- খাস-কলম
- জুলাই ১০, ২০১৯
আলকায়দার বিপজ্জনক উসকানি
কাশ্মীর সমস্যায় সরাসরি নাক গলাচ্ছে আল কায়দা আর ‘ইসলামিক স্টেট। সম্প্রতি আলকায়দায় প্রধান আইমান আল্ জাওয়াহিরি বিবৃতি ছড়িয়ে বলেছেন, ‘কাশ্মীরকে ভুলবেন না’।’আস্ সাহাব’-এ প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাওয়াহিবির নির্দেশ,কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে আঘাত হানতে হবে। এই জঙ্গি অভিযানের লক্ষ্য হোক ভারতীয় অর্থনীতি। ভারতের সামরিকও অসামরিক প্রতিষ্ঠানে হামলার নেতৃত্ব নিতে কাশ্মীরি মুজাহিদের।
আল কায়দা কাশ্মীরে ‘আনসার গুয়াহত অল্ হিন্দ’ (আই.জি.এইচ.) নামে শাখা সংগঠন গড়ে তুলেছে। এর দায়িত্বে ছিল জাকির মুসা। মুসার মৃত্যুর (সঙ্ঘর্ষে) পর শাখা পরিচালনার নেতৃত্ব এসেছে আব্দুল হামিদ লেহারি। লেহারি স্বীকার করেছে, তাদের পেছনে পাকিস্তানের ইন্ধন রয়েছে। জাওয়াহিরি অবশ্য অভিযোগ করেছেন, পাকিস্তান বিশ্বাসযোগ্য নয়। পাকিস্তানের সেনা ও সরকার মার্কিন গোয়েন্দাদের নির্দেশে পরিচালিত। আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত সেনা প্রত্যাহারের পর পাকিস্তান কাশ্মীরে ‘আরব মুজাহিদিনদের’ ঢুকতে দেয়নি। ১৯৯৮ সালে মার্কিন দূতাবাসে বোমা হামলার পর আলকায়দার সঙ্গে আই এস আই-এর সঙ্গে আলকায়দার দূরত্ব বেড়ে যায়। এর আগে ওরাই আফগানিস্তানে কাশ্মীরি জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল। মার্কিন চাপে পাকিস্তান হাত গুটিয়ে নেয়।
আলকায়দা কাশ্মীর, ফিলিপনস, চেচনিয়া, মধ্য এশিয়া,ইরাক, সিরিয়া, সোমালিয়া, তুরস্কসহ বহু দেশে তথাকথিত ধর্মযুদ্ধকে শুধু সমর্থনই নয়, অস্ত্রও জোগায়। বিশ্বজুড়ে তারা ধর্মীয় রাষ্ট্র গড়তে চায়। পাকিস্তানি সাংবাদিক হামিদ মির কয়েক বছর আগে খবর করেছিলেন, আলকায়দা কাশ্মীর দিয়ে ঢুকছে। তাদের যুদ্ধের মানচিত্র পশ্চিম থকে পূর্ব ভারত পর্যন্ত বিস্মৃত। আমাদের অনুমান, বাংলাদেশেও ঢোকার চেষ্টা করেছে। পারেনি। হাসিনা সরকারের ‘জিরো টলারেন্স টেররিজম’ নীতির জন্য হালে পানি পায়নি।
জেএমবি-র সঙ্গে তাদের যোগসূত্র আছে। ওদের সহযোগিতা ও মদতে পষ্চিমবঙ্গ ও অসমে শাখা বিস্তারের চেষ্টা করে। জে এম বি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ। চট্টগ্রাম, খুলনা রাজশাহিতে জামাতের ইসলামি শিবিরের মতো ওদের কোমর গুড়িয়ে দিয়েছে ঢাকা। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে গোপন পথে ভারতে প্রবেশ করলেও ভারতীয় সমাজের প্রত্যাখান আর দিল্লির কঠোর সার্থকতায় ওরা নাস্তানাবুদ। নিষিদ্ধ মুজাহিদুন আল হিন্দের (সিনির রূপান্তরিত সংগঠন বলে সন্দেহ) সঙ্গে আঁতাত গড়ে তোলার প্রয়াস চালায়। এ প্রয়াসও ব্যর্থ। তবু হাল ছাড়েনি। কাশ্মীরি মুজাহিদিনরাই এখন ওদের ভরসা। এখানেও সাফল্য নিয়ন্ত্রিত।প্রথমত সামাজিক ভিত তৈরি করতে পারেনি। দ্বিতায়ত, পাকিস্তান বাধ্যতামূলকভাবে ওদের আমল দিচ্ছে না। দিলে আর্ন্তজাতিক মঞ্চে আরও কোনঠাসা হয়ে পড়বে।
