Advertisement
  • দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
  • জুন ১৮, ২০২৫

সংবিধান হত্যা দিবস পালনের কেন্দ্রীয় নির্দেশিকার বিরুদ্ধে সরব মুখ্যমন্ত্রী

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
সংবিধান হত্যা দিবস পালনের কেন্দ্রীয় নির্দেশিকার বিরুদ্ধে সরব মুখ্যমন্ত্রী

২৫ জুন ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ পালনের নির্দেশিকা সব রাজ্যকে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সে চিঠিকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। এ নিয়ে বুধবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, ওই কর্মসূচিকে তিনি সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছেন। তাঁর মতে, এটা আসলে কেন্দ্রীয় সরকারের একপেশে রাজনৈতিক প্রয়াস, যার উদ্দেশ্য অতীতকে ব্যবহার করে বর্তমানের দমননীতিকে ঢাকতে চাওয়া। মমতার কটাক্ষ, দেশে সংবিধান ও গণতন্ত্রের প্রকৃত হত্যাকাণ্ড চলছে প্রতিদিন। তাই যদি দিন নির্ধারণ করতেই হয়, তবে প্রতিটি দিনই হওয়া উচিত ‘সংবিধান হত্যা দিবস’। তিনি বলেন, ‘সংবিধান তো রোজ বদলে দেওয়া হচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে একটা ধর্ম চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। জনগণের মতামত, অধিকার, বাঁচার জায়গাগুলিকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। এমন দেশ আমরা কে কবে দেখেছি ?’

দেশের গণতান্ত্রিক পরিসর নষ্ট করেছে বিজেপি, অভিযোগ তুলে মমতা বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে কীভাবে চলতে হবে। মিডিয়াকে নির্দেশ দেওয়া হয় কী প্রচার করবে আর কী করবে না। সংবাদমাধ্যম কি আজ আর স্বাধীন আছে ? বিজেপির জন্য সাত খুন মাফ, আর অন্যরা হলে শাস্তি— এ কেমন বিচার ? যারা সংবিধানের মুখে বড়ো বড়ো কথা বলেন, তারাই তো সংবিধানকে পদদলিত করেন।’ নোটবন্দির প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের গণতন্ত্র সেই সময়েই খুন হয়েছিল। যখন, নোট বদলানোর জন্য মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল। কত প্রাণ গিয়েছে। তা হলে সেই দিনটিকে কেন ‘ব্ল্যাক মানি ডে’ ঘোষণা করা হবে না? সেই সময় যে পরিমাণ অপমান, বঞ্চনা, কষ্ট এই দেশের সাধারণ মানুষ সয়েছেন, তারও তো জবাবদিহি হওয়া উচিত।’

সাম্প্রতিক পহেলগাঁও হামলার প্রসঙ্গ টেনে মমতা জানান, সেই সময় সংসদের বিশেষ অধিবেশনের দাবি জানানো হয়েছিল। তাঁর দল ৫টি প্রশ্ন তোলে। কিন্তু আজ পর্যন্ত একটি প্রশ্নেরও উত্তর দেওয়া হয়নি। ‘কত বার সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু একটা দিনও কি সন্ত্রাসবিরোধী দিবস পালিত হয়েছে ?’— প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর। বাংলার প্রশাসনিক প্রধান এরপর সরাসরি মোডি-শাহ জুটিকে নিশানা করেছেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দেশ কার্যত চলছে একজন ‘অঘোষিত প্রধানমন্ত্রী’-এর নির্দেশে। তাঁর বক্তব্য, ‘নরেন্দ্র মোদী তো সর্বক্ষণ বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়ান। দেশের বাকি সব কিছু অমিত শাহের হাতে। তা হলে সরাসরি তাঁকেই প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করে দেওয়া হোক না। বাস্তব তো তেমনটাই বলছে।’ এখানেই থেমে থাকেননি মুখ্যমন্ত্রী। জরুরি অবস্থার ৫০ বছর ২০২৪ সালে পূর্ণ হয়ে গিয়েছে, অথচ ২০২৫ সালে ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ পালনের তোড়জোড় কেন? তাঁর মতে, এটি নিছকই রাজনৈতিক চাতুর্য।

