Advertisement
  • দে । শ
  • এপ্রিল ১৯, ২০২৪

ভোটপর্বের শুরুতেই গেরুয়া শিবিরে প্রতিকূল হাওয়া। উজান অসমের ৫ আসনে নানারকম অশনি। দক্ষিণ ভারতে অনেকটাই আবাহনহীনতার লক্ষণ। তামিলনাড়ুতে এখনো পদ্মের এপর কাঁটা। অনুকূল প্রতিধ্বনি জম্মু-কাশ্মীরে

বাহার উদ্দিন
ভোটপর্বের শুরুতেই গেরুয়া শিবিরে প্রতিকূল হাওয়া। উজান অসমের ৫ আসনে নানারকম অশনি। দক্ষিণ ভারতে অনেকটাই আবাহনহীনতার লক্ষণ। তামিলনাড়ুতে এখনো পদ্মের এপর কাঁটা। অনুকূল প্রতিধ্বনি জম্মু-কাশ্মীরে

দেশ জুড়ে, উত্তর পূর্ব থেকে দক্ষিণে ভোট শুরু হয়েছে ১০২ আসনে। স্লথ গতিতে। সকাল ১১টা পর্যন্ত গোটা দেশে ভোটদানের গড় ২৪.৯%। দুপুরের পর থেকে এই চিত্রে কতটা পরিবর্তন হবে, তা স্পষ্ট নয়। বিকেলের দিকে তা খানিকটা বাড়তে পারে। অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় এপর্যন্ত এগিয়ে আছে ত্রিপুরা ও বঙ্গীয় সমতটের উত্তর পূর্বে অবস্থিত আলিপুর দুয়ার, জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহার। এই তিন লোকসভা কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় শাসকের পায়ের তলায় মৃদু কম্পন অনভূত হচ্ছে।শঙ্কিত বিজেপি। এপর্যন্ত ভোট পড়েছে কোচবিহারে ১৫.২৬%, আলিপুরদুয়ারে ১৫.৯১%, কৃষক আর চা শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকায় ১৪.১৩% । সকালেই তিন কেন্দ্রের কয়েকটি এলাকায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ দেখা দেয়। এপ্যাবারে শীর্ষে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশিথ প্রামাণিকের কোচবিহার। গত লোকসভা ভোটে তার ব্যবধান ছিল ৫০ হাজারের উর্ধ্বে। এবার ভোট বিশেষজ্ঞদের অনুমান, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে তাঁর তফাৎ আরো কমবে। উত্তরবঙ্গে আরো দুটি কেন্দ্রেও কেন্দ্রীয় শাসকদের ভিত্ নড়ছে। মন্দির নিয়ে বাজিমাত, উন্নয়ণের রেখাচিত্রে অতিরঞ্জন, বাংলার উত্তরকে নিয়ে পদ্মশিবিরের আত্মতুষ্টি, চা শিল্পের সঙ্কট প্রাতিষ্ঠানিকতা বিরোধকে উসকে দিচ্ছে।

গত লোকসভা ভোটে যে উত্তরবঙ্গ বিজেপির জন্য যে জয়সূচক তিলক তৈরি করেছিল, সে বৃহত্তর এলাকায় হাওয়া প্রতিকুল। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের প্রচার পর্বের আক্রোশ আর দ্রোহ অনুকুল হাওয়ার খানিকটা সঙ্গী। মেরুকরণ নামক যে রূচিহীন রাজনীতি ভারতীয় গণতন্ত্রকে লাগাতার হেয় করছে, তার ছায়াপাত তিন কেন্দ্রেই অপেক্ষাকৃত কম। তৃণমূলের ভরসা মহিলা ভোট, গ্রামাঞ্চলে বামপন্থীদের সংগঠনের অভাব, নব্য ভোটারের অরাজনৈতিক সংশয়। মনে হচ্ছে, শুরুতেই আত্মবিশ্বাসী করছে ঘাসফুলকে। বাকি ৬ দফায় কী দাঁড়ায়, সেটা কৌতুহলের বিষয়। পথেঘাটে, হাটে, চায়ের দোকানে, বিশেষ করে নগরাঞ্চলে কান পাতলেই বোঝা যাচ্ছে, ভারতের ১৮তম জাতীয় নির্বাচনে গণরায় এর নিঃশব্দ বিস্ফোরণ ঘটে যাওয়া অসম্ভব নয়। তূণমূল বিজেপির বাইরে বামপন্থীরা হারানো জমি ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছে। কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁদের আঁতাত বিশেষ পরিসর তৈরির সুযোগ দেবে না ।আগে দেখা গেছে, কংগ্রেসের ভোটসঙ্গী হওয়া স্বত্ত্বেও, সাধারণ স্তরের কংগ্রেস কর্মীরা পুরনো এবং স্বাভাবিক মিত্র তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন। এবার মুর্শিদাবাদ, আসানসোল, বহরমপুর সহ কয়েকটি আসনে সিপিএমএর লালকে গ্রহনযোগ্য ভাবতে পারেন কংগ্রেসিরা। ফলাফল অবশ্য অনিশ্চিত। হ্যাঁ সর্বভারতীয় স্তরে কংগ্রেস তার অহমিকা ছেড়ে মসৃণ ইন্ডিয়া জোটে শরিক যদি হতে পারত, তাহলে এখনকার শাসককুলের কপালেপ ভাঁজ অনেকগুণ বেড়ে যেত। তরণ প্রজন্ম ইন্ডিয়া জোটের প্রতিশ্রুতিতে সম্ভাবনা দেখছে না। দক্ষিন ভারত আঞ্চলিক ক্ষমতাধরদের এখনও গর্ভগৃহ । পশ্চিম ভারতের মহারাষ্ট্র, সাগরপারের দক্ষিণ পশ্চিমি মোদিময়তা, গো বলয়ের ধর্মীয় আবেগের মোহ শেষপর্যন্ত ঘোলাজলেও পদ্ম হাওয়া বইবে।

