- এই মুহূর্তে দে । শ
- অক্টোবর ৮, ২০২৫
ইউজিসির-র ‘ত্রুটিপূর্ণ’ খসড়া পাঠ্যক্রমে বিতর্ক, পর্যালোচনায় বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ল কেন্দ্র
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রস্তাবিত নতুন খসড়া পাঠ্যক্রম নিয়ে উত্তাল শিক্ষামহল। জাতীয় শিক্ষানীতি-২০২০ অনুযায়ী তৈরি এই পাঠ্যক্রমে একদিকে যেমন তুলে ধরা হয়েছে প্রাচীন ভারতের জ্ঞানচর্চার দিক, অন্যদিকে তেমনই উঠে এসেছে ‘পুরনো ও অপ্রাসঙ্গিক’ বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ। ফলত, বিষয়টি ঘিরে তৈরি হয়েছে জোর বিতর্ক। এই পরিস্থিতিতে চাপের মুখে পড়ে অবশেষে একটি উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করল কেন্দ্র। কমিটির লক্ষ্য, বিতর্কিত খসড়া পাঠ্যক্রম পর্যালোচনা করা।
চলতি বছরের আগস্টে ইউজিসি যে নতুন পাঠ্যক্রমের খসড়া প্রকাশ করে, তা মূলত রাজনৈতিক বিজ্ঞান, গণিত, রসায়ন, ভূগোল-সহ মোট ৯টি বিষয়ের জন্য। গণিতের খসড়ায় দেখা যায়, অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সূত্র-ভিত্তিক গণিত, ‘কাল গণনা’, বেদীক শুল্বসূত্র থেকে জ্যামিতি, এমনকি ‘ভারতীয় উদ্ভাবন’-এর মতো বিষয়ও। এই প্রচেষ্টাকেই ‘মতাদর্শ চাপানো’র চেষ্টা বলে দাবি করেছেন দেশের একাধিক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ। গত মাসে ৯০০-রও বেশি গণিতবিদ ও শিক্ষাবিদ একটি যৌথ স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি জমা দিয়ে কেন্দ্রীয় উচ্চশিক্ষা সচিবকে জানিয়ে দেন— এই পাঠ্যক্রম ‘গভীর ত্রুটিতে পরিপূর্ণ’ এবং এর ফলে ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষাগত ক্ষতি’ হতে পারে।
তাঁদের অভিযোগ, খসড়া পাঠ্যক্রমে একদিকে যেমন অজস্র তথ্যগত ভুল রয়েছে, তেমনই স্থান পেয়েছে অপ্রাসঙ্গিক ও প্রাচীন বিষয়বস্তু— যেমন, অ্যানালিটিকাল জ্যামিতি ও মেকানিক্স। খসড়া পাঠ্যক্রম নিয়ে কেবল শিক্ষজগৎই নয়, সরব হয়েছে একাধিক রাজ্য সরকারও। কেরালা সরকার ইতিমধ্যেই একটি প্যানেল গঠন করে পাঠ্যক্রম পর্যালোচনা করায়। নিবিড় পর্যালোচনার পর প্যানেলের রিপোর্টে বলা হয়েছে, এ পাঠ্যক্রমে ‘ভারতীয় জ্ঞানপদ্ধতির নামে মতাদর্শ চাপানোর চেষ্টা’ রয়েছে। সেইসঙ্গে রয়েছে ‘অ্যাকাডেমিক স্বায়ত্তশাসনের লঙ্ঘন’ এবং ‘অপ্রাসঙ্গিক তথ্য’। পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে কেরালা সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তারা এই খসড়া নীতি গ্রহণ করবে না। অন্যদিকে, কর্ণাটক সরকার আগেই জানিয়ে দেয়, তারা এই পাঠ্যক্রম মেনে নেবে না। তাদের মতে, ‘এ উদ্যোগ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ফেডারেল কাঠামোকে দুর্বল করার চেষ্টা।’
তবে কেন্দ্রীয় সরকারের এক শীর্ষ কর্তা দাবি করেছেন, এই পাঠ্যক্রম বাধ্যতামূলক নয়, এটি কেবল একটি নির্দেশিকা। তাঁর মতে, ‘শিক্ষা একটি সমবায় বিষয়। রাজ্যগুলি নিজেদের মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। পাঠ্যক্রম চাপিয়ে দেওয়ার প্রশ্নই নেই।’ তিনি আরো জানিয়েছেন, যাঁরা এই খসড়া তৈরি করেছেন, তাঁদের সঙ্গেও আলোচনা করবে বিশেষজ্ঞ কমিটি। ‘আমরা বিশ্বাস করি, কোনো বিষয় অন্তর্ভুক্তির পেছনে তাঁদের নিজস্ব যুক্তি রয়েছে’ বলেছেন তিনি। তবে কেন্দ্র যাই বলুক না কেন, প্রবল বিতর্কে শিক্ষার মান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। পাঠ্যক্রমে আদৌ বিজ্ঞানসম্মত যুক্তি রয়েছে, নাকি মতাদর্শ চাপানোর চেষ্টা? প্রাচীন জ্ঞানকে সম্মান জানাতে গিয়ে কি আজকের বাস্তবতা ও চাকরি-বাজারের চাহিদা উপেক্ষিত হচ্ছে?কেন্দ্র বলছে, এসব প্রশ্নের উত্তরই এখন খুঁজবে বিশেষজ্ঞ কমিটি।
❤ Support Us