‘বাংলা দিবস’ পালনের কেন্দ্রীয় উদ্যোগকে কটাক্ষ করে মমতার প্রশ্ন, ২০ জুন কেন বেছে নেওয়া হল ? তিনি বলেন, ‘এই দিনেই তো বাংলাকে ভাগ করার আইন পাস হয়েছিল। বাংলা পাকিস্তানের সঙ্গে যাবে, আর বাকি ভারত ভারতের সঙ্গে থাকবে— এমনই সিদ্ধান্ত হয়েছিল সেই ২০ জুন। এটাই কি বাংলার গৌরবের দিন হতে পারে ? বাংলা দিবস পালনের অধিকার বাংলার, তা ঠিক করবে বাংলা সরকার। ১ বৈশাখের চেয়ে ভালো দিন আর হতে পারে না।’ এর পাশাপাশি, ১০০ দিনের কাজের অর্থ না মেলার প্রসঙ্গে কেন্দ্রকে ফের তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন মমতা। তাঁর দাবি, ‘৪ বছর হয়ে গেল কেন্দ্র এক পয়সাও দেয়নি। অথচ মানুষকে দিয়ে কাজ করানো হয়েছে। রাজ্য সরকার নিজের টাকায় সেই বকেয়া মেটাচ্ছে। ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্প চালু হয়েছে রাজ্যের অর্থে।’ তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ‘যেদিন থেকে টাকা বন্ধ করা হয়েছে, সেই দিন থেকে হিসেব করে এক টাকাও বাকি না রেখে ফিরিয়ে দিতে হবে।’

এদিন তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের অভিযোগও। তাঁর দাবি, কেন্দ্র সমান্তরাল প্রশাসন তৈরির চেষ্টা করছে। নির্বাচিত সরকারকে উপেক্ষা করে মনোনীত রাজ্যপালের মাধ্যমে প্রশাসন চালানোর চেষ্টা করছে। প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, ‘রাজ্যপাল যদি সব কিছু চালান, অমিত শাহকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রপতি যদি সরকারি কাজ করেন, তা হলে কি কেন্দ্র মেনে নেবে ?’ কলকাতা হাই কোর্টের সাম্প্রতিক রায় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ওবিসিদের সংরক্ষণ নিয়ে আদালতের অন্তর্বর্তী রায় চূড়ান্ত নয় বলেই তিনি মনে করেন। বলেন, ‘আমরা সর্বদা আদালতের নির্দেশ মেনেই কাজ করেছি। তবে সিপিএম আর বিজেপি কখনওই ওবিসিদের সংরক্ষণ চাইত না। কারণ এটি গরিব মানুষের অধিকার, পিছিয়ে পড়া মানুষদের মর্যাদা।’ শাসকদলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের মন্তব্যকে ঘিরেও চর্চা শুরু হয়েছে। বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার নামোল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, তাঁর নিরপেক্ষতা নিয়েও লাগামছাড়া তোপ দেগেছেন। কুণালের অভিযোগ, ‘বিচারপতি মান্থা আগেও এমন কিছু রায় দিয়েছেন যাতে শুভেন্দু অধিকারী সুবিধা পেয়েছেন। আজকের রায়েও তাঁর নাম যুক্ত থাকায় সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।’ মুখ্যমন্ত্রী নিজে বিচারপতিকে নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য না করলেও তিনি পরোক্ষে বুঝিয়ে দিয়েছেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশে ন্যায়বিচারও যে প্রশ্নাতীত নয়, সেই সন্দেহ ক্রমেই দৃঢ় হচ্ছে।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!