Advertisement
  • দে । শ
  • জুন ৪, ২০২২

সন্তানের হাতেই হাতেখড়ি হচ্ছে মায়েদের

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
সন্তানের হাতেই হাতেখড়ি হচ্ছে মায়েদের

পশ্চিম বর্ধমানের জামুরিয়া (‌২)‌ ব্লকের নীলপুর আদিবাসী পাড়ায় এখন এসেছে নতুন উদ্যম। জামুরিয়ার তিলকামাটি আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (‌এটি সরকারি স্কুল)‌ শিক্ষক দীপনারায়ণ নায়ক এক অসম্ভবকে সম্ভবসাধন করেছেন। এই গ্রামের শিশুরা অক্ষরজ্ঞান শেখার পর, নিজের মাকেও বর্ণমালা শেখানোর গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয়। বাংলার অ, আ, ক, খ, আর ইংরেজির A, B, C, D । তারপরই মা কে নিজের নাম লিখতে শেখায় খুদেরা। আর এই পুরো কাজের তত্ত্বাবধানে করেন দীপনারায়ণবাবু ।

লকডাউনের আগে রাস্তার ধারে গাছের নীচে বসিয়ে আদিবাসী শিশুদের পড়াশোনা শেখাতেন তিনি । তাঁর অভূতপূর্ব উদ্ভাবনী, আদিবাসীদের মাটির দেওয়ালে রং দিয়ে স্লেট বানিয়ে সেখানেই বর্ণমালা শেখানোর কাজ চলছে। ২০১০ সাল থেকে এই কাজ তিনি করে আসছেন। এখন তাঁর উদ্যোগ দেখে পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া এবং বীরভূমে আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামগুলিতে এভাবেই পঠন–পাঠন শুরু হয়েছে । যাতে পড়ুয়ারা নিজের নাম লিখতে পড়তে পারে। মায়েরাও তার সন্তানের কাছ থেকে শিখে রপ্ত করতে পারেন অক্ষর জ্ঞানের কৌশল।

গোটা গ্রামটাকেই স্কুলে বদলে দিয়েছেন দীপনারায়ণ নায়েক।

দীপনারায়ণবাবু বলেছেন, প্রথমটা এতো সহজ ছিল না। অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবুও হার মানিনি। তাঁর কথায়, ‘‌এদের কাছে পড়াশোনা করাটা একটা বাধা। সামনে যেন দেওয়াল তোলা। আমি দেওয়ালকেই লেখাপড়ার জন্য রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করেছি।’ ইউনিসেফ তাঁর কর্মকাণ্ডের ছবিকে ‘‌ফটো অফ দি ইয়ার’‌ বলে দ্বিতীয় পুরস্কারে ভূষিত করেছে ।

করোনা–পর্বে গাছতলায় পড়ানোর ব্যবস্থা করেছিলেন, তা এখনও চলছে । অবশ্য দিন কয়েকের মধ্যেই বর্ষা নামবে। এবার অন্যত্র পঠন–‌পাঠনের কাজ চালু করার চিন্তাভাবনা নিয়েছেন। ‌ধীরে ধীরে স্কুলছুট কমানোর দিকেও নজর রয়েছে তাঁর । দীপনারায়ণবাবু বলেছেন, আদিবাসীপাড়ার গরিব–‌গুর্বো শিশুরা লেখাপড়ায় আনন্দ খুঁজে পাচ্ছে এটাই আমার পরম পাওয়া । কিস্কু, টুডু, বেসরা, মারান্ডি, হেমব্রম ইত্যাদি বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠীর ৩ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত পড়ুয়ারা সকালে ও বিকালে বিনামূল্যে পড়াশোনা করতে পারছে । দুধ, কলা, পাউরুটি, কেক—‌ যখন যেটা সহজলভ্য হচ্ছে, তা ওদের দেওয়া হয়। গোটা প্রকল্পটির নাম দিয়েছি ‘‌রাস্তার মাস্টার’‌। পড়াশোনার পাশাপাশি ওদের শেখানো হয়েছে, অসুখ হলে ওষুধ খেতে হবে। মাইক্রোস্কোপে ডামি স্লাইড বসিয়ে প্রোটোজোয়া কী ও কেন—‌ অর্থাৎ জীবাণু দেখিয়ে রোগ সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে। একসময় আদিবাসী গ্রামের এই মানুষগুলো আমাকে দেখলেই দৌঁড়ে পালাত। বলত, ওরে বাবা ‘‌মাস্টার ভূত দিখাইছে’‌ । কৌতূহল রটেছিল গ্রামে। কৌতূহল পরে সরে গিয়ে সচেতনতা ফিরে এসেছে। প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন পড়ুয়া পড়ছে আমার কাছে । আমি ওদের বোঝাতে পেরেছি, রোগ-জীবানু শরীরে আক্রান্ত হলে ওষুধ দরকার । তুক-তাক, ফুকফাক, ওঝা দিয়ে অসুখ সারানো যায় না ।

নিজের স্কুলের পঠন–পাঠন শেষ করে যৎসামান্য বিশ্রাম। তারপরই ছুটে যাই । সারা বিকেল জুড়ে ওদের সঙ্গে সময় কাটে আমার। ছুটির দিনে সকালেও পড়াই। আমি চাই, এই কাজে সহৃদয় মানুষরা এগিয়ে আসুন ।


❤ Support Us
error: Content is protected !!