তামিলনাড়ুতে গত লোকসভা ভোটে পুরোপুরি উড়ে যায় গেরুয়া পোশাক। কর্ণাটক, কেরল, অন্ধ্র ও তেলেঙ্গানা সংশয়মুক্ত ছিল না। পরে দল ভাঙার খেলা হয়েছে কর্ণাটকে। সে খেলার পরিণতি ভালো নয়। নির্বারিত স্বৈরতন্ত্রকে বিশেষ আমল দেয়নি গণরায়। দক্ষিণে, উত্তর পশ্চিমে, উত্তরপূর্ব ভারতে ব্যতিক্রম ছিল অসম, ত্রিপুরা, মিজোরাম ও অরুণাচল। উ্ত্তর পূর্ব ভারতে আসন সংখ্যা অসমে ১৪, মিজোরোমে ১, ত্রিপুরায় ২, নাগাল্যান্ডে ১, সিকিমে ১। মেঘালয়ে ২, মণিপুরে ২। এসব রাজ্যে আঞ্চলিক শক্তির সঙ্গে আঁতাত করতে হয় বিজেপিকে । কিরণ রিজুজু বরাবর গেরুয়া কর্মী। তাঁকে যথাযোগ্য সম্মান দিয়েছে মোদি সরকার।আজ উত্তরপূর্বের উজান অসমের ৫ আসনে ভোট। ডিব্রুুগড়, উত্তরলক্ষীমপুর, জোরহাট, কাজিরাঙা, শোনিতপুর।শোনিতপুর ছাড়া বাকি সব আসনেই উজান অসমের বিচিত্র জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত। ডিব্রুগড় থেকে লড়ছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় জাহাজমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল। কঠিন লড়াই, কংগ্রেস সমর্থিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে। অসমে কংগ্রেস ছন্নছাড়া হলেও ডিব্রুগড়, জোরহাট এবং কাজিরাঙার ভোটার কিছুটা হলেও প্রসন্ন দৃষ্টিতে তাকাচ্ছেন। সংশোধিত, আরোপিত নাগরিকত্ব আইন, চা শ্রমিকদের খিদে ধাওয়া করছে কেন্দ্রীয় শাসক গোষ্ঠী। কংগ্রেস অগোছালো পার্টি। দূরদৃষ্টি সম্পন্ন মাঝি কোথায় তার । এবার উজ্জীবনের সম্ভাবনা ছিল। মাঝ গাঙে মাথার উপর ভেঙে ঐক্যহীন ব্রিজ। ফায়দা সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন কৌশলপ্রিয় হিমন্ত বিশ্বশর্মা। তবু কংগ্রেস পন্থী ভোটারদের আশা, ১৪ আসনের মধ্যে  তেরঙ্গা ঝান্ডা বেশি হলে ২টি, কম হলে ১ আসনে গেরুয়াকে ধোয়াচ্ছন্ন করে দিতে পারে।করিমগঞ্জ এতদিন সংরক্ষিত আসন ছিল। তার বদলে শিলচর এ মর্যাদা ছিনিয়ে নিয়েছে। শিলচরে প্রাক্তন সাংসদকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। করিমগঞ্জে সর্বভারতীয় স্তরের আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী হাফিজ রশিদ আহমেদ চৌধুরীকে দাঁড় করিয়েছে কংগ্রেস। হাফিজ লড়াকু। সেকুলার মুখ এবং ভূমিপুত্র। মানব প্রকৃতি তাঁর হয়ে ছুটছে মাঠে আর ময়দানে। শোনা যাচ্ছে, সম্ভাবনাময় জয় তাঁকে ডাকছে।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!