Advertisement
  • এই মুহূর্তে টে | ক | স | ই
  • অক্টোবর ২৭, ২০২৫

সোশ্যাল মিডিয়ায় নীরব সেন্সরশিপ ! ‘শ্যাডো ব্যান’ নিয়ে সংস্কারের আহ্বান

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
সোশ্যাল মিডিয়ায় নীরব সেন্সরশিপ ! ‘শ্যাডো ব্যান’ নিয়ে সংস্কারের আহ্বান

সোশ্যাল মিডিয়ায় হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে যুক্ত আপনি। আপনার পোস্টমন্তব্য ও বিশ্লেষণ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু হঠাৎই সে আওয়াজ নীরব। পোস্টগুলো বন্ধুদের কাছে পৌঁছায় নাফলোয়ারদের আগ্রহ কমে যায় এবং অবধারিতভাবে ব্যবহারকারীর মনেই প্রশ্ন জাগে—‘আমি কি তাহলে প্রয়োজনীয় কেউ নই ?’

টেকনোলজির দুনিয়ায় মন পরিস্থিতিকে বলা হয় ‘শ্যাডো ব্যান’—সোশ্যাল মিডিয়ার এক অদৃশ্য সেন্সরশিপের প্রক্রিয়াযা ব্যবহারকারীর উপস্থিতিকে হঠাৎ  ‘অদৃশ্য’ করে দেয়। তবে ব্যবহারকারী সচেতন থাকে নাকারণ তার অ্যাকাউন্ট সচল থাকেসে পোস্ট করতে পারেমন্তব্য করতে পারে। দর্শকের কাছে তার কণ্ঠ গৃহীত হয় না। এ শুধু প্রযুক্তিগত সমস্যা নয়, ‘শ্যাডো ব্যান’ মৌলিক অধিকার ও জীবিকা হরণের ইঙ্গিত বহন করে। বিশেষ করে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা কর্মী, সাংবাদিকমানবাধিকার কর্মীকমেডিয়ান ও সোশ্যাল মিডিয়ার ইনফ্লুয়েন্সাররা এই চুপচাপ দমননীতির শিকার হচ্ছেন।

কয়েকজন স্বাধীন সাংবাদিক জানিয়েছেনরাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল প্রতিবাদের কাভার করার সময় তাদের পোস্ট হঠাৎই সার্চ ও টাইমলাইন থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। ভাইরাল হওয়া কনটেন্ট ট্রেন্ডিং থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছেআর দর্শকসংখ্যা কমার কারণে স্পন্সরশিপ বা আয়েও সরাসরি প্রভাব পড়ছে। সম্প্রতি লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তিনি জানান, তাঁর অ্যাকাউন্ট কিংবা কংগ্রেসের পেজ থেকে করা পোস্টগুলি ‘শ্যাডো ব্যান’-এর শিকার। এর পিছনে কেন্দ্রের শাসক দলের ভূমিকা আছে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। ২০২৪ সালে কংগ্রেস নেতা শশী থারুরও এমনই অভিযোগ তুলেছিলেন। গত  মার্চেসুপ্রীম কোর্ট নির্দেশ দেয় যেকোনো সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট সরানোর আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা কনটেন্ট ক্রিয়েটরকে নোটিশ দিতে হবে। উল্টোদিকে, চলতি বছরেই কেন্দ্র সরকার একটি নতুন পদ্ধতি চালু করে, যার মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা সরাসরি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে কনটেন্ট সরানোর নির্দেশ দিতে পারেন। টুইটার এ পদ্ধতির বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

ভারতের আইন ও সংবিধান অনুযায়ীএ ধরনের নীরব দমন স্বাধীন বক্তব্য ও প্রকাশের অধিকারপেশা ও জীবিকার অধিকারব্যক্তিগত মর্যাদা ও গোপনীয়তাসবকিছুকে প্রভাবিত করে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৯-(১) (ক) অনুযায়ী নাগরিগদের এই স্বাধীনতা রয়েছেতবে শ্যাডো ব্যান সে অধিকারকে হঠাৎভাবে হ্রাস করে, কোনো নোটিশ বা আবেদনের সুযোগ ছাড়াই।ফলে অনুচ্ছেদ ২১-এর গোপনীয়তা ও মর্যাদা রক্ষার নীতিও এ প্রক্রিয়ায় ক্ষুণ্ণ হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে এ বিষয়ে ব্যাপক আইনগত ফাঁকফোঁকর রয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি আইন২০০০ এবং ২০২১ সালের ইন্টারমিডিয়ারি নির্দেশিকা ব্যবহারকারীর অভিযোগ গ্রহণ করেতবে অ্যালগরিদমিক সাপ্রেশন’ বা শ্যাডো ব্যান’-এর মতো প্রযুক্তিগত ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণের কোনো বিধান নেই। ব্যবহারকারী জানেই না কখন তার কণ্ঠ নীরব করা হয়েছেফলে কার্যকর প্রতিকারও পাওয়া যায় না। চিনে সরকারের বিরুদ্ধে এ ধরণের  সেন্সরশিপের গুরুতর অভিযোগ থাকলেও, ভারতে সাম্প্রতিক সময়েই বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে।  

তুলনামূলক আন্তর্জাতিক উদাহরণ হিসেবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ডিজিটাল সার্ভিসেস অ্যাক্ট উল্লেখযোগ্য। ডিএসএ অনুযায়ীপ্রতিটি নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ এ ব্যবহারকারীকে স্পষ্ট ব্যাখ্যা ও আপিলের সুযোগ দিতে হয়। শ্যাডো ব্যান-এর ন্যায্য প্রতিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে ভারতীয় আইনে এমন কোনো স্পষ্ট সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই। বিশেষজ্ঞরা দাবি জানাচ্ছেন, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো শুধুমাত্র ব্যক্তিগত বিষয় নয়তারা গণমাধ্যমের মতো প্রায়-সার্বজনীন ভূমিকা পালন করে। তাই তাদের নিয়ন্ত্রণ নীতি স্বচ্ছউপযুক্ত এবং স্বচ্ছ হতে হবে।  এ পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা দুটি প্রধান সংস্কার প্রস্তাব করেছেন — ১. বিশেষ ডিজিটাল রাইটস ট্রাইব্যুনাল: শ্যাডো ব্যান’, ‘অ্যালগরিদমিক সাপ্রেশন’ আর নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিরোধ এ দ্রুত ও নিরপেক্ষভাবে প্রতিকার নিশ্চিত করবে। ২. ব্যবহারকারীর নোটিফিকেশন ও আবেদনের অধিকার বাধ্যতামূলক করা: সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহারকারীকে স্পষ্টভাবে জানাতে হবে তার কণ্ঠ কোথায় সীমাবদ্ধ করা হয়েছে, কেন করা হয়েছে এবং আপিলের সুযোগ দিতে হবে। তা না হলে, এই পদ্ধতি নাগরিকদের মৌলিক মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকারকে হুমকির মুখে ফেলবে। ডিজিটাল অর্থনীতিতে জীবিকা ও প্রকাশের অধিকার রক্ষায় ন্যায়সম্মত হস্তক্ষেপ এবং আইনগত সংস্কারের প্রয়োজন এখনই


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!