Advertisement
  • এই মুহূর্তে দে । শ
  • সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫

পুজোর শহরে ডেঙ্গির প্রকোপ ! জ্বর কমলেই স্বস্তি নয়, উদ্বিগ্ন কলকাতা পুরসভা

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
পুজোর শহরে ডেঙ্গির প্রকোপ ! জ্বর কমলেই স্বস্তি নয়, উদ্বিগ্ন কলকাতা পুরসভা

আনন্দ, আলো আর ভিড়ের দুর্গাপুজোর মরসুম মেতে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে আপামর বাঙালি। আর ঠিক তখনই রাজ্যে বাড়ছে ডেঙ্গির থাবা। কলকাতার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নতুন করে সংক্রমণের খবর মিলছে রোজ। কলকাতা পুরসভার সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শহরে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০৯। এর মধ্যে গত এক সপ্তাহেই নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৭৪ জন। গত বছরের তুলনায় এ সংখ্যা অনেকটাই বেশি, ২০২৪ সালের এ সময় পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩৭০।

বর্ষা কিছুটা কমলেও ডেঙ্গির প্রকোপ থামেনি। পুর প্রশাসনের কপালে ভাঁজ ফেলেছে এই ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফ। পুজোর আগে মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরা, বাজারে ও প্যান্ডেলে ভিড়, তাপমাত্রার ওঠানামা ও বৃষ্টির রেশ, সব মিলিয়ে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা স্বাস্থ্য আধিকারিকদের। বিশেষজ্ঞদের মতে, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ডেঙ্গির সবচেয়ে সক্রিয় সময়। ফলে প্রতিটি নাগরিকের সতর্ক হওয়া এখন অত্যন্ত জরুরি। ডেঙ্গি মানেই শুধু জ্বর নয়। বরং চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গির সবথেকে বিপজ্জনক পর্যায় শুরু হয় জ্বর কমার পরে। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অরুণাংশু তালুকদার জানিয়েছেন, ‘ডেঙ্গি জ্বর সাধারণত ৩ থেকে ৭ দিন থাকে। কিন্তু তার পরের ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই সময়েই শরীরে তরলের ভারসাম্য গণ্ডগোল করে। ফুসফুস, লিভার, এমনকি হৃদ্‌যন্ত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অসাবধানতা মারাত্মক হতে পারে।’ ডেঙ্গি আক্রান্তদের ক্ষেত্রে প্রথমে শরীর থেকে জল বেরিয়ে যায়। কয়েক দিন পরে সেই জল ফের কোষে ফিরে আসে। এ অবস্থায় যদি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি স্যালাইন দেওয়া হয়, তাহলে তা উল্টে ক্ষতি করতে পারে। রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে হৃদ্‌যন্ত্রে চাপ পড়ে, হৃদ্‌রোগ পর্যন্ত হতে পারে। তাই কখন স্যালাইন দিতে হবে, আর কখন তা কমাতে হবে—সে বিষয়ে চিকিৎসকের নির্দেশ মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।

অনেকেই ডেঙ্গি ও সাধারণ ভাইরাল জ্বরের মধ্যে ফারাক করতে পারেন না। ফলে ভুল চিকিৎসার সম্ভাবনা তৈরি হয়। চিকিৎসক রণবীর ভৌমিক জানাচ্ছেন, ডেঙ্গির জ্বরেও শরীরে তীব্র ব্যথা, মাথা ঘোরা, চোখের পিছনে চাপ, হালকা শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। ৩ দিনের বেশি জ্বর থাকলে, সঙ্গে শরীর ভেঙে পড়লে অবশ্যই রক্ত পরীক্ষা করানো উচিত। এনএস১ অ্যান্টিজেন টেস্ট, আইজিএম ও আইজিজি অ্যান্টিবডি টেস্ট, এবং এনএএটি পরীক্ষা করে নির্ধারণ করা সম্ভব ডেঙ্গি হয়েছে কি না। ডেঙ্গি ধরা পড়লে রোগীকে আইসোলেট করাও গুরুত্বপূর্ণ। না হলে সংক্রমণ আরও ছড়াতে পারে বলে সতর্ক করছেন চিকিৎসকেরা।

ডেঙ্গি সংক্রমণ রুখতে তৎপর হয়েছে কলকাতা পুরসভা। মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানাচ্ছেন, বৃষ্টি কমলেও ঢিলেমি করার সুযোগ নেই। তাঁর নির্দেশে পুরসভার যৌথ টিম শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে বাড়তি নজরদারি চালাচ্ছে। নির্মীয়মাণ ভবন, ছাদ, লিফটের নিচে, যেখানে জল জমে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, সে সব জায়গায় অভিযান চলছে। মাইকিং, সচেতনতা প্রচার ও লার্ভা ধ্বংস অভিযানও শুরু হয়েছে। শহরজুড়ে চলছে সচেতনতা প্রচার, মাইকিং, লার্ভা ধ্বংস অভিযান। মেয়রের কথায়, ‘শীত না আসা পর্যন্ত ডেঙ্গু থাকবে। এখনই সময়, প্রত্যেকে সচেতন হন, নিজের চারপাশ পরিষ্কার রাখুন।’ চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গি হলে রোগীর শরীর যাতে জলের অভাবে না ভোগে, সে দিকে নজর দিতে হবে। ডাবের জল, লেবু জল, স্যুপ বা তরল খাবার খাওয়ানো উচিত। খেতে না পারলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে স্যালাইন দিতে হবে। তবে ভুল করেও অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়ানো যাবে না। রক্তপাতের আশঙ্কা বেড়ে যায়। প্যাকেটজাত জুস বা রাসায়নিকজাত হেলথ ড্রিঙ্ক এড়িয়ে চলতে হবে। যদি দেখা যায় রোগীর রক্তচাপ কমে যাচ্ছে, পালস রেট বেড়ে যাচ্ছে, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাচ্ছে কিংবা শরীরের কোথাও থেকে রক্তপাত শুরু হয়েছে, তবে আর দেরি না করে তাঁকে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। এ পর্যায়ে এক মুহূর্তও সময় নষ্ট করা ঠিক নয়।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!