Advertisement
  • এই মুহূর্তে দে । শ
  • জানুয়ারি ১৪, ২০২৫

বাঁচাতে হবে শহরের ঐতিহ্যকে, ট্রাম নিয়ে নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
বাঁচাতে হবে শহরের ঐতিহ্যকে, ট্রাম নিয়ে নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের

ট্রাম সংক্রান্ত মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বড়ো পদক্ষেপ । ট্রাম রাজ্যের ঐতিহ্য, তাকে এভাবে নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। পৃথবীর বহু উন্নত শহরে ট্রাম চলে। রাজ্যকে উদ্যোগ নেবার নির্দেশ।

বন্ধ হচ্ছে কলকাতাযর ট্রাম। খবর সামনে আসতে সোরগোল পড়ে গেছিল তিলোত্তমায়। শহরের ঐতিহ্যবাহী পরিবহণকে চালু রাখতে শুরু হয়েছিল বিক্ষোভ। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আইনের দারস্থ হয়েছিলেন কলকাতার নাগরিগ মোহন। সেই মামলায় এবার বড়ো রায় দিল কলকাতা হাইকোর্ট। ট্রাম রাজ্যের ঐতিহ্য, তাকে এভাবে নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। পৃথবীর বহু উন্নত শহরে ট্রাম চলে। রাজ্যকে উদ্যোগ নেবার নির্দেশ। অবিলম্বে ট্রাম লাইন বুজিয়ে ফেলা বন্ধ করতে হবে। এই সংক্রান্ত ছবি-সহ রিপোর্ট রাজ্যের তরফে জমা করতে হবে আদালতে।

শতাব্দী প্রাচীন শহরে ট্রাম ঐতিহ্যের ধারা বহন করে চলেছে। সেই ধারা বাঁচিয়ে রাখতে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের স্পষ্ট জানিয়েছেন, “ট্রাম রাজ্যের ঐতিহ্য। তা তুলে দেওয়া খুব সহজ কাজ। কিন্তু, রাজ্যকে ট্রাম বাঁচাতে উদ্যোগ নিতে হবে। বহু দেশে ট্রাম চলে। কোথাও কোথাও রাস্তার একেবারে মাঝখান দিয়ে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন রাজ্যের ট্রাম বাঁচাতে।” রাজ্যকে একাধিক নির্দেশ দেন বিচারপতি। ইতিমধ্যে শহরের ২ জায়গায় ট্রাম লাইন বুজিয়ে ফেলার অভিযোগ এসেছে। প্রধান বিচারপতির ক্ষুব্ধ মন্তব্য, “উপর তলার হাত না থাকলে এই ভাবে ট্রাম লাইন বুজিয়ে ফেলা যায় না!”তবে রাজ্যের তরফে এদিন আদালতে দাবি করা হয়, ট্রাম লাইন বুজিয়ে ফেলার কোনও নির্দেশ রাজ্যের পরিবহন দফতরের তরফে দেওয়া হয়নি।

অভিযোগ ছিল, আসলে গতিহীনতার দোহাই দিয়ে শহর জুড়ে ট্রামের জমি–ডিপো সহ যাবতীয় সম্পদ বেঁচে দেওয়ার পথে নেমেছে সরকার। ইতিমধ্যে শহরের বিভিন্ন রুটে ট্রাম তুলে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের অব্যবহিত পরে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় রাজ্যের প্রশাসন যেভাবে জলের দরে ট্রাম কোম্পানির জমি বাড়ি বিক্রি করেছে তাতে এই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। নতুন সিন্ডিকেট-দুর্নীতি মাথা চাড়া দিয়েছে বলেও অভিযোগ ছিল।

প্রখ্যাত দার্শনিক রলাঁ বার্থ তাঁর মিথোলজিস গ্রন্থে মন্তব্য করেছিলেন, যে আইফেল টাওয়ার পুরো প্যারিস শহরকেই একটি নিসর্গচিত্রে রূপান্তরিত করেছে। তেমনি কলকাতা শহরের ঐতিহ্য বুঝতে ট্রাম ছাড়া কল্পনা করা যায় না। সত্যিজিত, মৃণাআল, ঋত্বিকের সিনেমায় শহরবাসের রূপকথা ফুটিয়ে তোলে ট্রাম। সেই পাঁচের দশকের শেষে ট্রামগাড়ির শেষ আসনটিতে বসে যুবক অপু মাঝেমাঝেই একটি চিঠি পড়ছে। এ দৃশ্য ভলা যায় না। ভোলা যায় না জীবনানন্দ দাশের সেই মর্মান্তিক মৃত্যু। ভোলা যায় না শক্তি চট্টোপাধ্যাযয়ের অমোঘ পংক্তি – ‘মৃত্যু, তুমি রাসবিহারী ট্রামলাইন।’ তিলোত্তমা কলকাতার চালচিত্রের জীবন ট্রামের টিংটিং ঘণ্টিতে, কাঠের সিটে, শেষ আসনে বসে খাওয়া বাদামভাজার খোলসে লুকিয়ে আছে।

সময়ের সাথে সাথে মানুষ যেমন উন্নত প্রযুক্তিকে বেছে নেয়, একইসাথে বাঁচিয়ে রাখতে হয় পুরনো ঐতিহ্যকে। কিন্তু তাতে বরই অনীহা। তাই ট্রামলাইনের ফলে জানজট, দুর্ঘটনা, শ্লথগতি, দূষণের শহরে তাঁর চলার পথে অন্তরায়। রাজ্য সরকার চিরতরে শহর কলকাতার রাজপথ থেকে ট্রাম তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বিদায় নেবার প্রহর গুনছিল সে। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টের আজকের নির্দেশ কী বাঁচিয়ে রাখতে পারবে শহরের ঐতিহ্যকে!!


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!