- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- জানুয়ারি ২, ২০২৪
ইন্ডিয়া জোটের চেহারা অস্পষ্ট। ২৯০ আসনে একা লড়বে কংগ্রেস ! ১০০ তে চাই জোটসঙ্গীদের সমর্থন
রামমন্দির উদ্বোধনকে সামনে রেখে বিজেপি দেশ জুড়ে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের দামামা বাজিয়ে দিয়েছে। সারা দেশে নরেন্দ্র মোদিই একমাত্র “গ্যারিন্টি” এই প্রচার করছেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদি। এদিকে এখনো “ইন্ডিয়া” জোট ঠিক করে উঠতে পারল না কোন কোন রাজ্যে, কত আসনে বিজেপির বিরুদ্ধে ইন্ডিয়া মঞ্চের একক প্রার্থী লড়বেন। এরই মধ্যে কংগ্রেস “ইন্ডিয়া” জোট শরিকদের বার্তা দিয়েছে, তারা চাইছে যেকোন ভাবে ২৯০টি আসনে বিজেপির বিরুদ্ধে একা লড়তে। এ ছাড়া ১০০টি আসনে বিজেপি বিরোধী জোট “ইন্ডিয়া”-র শরিক দলগুলির সমর্থন পেতে চাইছে কংগ্রেস। তবে কংগ্রেসের এই আর্জি “ইন্ডিয়া” জোটের শরিকরা মানে কি না সেটাই দেখার। এই ১০০টি আসনের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ৩ থেকে ৫টি আসন রয়েছে। আসনগুলিতে ইন্ডিয়া- জোটের শরিক দল তৃণমূল ও বামেদের সমর্থন পেলে কংগ্রেস জিততে পারে বলে কংগ্রেস শীর্ষ নেতাদের ধারণা। এখন সবটাই নির্ভর করছে শরিক দলগুলি কোথায় কতগুলি আসন কংগ্রেসকে ছাড়তে রাজি হচ্ছে, তার উপরে।
বাংলায় কংগ্রেস-তৃণমূল আসন রফা কোনও ভাবেই হওয়ার জায়গায় এখনও পর্যন্ত নেই। অধীর রঞ্জন চৌধুরী রাহুল গান্ধি, মল্লিকার্জুন খার্গের সঙ্গে বাংলার সমঝোতা নিয়ে বৈঠকে জানিয়ে দিয়েছেন, “তৃণমূলের সঙ্গে, তৃণমূলের দয়ায় প্রার্থী হওয়ার কোনও ইচ্ছা তাঁর নেই।” প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের বড় অংশ বলছেন, “বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে তাদের যেমন লড়াই বিজেপির সঙ্গেও ঠিক একই রকম লড়াই। তাই কোনও অবস্থাতেই বাংলায় কংগ্রেস তৃণমূলের হাত ধরবে না। তবে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়েছে বাংলায় ৭ থেকে ৯টি আসন তৃণমূল তাদের ছাড়লেই বাংলায় তারা তৃণমূলের সঙ্গে সন্ধি করতে প্রস্তুত।
এদিকে তৃণমূল নেত্রী সম্প্রতি দেগঙ্গার সভা থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলায় বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূল একা লড়বে। আর দেশের অন্যত্র “ইন্ডিয়া” জোট বিজেপির বিরুদ্ধে লড়বে।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্যের পর এটা বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না যে বাংলায় ইন্ডিয়া জোটের কোনও ভবিষ্যৎ নেই, এটাই বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য। তৃণমূল নেত্রীর এই ঘোষণার পর কংগ্রেস বাংলায় তৃণমূলের কাছে কত আসন চাইল আর তৃণমূল তাদের কত আসন ছাড়ল সেই আলোচনা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায় বলেই মনে করছে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব।
এদিকে বাংলায় সিপিএম লোকসভা, বিধানসভায় শূন্য হলেও তৃণমূলের তারা যাবে না সেটা “ইন্ডিয়া” জোট গঠনের প্রথম দিন থেকেই বলে আসছেন সিপিএম দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি । তিনি সম্প্রতিও বলেছেন, বাংলায় তৃণমূল-বিজেপি উভয়ের সঙ্গেই তাদের নির্বাচনী লড়াই। তৃণমূল তো বটেই, তৃণমূলের কোনও সহযোগির সঙ্গেও তাদের কোনও আসন সমঝোতার সম্ভাবনা নেই। এই জায়গা থেকে কংগ্রেসকেও প্রচ্ছন্ন একটি বার্তা দিয়ে রেখেছে সিপিএম। তারা বুঝিয়ে দিয়েছে হাই কমান্ডের কথায় বাংলায় যদি কংগ্রেস তৃণমূলের হাত ধরে, তাহলে তাদের কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক থাকছে না। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে বাংলার “ইন্ডিয়া” জোটের ভবিষ্যৎ।
পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, বিহার, দিল্লি, পঞ্জাব, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, জম্মু-কাশ্মীরে ইন্ডিয়া-র শরিক দলগুলির সমর্থনে কংগ্রেস ১০০টি আসনে লড়তে চাইছে কংগ্রেস, এমনটাই কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে । এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে ৩ থেকে ৫টি আসন রয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্ব আগেই বলেছে, তারা এই মুহূর্তে কংগ্রেসের দখলে থাকা দু’টি আসন তারা ছাড়তে রাজি। সম্প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, বাংলায় বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূল একই লড়বে। কাজেই বাংলার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের এই বার্তা কার্যকর না হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। এখন প্রশ্ন দিল্লিতে আম আদমি পার্টির সমর্থন নিয়ে ৫টি, পঞ্জাবে ৮-৯টি আসনেও কংগ্রেস লড়তে তৈরি। অরবিন্দ কেজরীওয়াল এতগুলি আসন কি কংগ্রেসকে ছাড়বেন? এই প্রশ্নও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এর সঙ্গে তামিলনাড়ুতে ডিএমকে-র সমর্থন নিয়ে ৯-১১টি, উত্তরপ্রদেশে ১০-১৫টি, বিহারে ৯-১০টি, মহারাষ্ট্রে ২৪-২৬টি, ঝাড়খণ্ডে ৯টি, জম্মু-কাশ্মীরে ৩টি আসনে কংগ্রেস আসন সমঝোতা করে শরিক দলের সমর্থনে লড়তে চাইছে। কংগ্রেস নেতারা মানছেন, এই ১০০টি আসনের মধ্যে শেষ পর্যন্ত কতগুলি আসনে জোট হবে, তা আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনার পরেই স্পষ্ট হবে। তাই বলা যায় বিজেপি বিরোধী “ইন্ডিয়া” জোটের ভবিষ্যৎ ততটা নিরাপদ নয়, যতটা ইন্ডিয়া মঞ্চ শুরুর সময় মঞ্চের শরিকরা আভাস দিয়েছিলেন।
তৃণমূল সদ্য পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে চার রাজ্যে কংগ্রেসের পরাজয় ও বিজেপির জয়ের জন্য কংগ্রেসকে সরাসরি দায়ী করে বলেছে, ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থী এই পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে দিলে বিজেপি চার রাজ্যে জিততে পারতো না। কংগ্রেস কোনও জোট শরিকের সঙ্গে আলোচনা করেনি। এদিকে কংগ্রেস নেতৃত্ব এখনো মনে করছেন, গোটা দেশে ২৯০টি-র মতো আসনে কংগ্রেস নিজেই লড়বে। সেখানে কোনও আসন সমঝোতা হবে না বা তার সুযোগও নেই। এই ২৯০টি-র মধ্যে আবার ১৯০টির মতো আসনে লড়াই করার মতো যথেষ্ট ভালো প্রার্থী ও আর্থিক শক্তি রয়েছে বলে কংগ্রেস শীর্ষনেতৃত্ব মনে করে। এই তালিকায় মূলত ১০টি রাজ্য রয়েছে। এর মধ্যে কর্নাটকের ২৮টি, তেলঙ্গানার ১৭টি, গুজরাতের ২৬টি, হরিয়ানার ১০টি, অসমের ১৪টি, অন্ধ্রের ২৫টি, ছত্তীসগঢ়ের ১১টি, মধ্যপ্রদেশের ২৯টি, রাজস্থানের ২৫টি, হিমাচলের ৪টি লোকসভা কেন্দ্র রয়েছে। এর বাইরে উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন রাজ্য, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, ওড়িশা, গোয়া, উত্তরাখণ্ডের মতো রাজ্যেও কংগ্রেস একাই লড়বে। কেরলে ইন্ডিয়া-র শরিক বাম দলগুলি থাকলেও সেখানেও কংগ্রেসকে একাই লড়তে হবে। এই ২৯০টি নিজের শক্তিতে ও ১০০টি আসনে শরিকদের সমর্থনে লড়াইয়ের পরে বাকি আসনে মূলত আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে বিজেপি বা এনডিএ-র শরিক দলগুলির লডাই হবে। প্রশ্ন হচ্ছে কি কারণে ইন্ডিয়া মঞ্চের অন্য শরিকরা কি আদৌ কংগ্রেসকে ২৯০টিএসন একক শক্তিতে লড়ার এবং ১০০ আসনে ইন্ডিয়া মঞ্চের শরিকদের সমর্থনে লড়ার জন্য সস্যালয়ের হাত বাড়িয়ে দেবে?
আসলে বিভিন্ন রাজ্যের নিরিখে এই ইন্ডিয়া জোট শরিকরা যে ভাবে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ বজায় রেখে আসন সমঝোতার বার্তা দিচ্ছে, তার মধ্যেই গলদ আছে। দিল্লিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সীতারাম ইয়েচুরি, রাহুল গান্ধি, অখিলেশ যাদব, অরবিন্দ কেজরীওয়াল, শরদ পাওয়ার, নীতীশ কুমার, লালুপ্রসাদ যাদব যত আন্তরিকতা নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধিতার অস্ত্রে শান দিচ্ছেন, নিজেদের রাজ্যে ফায়ার কিন্তু কেউ নিজেদের দিল্লির ইন্ডিয়া মঞ্চের বৈঠকের প্রতিশ্রুতি পালনের ভাবনা ভাবছেন না। আর এখানেই হচ্ছে “ইন্ডিয়া” জোটের আসল সমস্যা, তাই জোট কতটা নিশ্চিত সেটাই প্রশ্ন ?
❤ Support Us