Advertisement
  • দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
  • জুন ১৮, ২০২৫

১ অগস্ট থেকে বাংলায় আবার শুরু ১০০ দিনের কাজ। কেন্দ্রকে কী নির্দেশ হাইকোর্টের

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
১ অগস্ট থেকে বাংলায় আবার শুরু ১০০ দিনের কাজ। কেন্দ্রকে কী নির্দেশ হাইকোর্টের

শুধু দুর্নীতির অভিযোগে তিন বছর ধরে আটকে রাখা যাবে না কোনও কেন্দ্রীয় প্রকল্প। নজরদারি বাড়ান, শর্ত দিন, কিন্তু প্রকল্প বন্ধ নয়। ১০০ দিনের কাজ সংক্রান্ত মামলায় কেন্দ্রকে এই কঠোর বার্তা দিল কলকাতা হাই কোর্ট। নির্দেশ, আগামী ১ আগস্ট থেকে পশ্চিমবঙ্গে আবার চালু করতে হবে মনরেগা প্রকল্প। বুধবার প্রধান বিচারপতি টি.এস. শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি চৈতালি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, ‘দশটা আপেলের মধ্যে যদি একটা পচা হয়, তার মানে বাকিগুলোকেও ফেলে দিতে হবে এমন নয়।’ শুনানির সময়ে বিচারপতির মন্তব্য, ‘যা হয়েছে তা অতীত। কিন্তু তিন বছর ধরে প্রকল্প বন্ধ রাখা যায় না। এবার শুরু করতেই হবে।’

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে রাজ্যে বন্ধ হয়ে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত এই প্রকল্প। রাজ্য সরকারের দাবি, কাজ করেও প্রাপ্য মজুরি পাননি বহু শ্রমিক। অন্যদিকে, কেন্দ্রের অভিযোগ— পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে ১০০ দিনের কাজে। মৃত মানুষের নামে কাজের দাবি, নকল বাঁধ তৈরির নামে টাকা তোলা, প্রকৃত জব কার্ডধারীদের বঞ্চিত করে অন্যদের অ্যাকাউন্টে টাকা— অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ। এই প্রেক্ষিতে কেন্দ্র রাজ্যের জন্য বরাদ্দ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়। পর পর ২-টি বাজেটেও পশ্চিমবঙ্গের জন্য এক টাকাও বরাদ্দ রাখা হয়নি। যার জেরে বন্ধ হয়ে পড়ে লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের রুজি-রুটি। তবে এ দিন আদালতের পর্যবেক্ষণ, দুর্নীতি রুখতে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে রয়েছে তদারকির ক্ষমতা। প্রয়োজন হলে নির্দিষ্ট জেলায় নোডাল অফিসার বসানো যেতে পারে, কিন্তু কাজ বন্ধ করে রাখার কোনো যুক্তি নেই। প্রধান বিচারপতির সাফ কথা, ‘এটি একটি জনমুখী প্রকল্প। এর টাকা সরাসরি শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে যায়। দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে তদন্ত করুন, কিন্তু মানুষকে কাজ থেকে বঞ্চিত করবেন না।’

আদালত আরো জানিয়েছে, দুর্নীতি হয়েছে এমন চারটি জেলা— হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, মালদহ ও দার্জিলিং বাদ দিয়ে বাকি রাজ্যে অবিলম্বে কাজ শুরু করা যেতে পারে। তবে প্রকল্প পুরোপুরি বন্ধ রাখা অনুচিত। কলকাতা হাইকোর্টে এই মামলাটি দায়ের করেছিল পশ্চিমবঙ্গ খেতমজুর সমিতি। তাদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে জানান, ২০২১ সালের পর থেকে কোনো মজুরি দেওয়া হয়নি। এই বকেয়া মজুরি মিটিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ০.০৫ শতাংশ হারে সুদের দাবিও তোলা হয়েছে। একইসঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও পৃথক মামলা দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগ, এই প্রকল্পের টাকা চুরি হয়েছে, এবং তা তদন্তের জন্য কেন্দ্রীয় এজেন্সির প্রয়োজন। অন্যদিকে, কেন্দ্রের দাবি, ‘আমরা প্রকৃত কর্মীদের মজুরি দিতে আপত্তি করছি না। কিন্তু তাঁরা সত্যিই কাজ করেছেন কিনা, সেটা যাচাই করার দায়িত্ব কে নেবে?’ এই প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি আরো জানান, রাজ্য যেসব টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে, তা কেন্দ্রের প্রাপ্য।

সওয়াল জবাবের পর আদালত জানায়, ‘এসব যুক্তি যথেষ্ট নয়। দুর্নীতির অভিযোগ তো গুজরাট, মধ্যপ্রদেশেও আছে। তা বলে কি সেখানে প্রকল্প বন্ধ হয়েছে?’ পশ্চিমবঙ্গে যে ভাবে পুরো প্রকল্প স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই অনেকের মত’– বলেন প্রধান বিচারপতি। এদিকে হাইকোর্টের রায়ে শ্রমজীবী মানুষদের একটা বড়ো অংশে খুশির ঢেউ। তাঁদের বক্তব্য, দীর্ঘ ৩ বছর পরে অবশেষে আবার কর্মসংস্থানের আশা জাগল। যদিও প্রকল্প ঠিক কীভাবে, কতটা পরিসরে শুরু হবে, তা নির্ভর করবে কেন্দ্র-রাজ্যের সমঝোতার উপর।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!