Advertisement
  • এই মুহূর্তে দে । শ
  • ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৫

অযোধ্যায় দলিত তরুণীকে যৌন নির্যাতন করে খুন, তোলপাড় উত্তরপ্রদেশ। ‘হে রাম, কোথায় আপনি?’ – সুবিচার চেয়ে আর্তনাদ সাংসদের

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
অযোধ্যায় দলিত তরুণীকে যৌন নির্যাতন করে খুন, তোলপাড় উত্তরপ্রদেশ।  ‘হে রাম, কোথায় আপনি?’ – সুবিচার চেয়ে আর্তনাদ সাংসদের

বুধবার মিল্কিপুর বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন । আসন্ন নির্বাচনের শেষ পর্যায়ে জোর কদমে প্রস্তুতি চালাচ্ছে বিজেপি এবং সমাজবাদী পার্টি। তারই মাঝে দলিত তরুণীকে যৌন নির্যাতন করে খুনের ঘটনা ঘিরে উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি।

খোদ রামজন্মভূমিতে মিলল তরুণীর হাত-পা বাঁধা বিবিস্ত্র দেহ। ক্ষতবিক্ষত শরীর, চোখ উপড়ে নিয়েছে কেউ বা কারা।। গত বৃহস্পতিবার রাতে ‘ভাগবত কথা’ শুনতে গিয়েছিলেন ওই দলিত তরুণী। আর তাঁর বাড়ি ফেরা হয়নি। শনিবার অয্যোধ্যার একটি নালা থেকে তাঁর নগ্ন, ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। নৃশংস এই ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশকে। নির্ভয়াকাণ্ডের ছায়া দেখছেন কেউ কেউ। এই মৃত্যুকে ঘিরে ভোটের আগে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে উত্তরপ্রদেশের রাজ্য রাজনীতি। কেউ হাউ হাউ করে কাঁদছেন, কেউ বলছেন ‘নাটক’, কেউ আবার দুষছেন প্রশাসনকে। এই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চলছে জিজ্ঞাসাবাদ।ধৃতদের নাম হরিরাম করি, বিজয় সাহু, দিগ্বিজয় সিং ওরফে দুর্বিজয়। গোপন সূত্রে পাওয়া খবর এবং প্রযুক্তির সাহায্যে মেলা তথ্যের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এসএসপি রাজনারায়ণ নাইয়ার। পুলিশের জেরার মুখে ধৃতেরা তাদের অপরাধ কবুল করেছে বলে খবর। তরুণীকে ধর্ষণের পর তাঁর দেহ লোপাট করতে ড্রেনে ভাসিয়ে দেওয়া হয় বলেও জেরায় জানিয়েছে তিন জন। ক্রাইম স্পট থেকে নির্যাতিতার জামাকাপড়ের পাশাপাশিই ধৃতদের পোশাকের অংশও মিলেছে। ধৃত দিগ্বিজয় সিংয়ের জ্যাকেটের পোড়া বোতাম পাওয়া গিয়েছে ঘটনাস্থল থেকে। এসএস পি আরও জানিয়েছেন, যৌন নির্যাতনের সময়ে মাদকাসক্ত এবং মত্ত অবস্থায় ছিল অভিযুক্তরা। তবে ধৃতদের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের যোগসূত্র মেলেনি।

