Advertisement
  • দে । শ
  • ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩

ইসরাইলের বর্বর, ভীতিপ্রদ হামলা। ২৪ ঘন্টায় খুন ২৪১ ফিলিস্তিনি

বড়োদিনে বিমর্ষ, স্তব্ধ বেথলেহাম।যিশুর স্বপ্নে লাশের মিছিল

বাহার উদ্দিন
ইসরাইলের বর্বর, ভীতিপ্রদ হামলা। ২৪ ঘন্টায় খুন ২৪১ ফিলিস্তিনি

ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের গণহত্যা থেকে ফিলিস্তিনিদের রেহাই নেই বুঝি ! বড়োদিন জুড়েও হাসপাতালে, ত্রান শিবিরে, লোকালয়ে মারণাগ্রস্ত নিক্ষেপ করে ইসরাইলি সেনারা।নিহতের সংখ্যা প্রায় ২৫০।আহত অসংখ্য। ক্ষোভে ফুঁসছে পশ্চিম এশিয়া।

রাষ্ট্রপূঞ্জের নিন্দাকেও আমল দেয়নি তেল আভিভ। ইসরাইল মুখে বলছে, হামাসের কব্জায় আটক পনবন্দীদের মুক্ত করা তাদের লক্ষ্য। দ্বিতীয়ত সন্ত্রাসবাদী হামাসকে নির্মূল করেই তারা অস্ত্রসংবরণ করবে। লক্ষ্যের সঙ্গে সর্বব্যাপী আগ্রাসনের ধ্বংস আর গণহত্যার মিল কোথায়? যে শিশুটি আতঙ্কগ্রস্ত বাবার কোলে ঘুমোচ্ছিল তার অপরাধ কী? সে কি হামাসের সন্তান না সন্ত্রাসের আশ্রয় দাতা।যে স্বামীহারা মহিলা পরিবারকে আগলে রেখে বসেছিলেন আপাত নিরাপদ শিবিরে, তাকে কেন চিরতরে স্তব্ধ করে দিল ইসরাইলি বোমা। এরকম গণহত্যা আর মানব তৈরি বিপর্যয়ের সংখ্যা শতশত, কয়েকসহস্র।গাজা স্ট্রিপের স্বাস্থ্য দফতর বলেছে, গত ২৪ ঘন্টায় ২৪১ জন ফিলিস্তিনির দেহ থেকে প্রাণ ছিনিয়ে নিয়েছে ইসরাইলের বর্বরোচিত হামলা। আহতের সংখ্যা আনুমানিক ৪০০। খান ইউনিস এলাকা কার্যত ধ্বংসস্তূপ। হঠাৎ আক্রমণ চালায় বোমারু বিমান। স্থলবাহিনীও ঝাঁপিয়ে পড়ল। প্রতিরোধহীন, অস্ত্রহীন ফিলিস্তিনিরা পালাবার সময় পেলেন না, রক্তের উপর ভাসতে থাকলেন। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন রাষ্ট্রপূঞ্জের প্রধান অ্যান্টোনিও গুয়েতেরাস। তাঁর নিযুক্ত প্রতিনিধি আলজাজিরাকে জানিয়েছেন, হামলার বিরতি নেই। ত্রান পাঠানোর সব পথ বন্ধ। ইসরাইলের সেনা প্রধান হারজি হালেভি বলেছেন, গাজায় তাঁদের যুদ্ধ সহজে থামবে না। শত্রুদের নিশ্চিহ্ন করতে আরো কয়েক মাস লাগবে।

যিশুর জন্মদিনে, তাঁর জন্মস্থল বেথেলহাম উৎসব থেকে দূরে রইল। খ্রিস্টান আর মুসলিমরা বিমর্ষ।আতঙ্কিত। বাড়ির বাইরে পা রাখেনি শোকগ্রস্তরা।অধিকৃত ফিলিস্তিনের দক্ষিণাংশে এরকম আবহ কখনো দেখা যায়নি, বড়োদিনে সাধারণত মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে, রাতভোর উপাসনা আর উৎসব চলতে থাকে।পাদ্রিকন্ঠে উচ্চারিত হয় শান্তিরচিত প্রার্থনা। এবার সে সব ছবি নিখোঁজ। নিকষ চাদরে আবৃত প্রতিটি রাস্তা, প্রতিটি গৃহ, প্রতিটি উপাসনালয়।করুণ, ভয়াবহ, মর্মান্তিক দৃশ্য।

দু মাস ২০ দিনের যুদ্ধে ফিলিস্তিনের সব প্রান্তে মৃত্যুর সংখ্যা ২১ হাজারের বেশি।প্রথম, দ্বিতীয় আরব ইসরাইল যুদ্ধে এত লোকক্ষয় হয়নি। এরকম ধ্বংসচিত্রও দেখা যায়নি। আশঙ্কা, হতাহতের চেহারা নববর্ষে ব্যাপক হয়ে উঠবে।প্রসঙ্গত বলা দরকার, রুশ ইউক্রেন যুদ্ধ থামার বা থামানোর লক্ষণ নেই।৬৭২ দিনের ইউক্রেন আর রাশিয়া যুদ্ধের বলি ৩৫ হাজার।যুদ্ধবাজ পুতিন আর জেলেনেস্কির মস্তিস্কে বিবেক নেই, অগ্নিদর্পে লাফাচ্ছে তাঁদের প্রতিশোধ স্পৃহা।ইসরাইলের নেতানেয়াহু কিংবা ফিলিস্তিনে আল হামাসের ইসমাইল হানিয়ে, পুতিন আর জেলেনেস্কিরই অনুসারী।মানুষ নয়, মানচিত্র নয়, তাঁদের চাই রক্তে আঁকা বিজয়ের ইতিহাস।

ইসরাইলের রাজনৈতিক অভিপ্রায়, রাষ্ট্রীয় মানচিত্রের সম্প্রসারণ আর জেরুজালেম রাজধানীর স্থানান্তর। এটাও তার বাহ্যিক ইচ্ছে। ভেতরের ইচ্ছার রূপান্তর রহস্যময়।চাই তার আরো আরো ক্ষমতা, ইহুদি জনসংখ্যার ক্রমাগত বৃদ্ধি।বৃত্তের বৃদ্ধি। অস্ত্রের বৃদ্ধি। প্রতিদিন কয়েকশো পরমাণু অস্ত্র তৈরি করে তাদের প্রযুক্তি। এসব অস্ত্র কোয়ায় যায় ? চোরা গলি দিয়ে বৃহৎ অস্ত্র বাজারে ?

ফিলিস্তিনের লড়াই বাধ্যতামূলক। তাঁদের আকাঙ্খা আর আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রত্যাশাকে পথভ্রষ্ট, লক্ষ্যচ্যুত করে দিচ্ছে হামাসের হিংসার রাজনীতি। পশ্চিম এশিয়া শান্তি চায়, উন্নয়ন চায়, চায় ফিলিস্তিনের নবীন প্রতিষ্ঠা। কদর্য স্বার্থের চাহিদা মেটাতে গিয়ে আধুনিক আর বিবেকবান ইহুদি ও প্রেমার্থী ফিলিস্তিনিদের প্রত্যাশা আর স্বপ্নের ইমারতি বুনিয়াদের ওপর চাপ চাপ রক্ত ছড়িয়ে দিচ্ছে যেরকম ইসরাইলের আধিপত্য, তেমনি আল হামাস ও তাদের সহযোগী বিদ্বেষ।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!