- এই মুহূর্তে দে । শ
- সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫
‘মস্তিষ্কখাদক’ অ্যামিবা আতঙ্কে কাঁপছে কেরালা! মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৯। তবু পরিস্থিতি মোকাবিলায় নতুন আশা দেখছে পিনরাই সরকার

বিশ্বজুড়ে এ রোগে মৃত্যুর হার যেখানে প্রায় শতভাগ, নতুন আশার আলো দেখছে কেরালা। প্রাইমারি অ্যামিবিক মেনিনগো-এনসেফালাইটিস (পিএএম) বা ‘ মস্তিষ্কখাদক অ্যামিবা’ সংক্রমণে মৃত্যুহার কমিয়ে আনতে কেরল চিকিৎসকরা ভরসা রাখছেন এক নতুন অস্ত্রে। নাম মিল্টেফোসিন। আন্তর্জাতিক পরিসরে যেখানে রোগীদের ৯৫ শতাংশেরও বেশি মৃত্যু হয়, সেখানে কেরলে সেই হার নেমে এসেছে প্রায় ২৪ শতাংশে। যদিও ইতিমধ্যেই প্রাণঘাতি অ্যামিবার থাবার বামশাসিত রাজ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ১৯ জন। চলতি বছরে রাজ্যে এখন পর্যন্ত ৬৯ জনের দেহে মিলেছে নিগ্লেরিয়া ফাওলেরি। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, মৃত্যুর হার কমেছে। ‘কেস বাড়ছে, কিন্তু মৃত্যুর হার পড়ছে। দ্রুত শনাক্তকরণ আর আগেভাগে চিকিৎসাই পার্থক্য তৈরি করছে।’ দাবি থিরুবনন্তপুরম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অরবিন্দ রঘুকুমারের। মিল্টেফোসিন, অ্যাম্ফোটেরিসিন বি-সহ একাধিক ওষুধ মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে চিকিৎসা প্রোটোকল। এই ‘ককটেল’ নতুন আশা জাগালেও রয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। বমি, ডায়রিয়া, কিডনি ও লিভারের সমস্যা, ইলেকট্রোলাইটের গরমিল দেখা দিতে পারে। গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে ওষুধটি একেবারেই অনিরাপদ। তাই কেবলমাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণেই প্রয়োগ হচ্ছে এই ওষুধ।
অ্যামিবা’র সংক্রমণ ঘিরে শুধু চিকিৎসা মহল নয়, উত্তাল রাজনীতি-ও। বিরোধী দল ইউডিএফ-এর অভিযোগ—‘অ্যামিবার সংক্রমণ সামলাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ সরকার। অন্ধকারে হোঁচট খাচ্ছে প্রশাসন।’ পরিসংখ্যানও বিরোধীদের অভিযোগে জোর জুগিয়েছে। ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সংক্রমণের সংখ্যা ছিল মাত্র ৮। ২০২৪ সালে বেড়ে হয় ৩৬, সঙ্গে মৃত্যু হয় ৯ জনের। চলতি বছরে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছে গিয়েছে ৬৯-এ, মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। পরিসংখ্যান সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে সরকার। বিধানসভায় রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীণা জর্জ অবশ্য দাবি করেছেন, ‘দেশের মধ্যে কেরলই প্রথম রাজ্য যেখানে এই রোগ মোকাবিলায় বিশেষ নির্দেশিকা জারি হয়েছে।’’ তাঁর মতে, দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েই মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব হয়েছে।’
কেন এত ভয়ঙ্কর এই অ্যামিবা? উষ্ণ মিঠে জলে জন্মানো এই অণুজীব সাধারণত ব্যাকটেরিয়া খায়। কিন্তু মানুষের নাক দিয়ে শরীরে ঢুকলেই মস্তিষ্কে আক্রমণ শুরু করে। কয়েক দিনের মধ্যেই মস্তিষ্ক ধ্বংস করে ফেলে। বৈশ্বিক পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৬২ সাল থেকে আজ অবধি ৪৮৮টি কেস নথিভুক্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৯৫ শতাংশেরও বেশি ক্ষেত্রে। কেরালায় রয়েছে প্রায় ৫৫ হাজার পুকুর, সাড়ে ৫ মিলিয়ন কূপ। এই জল থেকেই গড়ে ওঠে জনজীবন। ফলে ঝুঁকি এড়ানো দুষ্কর। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর ইতিমধ্যেই জলাশয় থেকে জল নমুনা সংগ্রহ শুরু করেছে। জারি করা হয়েছে একাধিক সতর্কতাও। পুকুর বা জলাশয়ে স্নান কিংবা সাঁতার এড়াতে অনুরোধ করা হয়েছে সাধারণ মানুষকে। কী ভাবে সংক্রমণ রোধ করা যায়, তা নিয়েও প্রকাশিত হয়েছে পরামর্শিকা। সরকারি তরফে জোর দেওয়া হচ্ছে জনসচেতনতার উপর। সরকারের দাবি, মিল্টেফোসিন ব্যবহার, দ্রুত শনাক্তকরণ ও নিবিড় চিকিৎসা চলছে। ফলে রাজনীতি যতই তপ্ত হোক, চিকিৎসা মহলের আশা, এমন আক্রমণাত্মক পদক্ষেপই মৃত্যুহার আরো কমাতে সাহায্য করবে।
❤ Support Us