তৃতীয়ত, কাশ্মীরের হিজব-মুজাহিদি,ও অন্যান্য জঙ্গিসংগঠন যারা বৃহত্তর কাশ্মীরকে নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র গড়তে অঙ্গিকারবদ্ধ, তারা ওদের এলাকায় বিদেশি আলকায়দা অথবা আইএসে এর উপস্থিতি ও দৃষ্টিভঙ্গিকে ঘোলাজলে মাছ ধরার অভিসন্ধি ভাবছে।
একারণেই সুপুর, বারামুলা ও পুলওয়ামায় পরস্পর বিরোধী জঙ্গিদের সঙ্ঘর্ষ দেখা যাচ্ছে। জঙ্গিদের একাংশের রটনা, এইধরনের পরস্পরবিরোধী আঘাত-প্রত্যাঘাত ভারতীয় গোয়েন্দ-র-এর ‘ষড়যন্ত্র’। কিন্তু বাস্তব সত্য এই যে, আলকায়দার কাশ্মীরি শাখার ধীর উত্থানে উপত্যকায় হিজবুল মুজাহিদিনের প্রভাব ক্রমশ লঘু হয়ে উঠছে। জেহাদমুখর ‘আজাদির লড়াই-এর পূর্বআবেগ আর জেদ ফিরিয়ে আনতে বিদেশি আলকায়দার স্বদেশি বিরাদদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। সম্ভবত এই কারণেই আলকায়দা প্রধান আলজাওয়াহিরিকে বিবৃতি ছড়িয়ে বলতে হল, কাশ্মীরকে ভুলে যাওয়া চলবে না। তাঁর বিবৃতির দ্বিতীয় কারণ, ইরাকের আবু বক্কর আলবাগদাদির আই-এস-র দখলে চলে গেছে সাধের ধর্মযুদ্ধ। ইরাক থেকে সিরিয়া —গোটা ‘ক্রিসেন্টএলাকা’ জুড়ে বিস্মৃত ওদের আধিপত্য। বহু আলকায়দা সদস্য আই এস এ যোগ দিয়েছেন। তৃতীয়ত, কাশ্মীরকেও টার্গেট করেছে ইরাকের স্বঘএাষিত খালিফা আলবাগদাদির প্রভাব রুখতেই আলকায়দার আলজাওয়াহিরি কাশ্মীরসহ সন্ত্রাস- উপদ্রুত বহুভূখণ্ডকে ঘিরে বিশ্বজেহাদের ডাক দিয়েছেন। স্বেচ্ছায় পাক-ভারত উপমহাদেশে কিছু কিছু অতিউৎসাহী নিজেদের আই এস কিংবা আলকায়দার যোদ্ধাঙ্গ বলে দাবি করলেও বৃহত্তর সমাজ কী পাকিস্তানে, কী বাংলাদেশে, কী ভারতে ধর্মযোদ্ধাদের আহ্বানকে অবাস্তব,হাস্যকর বলে উড়িয়ে দিচ্ছে। এরকম সশস্ত্র কিংবা চিন্তার সন্ত্রাস, যে ভয়ঙ্কর বিপদ ডেকে আনবে, আনছে এব্যাপারে তারা অতন্দ্র প্রহরীর মতো সতর্ক।
এমনকী, যারা রামের নামে, গোমাতার নামে এখানে-ওখানে প্রহার চালিয়ে পরিস্থিতিকে ক্রমাগত জটিল করে তুলছে, তাদের বিরুদ্ধেও সোচ্চার আমাদের বিবেক, আমাদের যুক্তিবোধ এবং বহুমাত্রিক ঐতিহ্যের বলিষ্ঠ উত্তরাধিকার। এক্ষেত্রে পশ্চিম বাংলা আর বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে অনুকরণযোগ্য দুই দিশারি । যেমন গঠনশীল রাজনীতিতে, তেমনি রাজনৈতিক অঙ্গনের বাইরে, আলোকিত চৌহদ্দির সর্বত্র।
❤ Support Us