Advertisement
  • এই মুহূর্তে দে । শ
  • সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৩

ইডি-র “এফআইআর” খারিজ না করেই অভিষেককে আদালতের “রক্ষাকবচ”, কোনও কড়া পদক্ষেপ নয় তাঁর বিরুদ্ধে

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
ইডি-র “এফআইআর” খারিজ না করেই অভিষেককে আদালতের “রক্ষাকবচ”, কোনও কড়া পদক্ষেপ নয় তাঁর বিরুদ্ধে

কলকাতা হাই কোর্ট তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে রক্ষাকবচ দিল। আদালতের নির্দেশ, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ করা যাবে না। শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ এই নির্দেশ দিলেন। তবে ইডির ইসিআইআর বা এনফোর্সমেন্ট কেস ইনফর্মেশন রিপোর্ট খারিজ করল না আদালত।

এদিন আদালতে বিচারপতির উল্লেখযোগ্য পর্যবেক্ষণ, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে গ্রেফতার এবং তাঁর সঙ্গে যোগসূত্র ছাড়া অভিষেকের বিরুদ্ধে আর কোনও তথ্যপ্রমাণ আদালতে দিতে পারেনি ইডি। হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, ‘‘তদন্ত চলছে। এই পরিস্থিতিতে ইসিআইআর খারিজের আবেদন অপরিণত অবস্থায় রয়েছে। তাই এই নিয়ে আদালত এখনই কোনও নির্দেশ দেবে না।’’

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলা থেকে নিষ্কৃতি পেতে ইডির ইসিআইআর খারিজ চেয়ে হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই মামলার সঙ্গে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস কোম্পানির অফিসে ইডির তল্লাশির বিষয়টিও যুক্ত হয়। এই মামলায় শুক্রবার অভিষেককে কলকাতা হাই কোর্ট রক্ষাকবচ দিল।

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম প্রথম উঠে আসে জেলবন্দি কুন্তল ঘোষের চিঠির মাধ্যমে। বেশ কয়েক মাস আগে ধর্মতলার শহিদ মিনারে তৃণমূলের সভা থেকে অভিষেক দাবি করেছিলেন, হেফাজতে থাকার সময় মদন মিত্র, কুণাল ঘোষকে তাঁর নাম নিতে বলেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এর পর পরেই রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুবনেতা কুন্তল দাবি করেন যে, অভিষেকের নাম বলার জন্য তাঁকেও  চাপ দিচ্ছে ইডি, সিবিআই। এই সংক্রান্ত অভিযোগ জানিয়ে নিম্ন আদালতে চিঠিও দেন কুন্তল। পুলিশি হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি পাঠান কলকাতার হেস্টিংস থানাতেও। তার পর কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর পর্যবেক্ষণে জানান, প্রয়োজনে অভিষেককে সিবিআই বা ইডি এই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে। সেই একই নির্দেশ বহাল রাখেন হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা। তার পরেই অভিষেককে সিবিআই তলব করে। অভিষেক হাজিরাও দিয়েছিলেন তখন। পরে আবার তাঁকে তলব করেছিল ইডি। কিন্তু তিনি তখন হাজিরায় যাননি। এর পর নতুন করে গত ১৩ সেপ্টেম্বর অভিষেককে তলব করা হয়। সে দিন পৌনে ন’ঘণ্টা ধরে অভিষেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।

এর পর অভিষেক বিদেশ থেকে ফেরার পরদিন, গত ২১ অগস্ট অভিষেকের সংস্থা লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডসে তল্লাশি চালায় ইডি। ওই সংস্থায় অতীতে কাজ করতেন নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় ধৃত ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। ২৩ অগস্ট ওই তল্লাশির কথা এক্স হ্যান্ডেলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানায় ইডি। তাতে তারা উল্লেখ করে, নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে ধৃত সুজয়কৃষ্ণের নাম তারা লেখে। একই সঙ্গে সেখানে নাম ছিল অভিষেকের। ইডির ওই বিবৃতিতে দাবি করা হয়, লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের চিফ অপারেটিং অফিসার বা সিওও হিসাবে এক সময়ে চাকরি করেছেন সুজয়কৃষ্ণ। ওই বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হয়, লিপস  অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেডের চিফ এগজ়িকিউটিভ অফিসার বা সিইও তৃণমূলের সাংসদ অভিষেক। সঙ্গে লেখা হয়েছে, ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ওই সংস্থার ডিরেক্টর পদে ছিলেন অভিষেক। যা ঘিরে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। অভিষেকের নাম করে কেন প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করা হল, এই নিয়ে আদালতে প্রশ্নের মুখে পড়েছে ইডি। এ নিয়ে হইচইয়ের মধ্যেই অভিযোগ ওঠে, অভিষেকের সংস্থার একটি কম্পিউটারে ১৬টি ফাইল ডাউনলোড করেছেন ইডির আধিকারিকেরা। যা নিয়ে অভিযোগ জানান ওই সংস্থারই এক কর্মী। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে লালবাজার। ইডির তরফে দাবি করা হয়, তাঁদের এক আধিকারিক নিজের মেয়ের জন্য হস্টেলের তালিকা বার করেছিলেন। ওই ফাইলগুলিতে হস্টেলের নাম রয়েছে বলে জানানো হয়। এই নিয়ে ইডির বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ।

অন্য দিকে, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী বৃহস্পতিবার অভিষেক-সহ লিপস  অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার ডিরেক্টর এবং শীর্ষ পদাধিকারীদের সম্পত্তির তথ্য হলফনামা আকারে কলকাতা হাই কোর্টে জমা দিয়েছে ইডি। এই প্রসঙ্গে অভিষেক বলেছেন, ‘‘ওদের কাছে প্রথম থেকেই তো সব আছে। নতুন করে কী জমা দেব? ২০২০ সালে আমি প্রথম যে দিন ইডি দফতরে গিয়েছি, সে দিনই যাবতীয় সম্পত্তির হিসাব এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য জমা দিয়ে এসেছি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমাকে পাঁচ বার তলব করেছে। চার বার ইডি, এক বার সিবিআই। আমার স্ত্রীকে চার বার তলব করেছে। আমি এখন আর ইডি, সিবিআইকে গুরুত্ব দিই না।’’

নিয়োগ দুর্নীতি মামলা সূত্রে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিদেশ যাত্রার প্রসঙ্গ উঠে এসে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে দাবি করা হয় , অভিষেককে বিদেশ যাত্রায় তাদের তরফে বাধা দেওয়া হয়নি। সেই সময় ইডি একটা রিপোর্ট জমা দেয়। যেখানে দাবি করা হয় যে অভিষেক কতবার বিদেশ যাত্রা করেছেন। এরপরে তাদের সওয়াল ছিল যে এই বিদেশ যাত্রার সময় তো তাঁকে আটকানো হয়নি। এরপরেই তিনি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান। ইডি’র রিপোর্টে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিদেশ ভ্রমণের ক্ষতিয়ান উঠে আসে। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিষেকের দায়ের করা আবেদনে ইডি’র সম্প্রতি জমা দেওয়া রিপোর্টে ভ্রমণের ক্ষতিয়ানও দিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। রিপোর্টে ইডি’র দাবি, ২০১৫ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ২৬ বার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এর মধ্যে ১২ বার ছুটি কাটাতে, ১৩ বার চিকিৎসা সংক্রান্ত ভ্রমণ এবং একবার অফিসিয়াল কাজে আমেরিকা গিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!