- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- জানুয়ারি ৩০, ২০২৩
ভাঙল আট দশকের অচলায়তন । তামিলনাড়ুর দুশো বছরের প্রাচীন মন্দিরে তফশিলিদের অবাধ প্রবেশাধিকার

আট দশক পর ভেঙ্গে পড়ল নিষেধের প্রাচীর। জাত-বর্ণের মনুবাদী রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে তামিলনাড়ুর মন্দিরে প্রবেশ করলেন শতাধিক নিম্ন বর্ণের ‘দলিত’ মানুষ। সহায়তায় এগিয়ে এলেন পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত কর্তাব্যক্তিরা।
মন্দিরে নির্বিঘ্নে প্রবেশ ও স্বচ্ছন্দে উপাসনা করার অধিকার পেয়েই স্বভাবতই খুশি মন্দির প্রবেশাধিকার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত আন্দোলনকারীরা। তাঁদের কথায় দীর্ঘ লড়াইয়ের পর তাঁদের স্বপ্ন সত্যি হল। এদিন সকালেই পোঙ্গল উৎসবের সঙ্গে সম্পর্কিত যাবতীয় উপাদান ও ফুলের মালা নিয়ে নিয়ে তারা মন্দিরের পথে রওনা দেন। কোনো অপ্রীতিকর অবস্থা এড়াতে পুলিশ আধিকারিকদের নিরাপত্তায় দিয়ে তাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
তামিলনাড়ুর তিরুভান্নামালাই জেলার একটি দুশো বছরের প্রাচীন মন্দিরে উচ্চ বর্ণের হিন্দুরদের একচেটিয়া প্রবেশাধিকার ছিল। এ ব্যাপারে সম্প্রতি একটি বিদ্য্যালয়ের শিক্ষক -অভিভাবক সাক্ষাৎ এর মাধ্যমে মন্দির প্রবেশের সমস্যাটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসে। এরপরে জেলার প্রশাসনিক স্তরে শুরু হয়েছিল উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা। জেলার এক শীর্ষ পুলিশ আধিকারকের কথায় মন্দির কর্তৃপক্ষের এব্যাপারে একাধিক বৈঠকে বসেছিলেন তাঁরা। উদ্দেশ্য মন্দিরে দলিতদের প্রবেশাধিকার সুনিশ্চিত করা।
জেলাপ্রশাসক ড.মুরুগেশও দলিত এবং আদিবাসীদের সাংবিধানিক অধিকারের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। তিনি সাংবাদিকদের দেওয়া এক বিবৃতিতে জানান যে, পবিত্র এই উপাসনালয়টিতে প্রবেশের জন্য বহু দিন ধরেই তফসিলি জাতি ও আদিবাসী উপজাতিদের সংগঠন থেকে আবেদন আসছিল। দাবি ছিল, তাঁদের পূর্বপুরুষরা যেমন মন্দিরে উপাসনা করতেন, সেই অধিকার তাঁদের ফিরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু উচ্চবর্ণের নেতাদের আপত্তি থাকায় এ দাবি মানা সম্ভব হচ্ছিল না। এদিন তিনি জানান ,ভারতে অস্পৃশ্যতাবিরোধী আইন রয়েছে। তাছাড়াও দলিত আদিবাসীদের সম্পর্কে সমাজের বিদ্যমান মানসিকতার পরিবর্তনের সময় এসেছে। সরকার সমাজের এই প্রান্তিক মানুষদের উপাসনার অধিকারকে কার্যকর করতে বদ্ধ পরিকর। সেই কারণে মন্দিরে শান্তিপূর্ণ প্রবেশের জন্য বহু আলাপ আলোচনা চালানো হয়। শেষ পর্যন্ত মন্দিরে প্রবেশাধিকারকে বাস্তবায়িত করতে পেরে খুশি বলে জানান প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় এই আধিকারিক।
অবশ্য এর বিপরীত চিত্রটিও রয়েছে। এখনও স্থানীয় বহু উচ্চ বর্ণের মানুষ দলিত আদিবাসীদের মন্দির প্রবেশকে ভালোভাবে মেনে নিতে পারেননি। তাঁদের অনেকেই জানিয়েছেন যে বহু বছর আগে দলিতদের টাকা আর জমি দেওয়া হয়েছিল যে তাঁরা যেন নিজেদের জন্য মন্দির তৈরি করে নিয়ে সেখানে উপাসনা শুরু করে। মন্দির প্রবেশ নিয়ে সামাজিক বিদ্বেষের অবসান এখনই শেষ হওয়ার নয়, উচ্চবর্ণের কিয়দ অংশের নেতাদের বক্তব্যে তা স্পষ্ট।
❤ Support Us