- এই মুহূর্তে দে । শ
- আগস্ট ৩১, ২০২২
মারা গেলেন গ্লাসনস্ত ও পেরেস্ত্রৈকার জনক মিখাইল গর্বাচেভ।
মারা গেলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।

চিত্র সংগৃহীত
মারা গেলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। দীর্ঘ রোগভোগের পর মঙ্গলবার সন্ধেয় মস্কোর একটা হাসপাতালে মৃত্যু হয় নোবেলজয়ী সোভিয়েত ইউনিয়েনের প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের। গর্বাচেভের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন৷
১৯৩১ সালের ২ মার্চ রাশিয়ান এবং ইউক্রেনীয় বংশোদ্ভূত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মিখাইল গর্বাচেভ। জন্মের সময় থেকেই পরিবারকে সংগ্রাম করতে দেখেছিলেন। ১৫ বছর বয়সে একটি কম্বাইল হারবেস্টার পরিচালনা শুরু করেন। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম তাঁকে একটি সরকারি পুরস্কার এনে দেয়। মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে আইনের ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭১ সালে গর্বাচেভ কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হন।
১৯৭৮ সালে তিনি তাঁর স্ত্রী রাইসা ও কন্যা ইরিনাকে নিয়ে মস্কো চলে আসেন। তিনি তখন লক্ষ্য করেছিলেন অস্ত্রের প্রতিযোগিতা সোভিয়েত অর্থনীতিকে শুষ্ক করে দিয়েছে। সোভিয়েত নেতা লিওনিড ব্রেজনেভ ১৯৮২ সালে মারা যাওয়ার পর আরও দুই প্রবীণ নেতার মৃত্যু হয়। তারপরই ১৯৮৫ সালে গর্বাচেভ কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এবং তিনি হয়ে ওঠেন সোভিয়েত নেতা। তিনিই ছিলেন গ্লাসনস্ত ও পেরেস্ত্রৈকার জনক।
ঠান্ডা যুদ্ধ পর্বে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে দারুণ প্রভাব বিস্তার করেছিলেন মিখাইল গর্বাচেভ। পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানিকে মিলিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে মূলত তাঁকেই কৃতিত্ব দেওয়া হয়। দ্বিতীয় যুদ্ধের পর ৪ দশক ধরে চলেছিল ঠান্ডা লড়াই। ঠান্ডা লড়াই চলাকালীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমী শক্তিধর দেশগুলির সঙ্গে নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি করার সাহস দেখিয়েছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের এই প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। যে চুক্তির ফলে ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসান ঘটে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগানের সঙ্গে ঐতিহাসিক পরমানু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি সই করার ঠান্ডা যুদ্ধের অবসান হয়। এই চুক্তি মার্কিন–সোভিয়েত সম্পর্ককে উন্নতি করে। ঠান্ডা যুদ্ধ অবসানে অবদানের জন্য মিখাইল গর্ভাচেভকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমানু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তির ফলে সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্বের অন্যতম প্রধান শক্তিধর দেশের তকমা হারিয়ে ফেলে। ফলে দেশবাসী তাঁকে অন্য চোখে দেখতে শুরু করে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে দারুণ প্রভাব থাকলেও সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙন রোধ করতে পারেননি।
১৯৮০–র দশকের শেষদিকে নিজেকে মহাশক্তিধর হিসেবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন।
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে জোশেফ স্ট্যালিনের যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে নিজেকে প্রতিপন্ন করেছিলেন মিখাইল গর্বাচেভ। গোটা সোভিয়েত ইউনিয়নকে একসূত্রে বেঁধে দিয়েছিলেন। মুক্ত প্রজাতন্ত্রের অটুট মিলন কেমন হতে পারে, দেখিয়ে দিয়েছিলেন গর্বাচেভ। তবুও ধরে রাখতে পারেননি সোভিয়েত ইউনিয়নকে। ১৯৮৯ সাল। প্রতিবাদের ঝড় ওঠে কমিউনিস্টপন্থী পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েত শাসনের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলিতে। রাশিয়া ও ১৪টি সদ্য স্বাধীন দেশ রাজনৈতিক উত্থানের পথ বেছে নিয়েছিল। গর্বাচেভের সঙ্গে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বরিস ইয়েলৎসিনের লড়াই তীব্র হয়ে উঠেছিল।
সোভিয়েত ইউনিয়নে আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠলেও অত্যাচারের পথে হাঁটেননি গর্বাচেভ। চাইলেই নিজের পূর্বসূরীদের মতো শক্তি প্রয়োগ করতে পারতেন, বন্ধ করে দিতে পারতেন সমস্ত আন্দোলন। তা করেননি তিনি। ফলে সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৫টি ভাগে ভেঙে যায়। পতন রুখতে ব্যর্থ হন গর্বাচেভ৷ ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যেতেই পদত্যাগ করেন গর্বাচেভ৷
❤ Support Us