- Uncategorized দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- এপ্রিল ২৬, ২০২৩
পেট খালি থাকলেই ঈশ্বরের সাক্ষাত ! কেনিয়ায় ম্যাকেঞ্জির মগজধোলাইয়ের খামার। স্বেচ্ছায় না খেয়ে মৃত ৭৩
অন্ধ বিশ্বাস মানুষকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে কেনিয়ার একটি ঘটনা তার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ। এক যাজকের কথায় যিশুর সঙ্গে দেখা করার অভিলাষে অভুক্ত থেকে শেষ পর্যন্ত প্রাণ হারান ৭৩জন মানুষ। শেষ পর্যন্ত ওই যাজক ধরা পড়েছে, তবে জামিনে মুক্তিও পেয়েছে।
গত সপ্তাহ থেকে এপর্যন্ত, কেনিয়া পুলিশ সে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে, ৭৩ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। এরা প্রত্যেকেই যীশুর সঙ্গে সাক্ষাতের ইচ্ছায় অভূক্ত থেকেছেন দীর্ঘ দিন। স্থানীয় প্রশাসন যদিও নিছক মনোবাঞ্ছা পূরণের ঘটনা বলে বিষয়টিকে দেখতে রাজি নয়, বরং এটা একটি পরিকল্পিত “হত্যাকান্ড” বলেই মনে করছেন তারা।যার মাস্টার মাইন্ড যাজক পল ম্যাকেঞ্জি। তিনি গুড নিউজ ইন্টারন্যাশনাল চার্চের একজন বিতর্কিত প্রচারক। এই যাজকই মগজ ধোলাই করেছিলেন তাঁর ভক্তদের। শিক্ষা দিয়েছিলেন, তাদের “পার্থিব জীবন” ত্যাগ করতে। “যীশুর সাথে দেখা করার জন্য” যাজকের ব্যক্তিগত খামারে নিয়ে আসা হয়েছিল ওই প্রতারিত মানুষদের।
কে এই ম্যাকেঞ্জি?
২০০৩ সালে কেনিয়ার উপকূলীয় শহর মালিন্দিতে গির্জা তৈরি করে নিজের পসার জমাতে শুরু করেন এই বুজরুক। প্রথমেই শিশুদের ওপর প্রভাব জমাতে শুরু করেন ধর্ম যাজকের ভেকধারী ম্যাকেঞ্জি।ছোটদের স্কুল বিমুখ করতে শুরু করেন নানা ছল চাতুরী।ম্যাকেঞ্জি, প্রায়শই দাবি করতেন যে তিনি একজন ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা । তার ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা রয়েছে এবং তিনি যীশুর আবির্ভাব দেখেছেন। আনুষ্ঠানিক শিক্ষার বিরোধিতা নিয়ে তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগও জমা হয় স্থানীয় প্রশাসনের কাছে।ধর্মের জিগির তুলে বিতর্ক বন্ধের চেষ্টা শুরু করেন তিনি । ২০১৯এ তার বুজরুকি প্রকাশ্যে চলে আসায়, রাতারাতি চার্চের ঝাঁপ গুটিয়ে সাঙ্গপাঙ্গদের শাকাহোলায় গা ঢাকা দেন এই প্রতারক। তার বিরুদ্ধে শুরু হয় পুলিশি তদন্ত।
নিখোঁজ ম্যাকেঞ্জির খোঁজ করতে করতে একসময় শাকাহেলায়, তাঁর গোপন ডেরার খোঁজ পায় পুলিশ। সেখানে জোড় করে আটক ১৬জনকে উদ্ধার করে তারা। এরা প্রত্যেকেই ছিলেন দীর্ঘ দিনের অভূক্ত। হাসাপাতালে পৌঁছানোর আগেই মৃত্যু হয় চারজনের।ম্যাকেঞ্জির গোপন ডেরায় তল্লাশি চালিয়ে গণ কবরের সন্ধান পায় কেনিয়ার পুলিশ।তার উদ্ধার করেন ৭৩টি মৃতদেহ। অর্ধমৃত অবস্থায় আরো ৬৬ জনকে উদ্বার করেছে পুলিশ।পুলিশের অনুমান মৃত ও অপুষ্টিতে জীবন্মৃতের সংখ্যাটা আরও বেশি হবে।অঞ্চল সংলগ্ন বাসিন্দারা জানিয়েছেন ম্যাকেঞ্জির মগজধোলাই খামারে প্রায় ৩০০ লোক বসবাস করত।তারা জানিয়েছেন ঈশ্বরের রোষ আর সর্বনাশের ভয় দেখিয়ে দুর্বল চিত্তদের নিজেদের বসে আনতেন ওই প্রতারক।বলতেন ক্ষুধার্তদের সঙ্গেই একমাত্র সাক্ষাত করেন যীশু। তার নিয়মের অন্যথা হলেই কিংবা চক্রব্যূহ থেকে কেউ পালানোর চেষ্টা করলেই নির্মম ভাবে তাদের হত্যা করতেন তিনি।
পুলিশ জানিয়েছে, ম্যাকেঞ্জি তার অনুগামীদের বলেছিলেন যে তারা যদি একত্রিত হয়ে উপবাস করলেই তাদের উপবাসের স্থান হিসাবে তার খামারের জায়গা দেওয়া হবে। তারা যদি স্বর্গে যেতে চায়, তাহলে তাদের “বাইরের” জগতের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে দিতে হবে। এমনকি ওই যাজক তার অনুগামীদের সে দেশের সরকারের দেওয়া জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জন্ম শংসাপত্র সহ সরকারের দেওয়া সমস্ত নথি নষ্ট করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।গত মার্চে পুলিশের জালে ধরা আটক হন ওই প্রতারক, কিন্তু টাকার বিনিময়ে সাজা এড়িয়ে জামিন পান ম্যাকেঞ্জি। এর আগেও শিশু হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।আদালতে চলছে আরো দুটি মামলা।কিন্তু শাল্তি পাননি প্রতারক ম্যাকেঞ্জি।
❤ Support Us