- দে । শ স | হ | জ | পা | ঠ
- মার্চ ২১, ২০২৩
৭ প্রাচীন ভাষার শব্দকোষ প্রকাশ। আঞ্চলিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করতে বাংলাদেশ সরকারের অভিনব পদক্ষেপ
এপার বাংলায় হিন্দি ও ইংরাজির দাপটে বাংলা ভাষা সহ অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষা যখন সংকটাপন্ন, তখন পদ্মার পারে শুরু হয়েছে সম্পূর্ণ বিপরীত এক কর্মযজ্ঞ। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভাষা সংরক্ষণ করতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করল বাংলাদেশ। ৭ টি প্রাচীন ভাষাগোষ্ঠীর শব্দকোষ প্রকাশ করল শেখ হাসিনা সরকার।
পরিসংখ্যান অনুসারে, ৫০ প্রাচীন জনগোষ্ঠী রয়েছে বাংলাদেশে। বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা আরো বেশি। শিক্ষা হোক বা প্রশাসন কোনো ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয় এই সব ভাষা সমূহ। ব্যবহার না হলে ধীরে ধীরে সে ভাষাও হারিয়ে যায়। এ ব্যাপারে, বছর ২০ আগে সমীক্ষা শুরু করেছিল আন্তর্জাতিক সংগঠন সামার ইনস্টিটিউট অফ লিঙ্গুইস্টিকস। ১৫ বছর ধরে সমীক্ষা চালিয়ে একটি প্রতিবেদন পেশ করে সংস্থা তাতে বলা হয়, বাংলাদেশের ৩০ টি আঞ্চলিক ভাষা রয়েছে যেগুলোর অবস্থা শোচনীয়। কথ্য ভাষা রূপে কেবলমাত্র ব্যবহৃত হয়। প্রবীণরা ভাষার ব্যাকরণ সম্পর্কে অবগত। কিন্তু তরুণ প্রজন্ম ভাষার সঠিক প্রয়োগ সম্পর্কে জানে না। এমনকি তাঁদের শব্দভাণ্ডারও রীতিমতো সীমিত।
২০১৭ সালে রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর আঞ্চলিক মাতৃভাষার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারে সরকার। তাই মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের ওপর জোর দেওয়া হয়। পাঁচটি জনগোষ্ঠী যথা- চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো এবং সাদরির প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল মাতৃভাষা। প্রাথমিক সাফল্যের পর ভাষা সংরক্ষণের পরবর্তী ধাপে প্রকাশিত হল ৭টি আঞ্চলিক ভাষার শব্দকোষ। যার মধ্যে রয়েছে চাকমা, মারমা, ককবরক, তঞ্চঙ্গ্যা, খিয়াং, পাংখোয়া এবং লুসাই ভাষা। প্রতিটি ভাষাই প্রচলিত বাংলাদেশের চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য অঞ্চলে। কোনটাই বাংলার উপভাষা নয়। প্রতিটি ভাষাই স্বতন্ত্র এবং স্বাধীন।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভাষাগুলোর সংরক্ষণে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। বাংলা ভাষার প্রাধান্যের কারণে এই ভাষাগুলোও বিপন্নতার শিকার হয়েছিল। কিন্তু সরকারের সচেতনতায় পুনরুজ্জীবনের নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। প্রশাসনের ইচ্ছা দেশের অবহেলিত জনজাতিদের সম্পর্কে মানুষের মধ্যে আরো সচেতনতা গড়ে উঠুক। এ ব্যাপারে তাঁরা ইতিমধ্যে একাধিক গবেষণামূলক প্রবন্ধ গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। পশ্চিমবঙ্গে এমন উদ্যোগ দেখা গেলেও সংখ্যার বিচারে তা নগন্য। দুই বাংলাই বহু জনজাতির আবাসস্থল। তাঁদের প্রতিটির সংস্কৃতি, ভাষা , রীতি-নীতি একে অপরের থেকে অনেক আলাদা। আগামী দিনে দুই বাংলায় যদি এমন সদর্থক উদ্যোগ যদি আরো বেশি করে গৃহীত হয় তাহলে, বিলুপ্তির হাত রেখে রক্ষা পাবে বহু স্বাধীন কণ্ঠ।
❤ Support Us