানা প্রান্তে এই সংগঠনের কাজ ছড়িয়ে গেছে । ব্র্যাক ভবিষ্যতেও স্বনির্ভরতা ও সামাজির উন্নয়নের লক্ষ্য অবিচল থাকবে।

ব্র্যাকের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক সাংবাদিক সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিরা জানিয়েছেন—
১৯৭১ সালের ২১শে মার্চ যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশে ফিরে আসা শরণার্থীদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের লক্ষ্য নিয়ে সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকা শাল্লায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রিহ্যাবিলিটেশন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিটি বা ব্র্যাকের। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই সংস্থা এখন শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি সংস্থায় পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের ১০টি দেশে এখন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে সংস্থাটি।বেসরকারি সংস্থার গণ্ডি ছাড়িয়ে ব্র্যাক এখন একটি প্রাতিষ্ঠানিক ইকো-সিস্টেম তৈরি করেছে, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ব্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয়, সামাজিক ব্যবসাসহ অনেকগুলো নানামুখী উদ্যোগ।

প্রথমে বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিটি বা ব্র্যাক নামে শুরু করলেও ১৯৭৩ সালে যখন পুরোদস্তুর উন্নয়ন সংস্থা হিসাবে ব্র্যাক কার্যক্রম শুরু করে, তখন তার নামের বিস্তারিত পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘বাংলাদেশ রুরাল অ্যাডভান্সমেন্ট কমিটি’। তবে সংক্ষিপ্ত নাম ব্র্যাকই থাকে।
ব্রাকই প্রথম বুঝেছিল একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের উন্নয়ন করতে গেলে গ্রামীণ অর্থনীতির বিষয়টিকে চাঙ্গা করতে হয়। এইঅর্থনীতিকে চাঙ্গা করার যে দর্শন, ব্র্যাকেরসাফল্যের পেছনে সেটাই বড় ভূমিকা রেখেছে। সেই সঙ্গে ফজলে হাসান আবেদের ভূমিকা- সময়ের সাথে মিলিয়ে ব্র্যাকের কার্যক্রমকে ঢেলে সাজানো-সেটাও ব্র্যাকের এতদিনের অগ্রযাত্রা এবং টিকে থাকার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রেখেছে ।

প্রথম দিকে ব্র্যাকের সাত সদস্যের গভর্নিং বোর্ডের সদস্যরা ছিলেন কবি বেগম সুফিয়া কামাল, অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক, কাজী ফজলুর রহমান, আকবর কবির, ভিকারুল ইসলাম চৌধুরী, এর আর হোসেন এবং ফজলে হাসান আবেদ।কবি সুফিয়া কামাল হলেন ব্র্যাকের প্রথম চেয়ারম্যান। নির্বাহী পরিচালক হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন ফজলে হাসান আবেদ। ১৯৮০ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ব্র্যাকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন সৈয়দ হুমায়ুন কবির। ০০১ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন ফজলে হাসান আবেদ।ফজলে হাসান আবেদ প্রথম দিকে নিজের বাড়ি বিক্রির টাকা হাতে ব্র্যাক অনেকগুলো প্রকল্প নেয়। তবে পরবর্তীতে আরও কিছু বিদেশি সংস্থার সহায়তা পায় । সংস্থাটি
১৯৭৪ সালের দিকে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম শুরু করে ব্র্যাক। ব্র্যাকের দেওয়া ক্ষুদ্র ঋণের সুবিধা নিয়ে নিম্নবিত্ত মানুষগুলো নতুন করে পথ চলার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করছে।

ব্র্যাক প্রথম দিকে দুটি কাজের উপর গুরুত্ব দিয়েছিল এক. বয়স্ক আর শিশু-তরুণদের শিক্ষা দেয়ার কার্যক্রম। দ্বিতীয়ত, নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা।কীভাবে বাংলাদেশ তলাবিহীন একটি ঝুড়ি থেকে আজকের অবস্থানে এসেছে, সেখানে যে কয়টি উপাদান কাজ করেছে, তার একটি বড় খাত হচ্ছে এনজিও খাত। সেখানে ব্র্যাক একটি পথিকৃৎ এনজিও।সে সময় বাংলাদেশের অর্থনীতির বড় অংশটি আসতো বিদেশি ঋণ বা অনুদান থেকে। আশির দশকের দিক থেকে ব্র্যাক চিন্তা করতে শুরু করলো, আমরা বিদেশি টাকার ওপর নির্ভর করে সারাজীবন চলতে পারবো না। তখন তারা নির্ভরশীলতা তৈরি করতে শুরু করলো।

একসময় ক্ষুদ্র ঋণ ও নানা উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে ব্র্যাক কাজ করলেও আস্তে আস্তে তাদের নানা সহযোগী প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়।১৯৭৮ সালে জন্ম হয় ব্র্যাকের অন্যতম ব্যবসাসফল সহযোগী প্রতিষ্ঠান আড়ং, যেখানে তৃণমূল নারীদের হাতে তৈরি নানা পণ্য বিক্রি হয়।

পর্যায়ক্রমে কোল্ড স্টোরেজ, পাস্তুরিকৃত দুধ ও দুগ্ধজাতীয় পণ্যের ব্যবসা, উচ্চশিক্ষা, বিনিয়োগ, ও ব্যাংক।ব্র্যাক যে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে, সেখানে বৈদেশিক দাতাদের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই অর্থ যোগান বাড়ছে, যা উন্নয়নে কাজে লাগছে।
ব্র্যাকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের ১০টি দেশে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম রয়েছে। বিশ্বের অন্যতম বড় বেসরকারি সংস্থা বলে মনে করা হয় সংস্থাটিকে।

ব্র্যাকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি ১১ কোটির বেশি মানুষকে সেবা দিচ্ছে। কর্মী সংখ্যা রয়েছে ৯০ হাজারের বেশি।দেশের বাইরে কাজ করার জন্য তৈরি হয়েছে ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনাল। ২০০২ সালে আফগানিস্তানে কাজ করার মাধ্যমে দেশের বাইরে কর্মকাণ্ড শুরু হয়।বাংলাদেশ ছাড়াও কাজ করছে মিয়ানমার, রোয়ান্ডা, উগান্ডা, তানজানিয়া, লাইবেরিয়া, সাউথ সুদান, সিয়েরা লিওন, আফগানিস্তান ও ফিলিপিন্সে।ব্র্যাক এখন মূলত তিনটি লক্ষ্যে কাজ করে। একটি হলো শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। এখানে ১০টি প্রকল্প রয়েছে। পাশাপাশি সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ রয়েছে। সেই সঙ্গে ব্র্যাক ব্যাংকের মতো কিছু কিছু খাতে ব্র্যাক বিনিয়োগ করেছে।

 

 

 


  • Tags:
❤ Support Us
Advertisement
Hedayetullah Golam Rasul Raktim Islam Block Advt
Advertisement
Hedayetullah Golam Rasul Raktim Islam Block Advt
Advertisement
error: Content is protected !!