Advertisement
  • দে । শ স্মৃ | তি | প | ট
  • অক্টোবর ৭, ২০২৩

কানাডায় প্রয়াত, সমাহিত শতাধিক গ্রন্থের জনক, কবি আসাদ চৌধুরী

জানিয়ে গেলেন নিঃশব্দে, ঘরে ফেরা সোজা নয়, আর

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
কানাডায় প্রয়াত, সমাহিত শতাধিক গ্রন্থের জনক, কবি আসাদ চৌধুরী

বৃহস্পতিবার, কানাডার এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান কবি আসাদ চৌধুরী লোকান্তরিত হয়েছেন। বয়স হয়েছিল ৮০। গত কয়েকমাস আগে, তাঁর ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ে ।শ্বাসকষ্ট আর কিডনিজনিত সঙ্কটও দেখা দেয় কবির। আসাদ-এর মৃত্যুর খবর পেয়েই তাঁর সমগামী ও গুণমুগ্ধরা শোকাহত হন। শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ সাহিত্য একাডেমির সভাপতি জয়দুল হোসেন সহ বহু কবি, রাজনীতিক ও সংস্কৃতি জগতের বিশিষ্টজন। পরবাসে প্রিয় কবির মৃত্যু কেউই মেনে নিতে পারছেন না। কেউ কেউ ভেবেছিলেন, তাঁর মৃতদেহ দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।বাংলাদেশ সরকারের সহমর্মিতা সত্ত্বেও তা সম্ভব হয়নি। মেয়ে নুসরত জাহান, দুই ছেলে আসিফ চৌধুরী, জারিফ চৌধুরী আর তাঁর নাতি-নাতনিরা কানাডায় রয়েছেন। তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেন, কবিকে ওখানেই সমাধিস্থ করা হবে। শুক্রবার পরিবারের সদস্য, কানাডাবাসী বন্ধু, গুণমুগ্ধদের উপস্থিতিতে ওখানেই আসাদকে সমাহিত করা হয়।

আসাদের জন্ম ব্রাক্ষণবাড়িয়ায়, ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। শৈশবে তাঁকে আলোড়িত করে ৫২-র ভাষা আন্দোলন, জাতিসত্তার নানা রকম সংগ্রাম। ছাত্র জমানায় ঘটতে থাকে একের পর এক রাজনৈতিক ঘটনা। ওই পরিবেশেই তাঁর কবিতাযাপন শুরু। পরে, ঢাকায় চলে আসেন, তাঁর কবিতা চর্চায় জোর হাওয়া বইতে থাকে, তখন খ্যাতির মধ্যগগনে শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, শহীদ কাদরী, মহাদেব সাহা, হাফিজুর রাহমান, আলী আহসন, আহসন হবিব-এর মতো কবিদের সঙ্গ আসাদকে ঋদ্ধ করে তোলে। গভীর বন্ধুত্বে জড়িয়ে পড়েন রফিক আজাদ, আব্দুল মান্নান সৈয়দ, আবুল হাসান, রুদ্র মহাম্মদ শহীদুল্লাহ, নির্মলেন্দু গুণদের সঙ্ঘবদ্ধ কবিতা আন্দোলনে, ১৯৬৪ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত। পেশায় তিনি একজন শিক্ষক, ৫৫-৮৮ পর্যন্ত ভয়েস অফ জার্মানির সংবাদদাতা, ঢাকার বিভিন্ন কাগজেও সংবাদ কর্মী হিসেবে কাজ করেন। ৮৭ সালে সরকারি পরিচালক পদে যোগ দেন বাংলা একাডেমিতে । গ্রাম থেকে ঢাকার নগর জীবন ও চাকরি জীবনের নানা পর্যায় অতিক্রম করেছেন কবি আসাদ চৌধুরী। লোকায়ত যাপনের মাধুর্য, দুঃসহ বেদনা, নাগরিক স্থিতিহীনতায় গড়ে ওঠে তাঁর কবি–স্বরূপ। কবিতা, প্রবন্ধ, ছোটোদের জন্য রচিত ছড়া, পদ্য ও অনুবাদ সংকলন নিয়ে আসাদের বইয়ের সংখ্যা শতাধিক। বিলম্বিত প্রকাশ, ১৯৭৫ সাল বের হয় তাঁর প্ৰথম কবিতার বই ‘তবক দেওয়া পান’ । এ সঙ্কলনের ভেতরে ছড়িয়ে থাকা কবিতা পড়ে বিদগ্ধ ও সাধারণ পাঠক বুঝতে পারেন, আসাদ শিকড়হীন নন, তাঁর সাকিন নির্দিষ্ট, স্বতন্ত্র। বাংলা কবিতার রোমান্টিক ঐতিহ্যের বিত্তে পরিপূর্ণ। আসাদের অন্যতম কৃতিত্ব, বাংলাদেশে প্রায় বর্জিত উর্দু কবিতায় পুনর্বাসন। ধারাবাহিক নিষ্ঠায় তর্জমা করেছেন স্বদেশহীন উর্দু ও আরবি কবিতা। সংবেদনশীলতায় ভরাট, কবি আসাদের মৃত্যুতে ষাটের দশকের বাংলা কবিতার ঘরানা হঠাৎ থমকে গেল। স্তব্ধ হয়ে পড়ল তখনকার কবিদের ভবঘুরে দিনযাপন এবং বন্ধুত্বের অবাধ মানচিত্র।যেখানে বাঙালি, সেখানেই বেজে উঠত তাঁর কন্ঠচিহ্ন। এপারের বঙ্গেও তাঁর অনুরাগীদের বৃত্তের পরিসর বিস্তৃত। সবাইকে নিঃশব্দে জানিয়ে গেলেন আসাদ, ‘ঘরে ফেরা সোজা নয়’, আর।

 


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!