রবিবার ঘটনার প্রতিবাদে নাটকীয়ভাবে সাংবাদিক বৈঠক করে সুবিচার চেয়েছেন ফৈজাবাদের সাংসদ অবধেশ প্রসাদ। তাঁকে রীতিমতো কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গিয়েছে। সমাজবাদী পার্টির সাংসদের আর্তনাদ, “হে মর্যাদা পুরুষোত্তম রাম, হে মা সীতা, আপনারা কোথায়? আমি দিল্লি যাব। লোকসভায় এই ইস্যুতে সরব হব। সুবিচার না পেলে আমি সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেব। এভাবে যদি আমরা নিজেদের মেয়েদের রক্ষা করতে না পারি, ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।” এরপরই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। মিল্কিপুর বিধানসভা উপনির্বাচন বুধবার। এলাকায় জোর কদমে প্রস্তুতি চালাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলি। বড় বড় নেতার আনাগোনা চলছে। গত লোকসভা ভোটে মিল্কিপুরের বিধায়কপদ ছেড়ে ফৈজাবাদের সাংসদ হয়েছিলেন সমাজবাদী পার্টির অবধেশ প্রসাদ। ফলে বিধায়ক শূন্য হয়ে যায় মিল্কিপুরের বিধানসভা আসন। ওই আসন জিততে মরিয়া বিজেপি এবং সমাজবাদী পার্টি। অবধেশ প্রসদাদের ছেলে অজিত প্রসাদ এ বার সমাজবাদী পার্টির হয়ে লড়ছেন। বিজেপির টিকিটে লড়ছেন চন্দ্রভান পাসওয়ান। গত ৩৩ বছরে এই কেন্দ্রে একবারমাত্র জয়ের মুখ দেখেছে বিজেপি। গুরুত্বপূর্ন ওই আসনটি নিজেদের ঝুলিতে ভরতে উপনির্বাচনের আগে তাই এক মাসে পাঁচ বার ভোটপ্রচারে গিয়েছেন যোগী আদত্যনাথ । তারই মাঝে ঘটে যাওয়া এত বড় কাণ্ড ঘিরে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। নৃশংস এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, উন্নাও, হাথরাসের পর অযোধ্যা, কেন বার বার উত্তরপ্রদেশ?

নির্বাচনী সভা থেকে অবধেশকে নিশানা করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। ভাষণে তিনি বলেন, ‘‘ এসব নাটক! আপনাদের মনে আছে, অযোধ্যার আর এক দলিত কন্যার সঙ্গে একই রকম ঘটনা ঘটিয়েছিল সমাজবাদী দলের এক নেতা? এ বারও তলিয়ে দেখুন , দেখা যাবে সমাজবাদী দলেরই কোনও ঘৃণ্য জন্তু এই অপরাধ করেছে।’’ রবিবার রাজ্য মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরাও নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁরাও সমালোচনায় বিঁধেছেন সাংসদ অবধেশকে।

সমাজবাদী দলের প্রধান অখিলেশ যাদব, দলের সাংসদের সমর্থনেই বলেন, , ‘অমানবিক ঘটনায়’ প্রকৃতই আঘাত পেয়েছে তাঁর দল। ইউপির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, পিডিএ — পিছড়া, দলিত এবং সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ নামিয়ে আনছে রাজ্যের বিজেপি সরকার। এই ধরনের ঘটনা ঘটছে শাসক দলের মদতেই।

এই ঘটনায় দিল্লির ভোট ও মিল্কিপুরের উপনির্বাচনের মুখে বিজেপিকে কোণঠাসা করতে চায় বিরোধীরা। অখিলেশের সমালোচনার সুর ধরেই যোগী সরকারকে বিঁধেছেন কংগ্রেস সাংসদ তথা বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। স্থানীয় প্রশাসনকে অকর্মণ্যতাকেও দুষেছেন তিনি। রাহুল বলেন, ‘যদি প্রশাসন আগেই নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগ শুনত, তা হলে হয়তো মেয়েটির প্রাণ বেঁচে যেত। এই ঘৃণ্য অপরাধের জন্য আরও এক মেয়ের জীবন শেষ হয়ে গেল। আর কত পরিবারকে এ ভাবে যন্ত্রণা পেতে হবে?’ একইসঙ্গে তাঁর অভিযোগ উত্তরপ্রদেশের ‘বহুজন-বিরোধী’ বিজেপি সরকারের মদতেই দলিতদের উপর নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে। ঘটনায় অবিলম্বে তদন্ত দাবি করে দোষীদের কড়া শাস্তির দাবি তুলেছেন চেয়েছেন রাহুল। কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেন, ‘বিজেপির জঙ্গলরাজে দলিত, আদিবাসী, গরিব এবং পিছিয়ে পড়া শ্রেণির আর্তনাদ শোনার কেউ নেই! এখন দলিতদের উপর অত্যাচারের আর এক নাম উত্তরপ্রদেশ সরকার!’
অন্যদিকে, পরিবারের অভিযোগ যৌন নির্যাতন করে খুন হলেও পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের পরেই বলা যাবে নিহত তরুণী নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন কি না। তবে যুবতীর মৃত্যুর কারণ অতিরিক্ত রক্তপাতের ফলে হয়েছে; স্বীকার করেছে পুলিশ।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!