Advertisement
  • পা | র্স | পে | ক্টি | ভ রোব-e-বর্ণ
  • জুন ১, ২০২৫

পথ ভুবনের দিনলিপি। পর্ব ৭

ময়ূরী মিত্র
পথ ভুবনের দিনলিপি। পর্ব ৭

 
বাচ্চাটা রিক্সায়৷ মায়ের পাশে বসে৷ যাচ্ছে স্কুলে – চোখে ভ্রমণের আনন্দ৷
ছোট্ট ছোট্ট অঙ্গ নাচিয়ে হাসছিল৷ মায়ের পাশে বসে মাথা উঁচু করে আকাশ দেখছিল৷ আকাশে রোদের ঘুরে বেড়ানো দেখছিল৷ঘুড়ি পাখি ওড়া দেখছিল৷ আরো যে কী তা ওই জানে৷স্কুল যেতে শিশুর এতো আনন্দ ইদানিং কালে দেখিনি৷ মনে হচ্ছিল প্রকৃতি, পথচারী মানুষ ও স্কুলকে একই আনন্দের সুতোয় বেঁধেছে জব্বর করে৷ শুনেছি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তাঁর স্কুলে যাবার পথটুকু এমনই মন দিয়ে অনুভব করতেন৷               
 
দেখছিলাম৷ নাগেরবাজারের পাড়ার রাস্তায়ও এতো গাড়ি চলে যে রিক্সা ও রাস্তার মানুষের একই গতি৷ আমি প্রায় রিক্সাটার সঙ্গেই চলছিলাম৷ বাচ্চার পড়তে যাবার খুশিয়ালিতে কখনো বহুত জোরে হাঁটছিলাম৷ জ্যান্ত ঈশ্বরের পিছে ছুটছিলাম৷ হঠাৎ ফুটপাথের ওপরই ব্রেক কষল রিক্সা৷ রিক্সাওয়ালা যখন বাচ্চা কোলে নিয়ে নামাচ্ছেন, তখন দেখলাম বাচ্চার এক পা নেই৷ একপাশে এক পায়ে দাঁড়িয়ে সবে যখন একটুখানি হিসু করেছে কি করেনি, কজন পথচারী ঝগড়া শুরু করলেন মায়ের সঙ্গে৷ রিক্সা কেন ফুটপাথের ওপর থেমে বাকিদের অসুবিধে ঘটাচ্ছে ! মা বার বার বলতে লাগলেন, তাঁর ছেলে পায়ের ও অন্যান্য সমস্যার জন্য হিসু ধরে রাখতে পারে না৷ মানুষকে বিশ্বাস করাতে রোগের নিখুঁত হিসেবও দিলেন মা৷ ঘামে তাঁর চোখের পাতাও ভিজেছে৷ আর  ঝিনুকবাটির মতো মিষ্টি হিসুর অঙ্গটি হাতে চেপে ধরে বাচ্চা দাঁড়িয়ে৷ চেপে রাখতে গিয়ে লাল জবা হয়ে গেছে সে বাচ্চা৷তার মধ্যেও দুবার ঘুড়ি দেখে নিল৷ হাজার কষ্টেও কাচ্চাবাচ্চা আনন্দ ছাড়ে না৷              
 
অবাক হয়ে গেলাম রিক্সাওয়ালার কাণ্ডে৷ লোকের কথায় বিন্দুমাত্র হেলদোল নেই৷ ঝগড়ুটেদের দিকে একটু না তাকিয়ে বাচ্চটিকে ভালো করে হিসু করালেন৷ কলের জলে নিজের হাত ভালো করে ধুয়ে বাচ্চাটিকে ফের রিক্সায় বসালেন৷ ততক্ষণে লোক তাঁর রিক্সায় লাথি মারছে৷ বোধহয় ভেবেছে লাথি মেরে শিশুর রেচন বন্ধ করা যায়৷ ঠিক যেমন করে শিক্ষকদের মাঠে বসিয়ে শিশুর পড়া বন্ধ করা হয় আরকি ! কিংবা যেমন করে ধাড়ি নেতারা “লুচিলুচি  কিংবা ” ঝালমুড়ি ঝালমুড়ি ” খেলা করে খাদ্য নষ্ট করে ৷ মানুষের পেটে উনুন খোঁড়ে      
 
চলে যাওয়ার সময় দেখলাম রিক্সাওয়ালা তাঁর ময়লা হাতের পরিষ্কার জল বাচ্চার মুখে মাথায় দিয়েছেন৷জল চিকচিক করে৷বাচ্চা তলপেটের কষ্ট ভোলে
 
দরিদ্র জানে খাদ্য জল ঠিক কোথায় দিতে হয়৷
 

♦·♦–♦·♦♦·♦–♦·♦

ক্রমশ..
 
আগের পর্ব পড়ুন: পথ ভুবনের দিনলিপি । পর্ব ৬

পথ ভুবনের দিনলিপি। পর্ব ৬

 


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!