Advertisement
  • এই মুহূর্তে দে । শ
  • ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৫

‘ওরা সংবিধান, বাক-স্বাধীনতা কোনোকিছুই মানে না’ — রাজ্যসভায় জবাবি ভাষণে কংগ্রেসের অতীত খুঁড়ে তোপ প্রধানমন্ত্রীর

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
‘ওরা সংবিধান, বাক-স্বাধীনতা কোনোকিছুই মানে না’ — রাজ্যসভায় জবাবি ভাষণে কংগ্রেসের অতীত খুঁড়ে তোপ প্রধানমন্ত্রীর

স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় কংগ্রেসকে আক্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন, দলটি বিজেপির ‘সবার সাথে, সবার উন্নয়ণ’ স্লোগানে বিশ্বাস করে না। কংগ্রেসের আমলে বাকস্বাধীনতা ধ্বংস হয়েছে, কংগ্রেসের আমলে, সবকিছুতেই তুষ্টি ছিল। এটা ছিল তাদের রাজনীতি করার উপায়। অতীত খুঁড়ে পরিবারতন্ত্রের কাঁটায় বিদ্ধ করলেন কংগ্রেসকে। ভাষণে উঠে এল দেব আনন্দ থেকে কিশোর কুমার প্রসঙ্গ।

রাজ্যসভায় জবাবি ভাষণে এ দিন স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় কংগ্রেসকে আক্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের সবচেয়ে পুরনো জাতীয় দলের বিরুদ্ধে তোপ দেগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কংগ্রেসের থেকে ‘সবার সাথে, সবার উন্নয়ণ’ — আশা করাই উচিত নয়। এটা যেমন ওদের ধারণার বাইরে, ঠিক তেমনই ওদের দলের আর্দশের মধ্যে পড়ে না। গোটা দলটাই টিকে আছে পরিবারতন্ত্রের উপর ভিত্তি করে।’ তাঁর ভাষণে উঠে আসে ইন্দিরা গান্ধীর আমলে কুখ্যাত ‘ইমার্জেন্সি’র দিনগুলির কথা। প্রসঙ্গতই দেব আনন্দ থেকে গায়ক কিশোর কুমার, অভিনেতা বালরাজ সাহানি, লজা মঙ্গেশকরের ভাই হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরের উপর কংগ্রেসের অত্যাচারের কথা তুলে ধরেন নরেন্দ্র মোদী। রেহাই পান নি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুও।

তিনি প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী আরোপিত ‘জরুরী অবস্থা’ নিয়ে কংগ্রেসের উপর আছড়ে পড়েন। তিনি বলেন, বাক স্বাধীনতাকে ধ্বংস করেছিল ওঁরা, দেব আনন্দের অভিনীত চলচ্চিত্রগুলিকে দূরদর্শনে সম্প্রচার করতে দেয় নি। মোদী বলেন ‘যখন নেহরুজি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন শ্রমিকদের একটি বিক্ষোভ হয়েছিল, সেখানে বিখ্যাত গীরিকার মজরু সুলতানপুরীজি একটা গান গেয়েছিলেন… সেই কবিতা গেয়ে শোনানোর অপরাধে নেহরুজি দেশের একজন মহান কবিকে জেলে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন।’ এরপর মোদী বলেন, ‘বিখ্যাত অভিনেতা বলরাজ সাহানি একটা অনুষ্ঠানে শামিল হয়েছিলেন.. আন্দোলন যাঁরা করেছিলেন তাঁদের অনুষ্ঠানে শামিল হয়েছিলেন, শুধু তার জন্য বলরাজ সাহানিকে জেলে বন্ধ করা হয়েছিল।’ এরপর তোপের সুর আরও চড়া করেন মোদী। তিনি বলেন,’লতা মঙ্গেশকরজির ভাই হৃদয়নাথ মঙ্গেশকারজি বীর সাভারকরকে নিয়ে একটি কবিতা আকাশবাণীতে বলার পরিকল্পনা করেছিলেন, সেটার জন্য হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরকে আকাশবাণী থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল।

‘ মোদী এরপর আসেন ইমার্জেন্সির সময়ের কথায়। মোদী বলেন,’ এই দেশ ইমার্জেন্সির সময় দেখেছে। সংবিধানকে স্পিরিট দমন করা হয়েছিল আর তা করা হয়েছিল ক্ষমতার জন্য। ইমার্জেন্সির সময়, দেব আনন্দের কাছে আর্জি জানানো হয়েছিল যাতে তিনি ইমার্জেন্সি নিয়ে খোলাখুলি সমর্থন করেন। দেব আনন্দজি ইমার্জেন্সি সমর্থন করেননি, এজন্য দূরদর্শনে দেব আনন্দের সব ফিল্মে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।’ এরপর মোদী আসেন কিশোর কুমারের প্রসঙ্গে। বাংলার তথা দেশের জনপ্রিয় গায়ক ও অভিনেতা কিশোর কুমার প্রসঙ্গে মোদী বলেন,’ কিশোর কুমার কংগ্রেসের জন্য গান গাননি, এর জন্য আকাশবাণীতে কিশোর কুমারের গানকে নিষিদ্ধ করা হয়।’

