Advertisement
  • এই মুহূর্তে দে । শ
  • এপ্রিল ২৫, ২০২৫

আদালত অবমাননার দায়ে গ্রেফতার বরিষ্ঠ সমাজকর্মী মেধা পাটেকর

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
আদালত অবমাননার দায়ে গ্রেফতার বরিষ্ঠ সমাজকর্মী মেধা পাটেকর

গ্রেফতার নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের পুরোধা, বরিষ্ঠ সমাজকর্মী মেধা পাটেকর। দিল্লি এলজি ভি.কে. শাক্সেনার করা ২৪ বছর পুরনো মানহানির মামলায় গত শুনানিতে এক বছরের জন্য অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করেছিল আদালত। তবে প্রবেশন বন্ড দাখিল না করায় এবং আদালতের নির্দেশনা মান্য না করায় ২৪ এপ্রিল আদালত তাঁর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য পরোয়ানা জারি করে। যার ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার পরবর্তী শুনানি ৩ মে।

২০২৩ সালের মে মাসে, দিল্লির ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পাটেকরের বক্তব্য মানহানিকর বলে রায় দেয় এবং তাঁকে পাঁচ মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে। তবে, বিচারক বিশাল সিং ২০২৪ সালের ২৯ জুলাই তাঁর সাজা স্থগিত করে জামিন মঞ্জুর করেন। এ বছর ৮ এপ্রিল দিল্লির সাকেত আদালতে মামলার শুনানির সময়, অতিরিক্ত দায়রা বিচারক বিশাল সিং সমাজকর্মী পাটেকরের এক বছরের প্রবেশন মঞ্জুর করেন। বিচারক রায়ে জানান, মেধা পাটেকর তাঁর সমাজসেবামূলক কাজের জন্য বহু পুরস্কার পেয়েছেন। বর্তমান মামলার অপরাধটি তাঁর জেল হেফাজতের জন্য পর্যাপ্ত নয়। তবে প্রবেশন বন্ড দাখিল না করা আর ১ লক্ষ টাকা জরিমানা জমা না করা এবং আদালতের নির্দেশনা অমান্য করার অভিযোগে ২৪ এপ্রিল আদালত মেধা পাটেকরের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য পরোয়ানা জারি করে আদালত। শুক্রবার তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে দিল্লি পুলিশ। মামলার পরবর্তী শুনানি ৩ মে।

জানা যাচ্ছে, এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার দিল্লির এক আদালত মেধা পাটেকরের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য পরোয়ানা জারি করে। এর আগে দিল্লি হাইকোর্ট মেধা প্রোবেশন বন্ড কার্যকর করার জন্য আদালতের কার্যক্রম দুই সপ্তাহ স্থগিত রাখার আবেদন করেছিলেন। বিচারপতি সে আবেদন খারিজ করে দিয়ে তাঁকে ট্রায়াল কোর্টে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। এরপরেও তিনি আদালতের নির্দেশ অমান্য করেছেন, হাজিরা দেননি, প্রবেশন বন্ডও জমা দেননি। এল জি সাক্সেনার আইনজীবী গজেন্দ্র কুমার অভিযোগ করেন, পাটেকার ইচ্ছাকৃতভাবে আইনি দায়িত্ব এড়িয়ে চলছেন। আদালত পাটেকরের করা মুলতুবি আবেদনকে ‘প্রতারণামূলক ও ভিত্তিহীন’ বলে অভিহিত করেছে এবং সতর্ক করেছে যে পরবর্তী শুনানিতে তিনি যদি সহযোগিতা না করেন, তবে তাঁর সাজা পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে।

মামলার সূত্রপাত ২ দশক আগে। ২০০০ সালে ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ সিভিল লিবার্টিজের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ভি কে সাক্সেনা। এ সময় এনবিএ পাটকরের নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন-এর বিরুদ্ধে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিলেন। তার প্রতিক্রিয়া হিসাবে মেধা পাটেকর একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিলেন। যার শিরোনাম ছিল ‘একজন দেশপ্রেমীর সত্যি কথা – বিজ্ঞপ্তির প্রতিক্রিয়া’। যেখানে তিনি দাবি করেছিলেন, হাওয়ালার মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচারের সঙ্গে যুক্ত সাক্সেনা। সে সময় সাক্সেনার নেতৃত্বাধীন এনজিও গুজরাট সরকারের সর্দার সরোবর প্রকল্পের পক্ষে সক্রিয়ভাবে প্রচার চালাচ্ছিল, যার তীব্র বিরোধিতা করেছিল এনবিএ। একই সঙ্গে পাটেকর অভিযোগ তোলেন, সাক্সেনা এনবিএ-কে একটি চেক দিয়েছিলেন, যা পরবর্তীতে বাউন্স করে। লালভাই গ্রুপের সঙ্গে তাঁর কী সম্পর্ক আছে, তাঁদের মধ্যে কে বেশি দেশপ্রেমী? প্রশ্ন তোলেন মেধা। দিল্লির বর্তমান লেফটেন্যান্ট গভর্নরকে গুজরাট সরকারের ‘এজেন্ট’ বলেও অভিহিত করেছিলেন তিনি। পাটেকরের দাবিতে ‘ব্যথিত’ সাক্সেনা ২০০১ সালে আমদাবাদের একটি আদালতে প্রবীণ সমাজকর্মীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০০৩ সালে মামলাটি দিল্লিতে স্থানান্তরিত হয়।

পরবর্তীতে সেক্সেনা ২০০১ সালে আহমেদাবাদে পাটকরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন, মেধা তাঁকে ‘ভীতু’ বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং হাওয়ালা লেনদেনে তাঁর জড়িত থাকার মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন। আদালতে মামলা দায়ের হয়। যা সম্প্রতি রায় পর্যন্ত গড়ায়। ২০২৩ সালে মে মাসে, দায়রা আদালতের বিচারপতি রাঘব শর্মা, মেধাকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেন। সাক্সেনা দাবি করেছিলেন, মেধার কর্মকাণ্ডে তাঁর সম্মান ক্ষুণ্ণ হয়েছে এবং তিনি যে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছিলেন তা মিথ্যা ও অপমানজনক ছিল। এছাড়াও, মেধার বিরুদ্ধে টেলিভিশন চ্যানেলে আপত্তিকর মন্তব্য ও মানহানিকর বিবৃতি দেওয়ার অভিযোগে দুটি মামলা দায়ের করেন। যদিও মেধা তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগ তুলে প্রতিকার চেয়েছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আদালত মেধার বিরুদ্ধে রায় দেন এবং তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেন।

মেধা পাটকর, নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের নেত্রী, বড়ো মাপের উন্নয়ন প্রকল্পের বিরুদ্ধে তাঁর প্রতিবাদী অবস্থানের জন্য পরিচিত। তিনি যুক্তি দেন, এই ধরনের প্রকল্প আদিবাসী গ্রামবাসীদের উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্র, বিশাল বনভূমি ও কৃষিজমি ধ্বংসের কারণ। অহিংস প্রতিরোধের জন্য পরিচিত পাটকর বহুবার গ্রেফতার ও শারীরিক আক্রমণ আর দীর্ঘ অনশনসহ নানা ধরণের যন্ত্রণা আর নিপীড়ন সহ্য করে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!