বাবাসাহেব আম্বেদকরের সঙ্গে কংগ্রেসের দ্বন্দ্বের কথা উঠে আসে। কেবল ইতিহাসের দিকে তাকানো উচিত নয় কারণ আমি বলছি বলে… কংগ্রেস বি আর আম্বেদকরের সাথে কেমন আচরণ করেছিল… তারা তাঁকে কতটা অপছন্দ করেছিল এবং বাবাসাহেব যা বলতেন তা কংগ্রেসকে তা রাগিয়ে দিয়েছে।’ কংগ্রেস আইকন দলিত নেতা ডঃ বি আর আম্বেদকরকে পরাজিত করার “ষড়যন্ত্র”ও কংগ্রেস করেছিল বলে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “একটা সময় ছিল যখন কংগ্রেসের আম্বেদকরের প্রতি অনেক ঘৃণা ছিল…কিন্তু কংগ্রেস আজ ‘জয় ভীম’ বলতে বাধ্য হয়েছে। কংগ্রেস রং বদলাতে খুবই পারদর্শী…কিছু তাঁদের মুখোশ খুলে যাচ্ছে।

সকাল থেকেই সংসদ চত্বরে মার্কিন মুলুক থেকে ভারতীয় অধিবাসীদের শিকল বেঁধে ফেরানোর ইস্যুতে সুর চড়িয়েছিল কংগ্রেস। লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে মোদীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমেছিল অন্যান্য সাংসদরা। গতকালই এই অবৈধ অভিবাসীদের দেশের ফেরানোর একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। যেখানে দেখা যায়, হাতে-পায়ে কার্যত শিকল পরিয়ে সেদেশে বসবাসকারী ভারতীয় অভিবাসীদের নির্দিষ্ট প্লেনে তুলছে ট্রাম্পের প্রশাসন। আর সেই নিয়েই এদিন ক্ষোভ চড়ান রাহুল। তিনি প্রশ্ন তোলেন, এমন কাণ্ডের পরও কেন চুপ কেন্দ্র?

দীর্ঘ বক্তৃতা – বিরোধীদের আক্রমণের প্রতিশোধ নেওয়ার সুচারু প্রয়াস। প্রায় একচেটিয়াভাবে কংগ্রেসের উপর আক্রমণ শানিয়ে, তুলোধুনা করলেন প্রধান বিরোধী দলটিকে। ‘জরুরি অবস্থা’ আর জওহরলাল নেহরুর মেয়াদকালের ইতিহাস ফুটে উঠলো বারবার। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের পর যখন বিজেপি ক্ষমতায় এসেছিল, দেশ একটি নতুন কাজের ধরণ দেখেছিল… তুষ্টির ভিত্তিতে নয়… বরং সন্তুষ্টির ভিত্তিতে।” আজ আপামর জনগণ আমাদের উন্নয়নের মডেল বুঝতে পেরেছে, দুহাত তুলে সমর্থন করেছে। আমার সরকার একমাত্র, যে প্রান্তিক সম্প্রদায়ের, বিশেষত অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী, নারী এবং ট্রান্সজেন্ডারদের উন্নয়নের জন্য কাজ করে”। শাসক ও বিরোধী উভয় পক্ষের রাষ্ট্রপতির ভাষণকে বিরোধী সাংসদেরা যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আজ সমাজে জাতপাতের বিষ ছড়ানোর চেষ্টা চলছে। বহু বছর ধরে, সমস্ত দলের ওবিসি সাংসদরা ওবিসি প্যানেলের সাংবিধানিক মর্যাদা দাবি করে আসছিলেন। কিন্তু তাদের দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল, কারণ এটি তাদের রাজনীতির জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। কিন্তু আমরা এই প্যানেলকে সাংবিধানিক মর্যাদা দিয়েছি – প্রধানমন্ত্রী বলছিলেন। এরপর উঠে আসে নানাবিধ প্রসঙ্গে; আমাদের সরকার, ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ মন্ত্রে অনুপ্রাণিত হয়ে সাধারণ শ্রেণীর দরিদ্রদের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণ দিয়েছে।” কংগ্রেস কখনই সংবিধানকে সম্মান করেনি। কিন্তু আজ আমরা দেশের সংবিধান প্রণেতাদের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি আর তাঁদের আদর্শে বলিয়ান হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। কিছু মানুষ নিশ্চয়ই এই অভিন্ন দেওয়ানী বিধি আসলে কি তা ভাবছেন, যারা সংবিধান নিয়ে বিতর্ক না করে পড়বেন তাঁরা সত্যটা জানতে পারবেন। আমরা মধ্যবিত্ত ও নব্য-মধ্যবিত্তকে শক্তিশালী করতে চাই। তাই চলতি বাজেটে, আমরা ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর কোনো কর রাখিনি। ‘আত্মনির্ভর ভারত’ — তৈরিতে দেশের যুবকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাই আমরা প্রায় ৩০ বছর পর নতুন শিক্ষানীতি নিয়ে এসেছি। মাতৃভাষায় শিক্ষার অধিকার দিয়েছি। দীর্ঘ অবরুদ্ধ ইতিহাসের কালো অধ্যায় থেকে, কংগ্রেসের কবল থেকে মুক্ত হয়ে আজ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে গোটা দেশ।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!