Advertisement
  • দে । শ
  • নভেম্বর ২, ২০২১

শহরতলির ইমারত থেকে প্রত্যন্ত গ্রামের চিলেকোঠা, মাটির প্রদীপের তলায় বাড়ছে আরও অন্ধকার

রঙবাহারি এলইডি'র দাপাদাপিতে মুখভার মৃৎশিল্পীদের ।

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
শহরতলির ইমারত থেকে প্রত্যন্ত গ্রামের চিলেকোঠা, মাটির প্রদীপের তলায় বাড়ছে আরও অন্ধকার

আলোর উৎসব দীপাবলিতে  আলোর রোশনাইতে ভোরে উঠবে গোটা বঙ্গের সর্বত্র। অশুভের ওপর শুভের জয়ের প্রতিফলিত আলোর ছটায় ভরে উঠবে প্রতিটি বাড়ির অঙ্গন-প্রাঙ্গন। প্রদীপের শিখা আর মোমবাতির আলোয় আলোকিত হবে ইট-কাঠ-কংক্রিটের শহরতলির ইমারত থেকে প্রত্যন্ত গ্রামের চিলেকোঠা। মাটির প্রদীপের আলোয় সেজে ওঠে এই আলোর উৎসব। কিন্তু বিগত কিছু বছর ধরে বিদেশী আলোর দাপটে মাটির প্রদীপের চাহিদা কমতে কমতে তলানিতে ঠেকেছে।

কালীপুজোর মরসুমেও মাথায় হাত মৃৎশিল্পীদের। কিন্তু একসময় যে শিল্পীদের হাতের তৈরি মাটির প্রদীপের আলোয় প্রত্যেকটি গৃহস্থের বাড়ি আলোয় ঝলমল করে উঠত, মাটির প্রদীপের  কদর কমে যাওয়ায় সেই শিল্পীদের ঘরই এখন অন্ধকার। সরষের তেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে, কাঁচামালের দাম ও যথেষ্ট আকাশ ছোঁয়া। অন্যদিকে স্থানীয় বাজারগুলিতে আপাতত সস্তা অথচ আধুনিক (বিদেশী) এলইডি আলোর  দাপাদাপিতে মুখভার মৃৎশিল্পীদের।

জনৈক এক মৃৎশিল্পীর কথায়, আমাদের কয়েক পুরুষ এই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছি। কিন্তু উপার্জন তলানিতে ঠেকায় আমার সন্তানরা আর এই কাজ করতে চাইছে না। ওরা নিজেদের মতো করে অন্য কাজ বেছে নিচ্ছে। জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে আমাদের মজুরি কিন্তু সমানুপাতে বাড়েনি। পাশাপাশি পুজো উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। প্রশাসনও নির্বিকার। ফলে একাহাতে পৈতৃক এই শিল্প আর কতদিন সামলাতে পারব  জানি না। আগে পুজোর মরসুমেও প্রদীপ বিক্রি করে উপার্জিত টাকায় সংসার , ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া সবই একা হাতে সামালানো সম্ভব ছিল কিন্তু এখন  বিদেশি টুনিলাইট ও এলইডি বাল্বে  বাজার ছেয়ে গিয়েছে। প্লাস্টিকের প্রদীপও বাজারে পাওয়া যায়। এদের দৌরাত্ম্যে আমাদের দিকে কেউ মুখ ফিরেও তাকায় না। আমাদের মধ্যে অনেকেই অন্য পেশায় চলে গিয়েছেন। আর এইভাবে চলতে থাকলে সেই সময় বেশি দূর নেই, যেদিন ওই মাটির প্রদীপে আলো জ্বেলেই মৃৎশিল্পী খুঁজতে হবে।’

শহর কলকাতার চাঁদনী মার্কেট থেকে শুরু উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ির হংকং মার্কেট সর্বত্র ছেয়ে গেছে চিনা তথা বিদেশি আলোর সম্ভারে। ছোটো থেকে বড়ো ব্যবসায়ীরা দু পয়সা লাভের আশায় বিদেশি আলোর পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানে। ত্রেতাদেরও অনেকেরই বক্তব্য   ‘সরষের তেলের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছে। তাছাড়া মাটির প্রদীপগুলিরও দাম অনেক। সুন্দর দেখতে এক-একটি মাটির প্রদীপ ২০-৩০ টাকায় বিক্রি হয়। তার তুলনায় আধুনিক এলইডি বাল্বগুলি  কিনলে সেগুলি পরের বছরও ব্যবহার করা যায়। তাছাড়া ইদানিং মানুষের মধ্যে ধৈর্য ও কমতে শুরু করেছে। মাটির প্রদীপ কিনে আনার পর সেগুলো ধুয়ে শুকিয়ে তারপর জ্বালাতে হয়। সলতেও পাকাতে হয়। এখন মানুষের কাছে অত সময় নেই ধৈর্যও নেই। তাই প্লাস্টিক ও এলইডি বাতির প্রতিই মানুষের আগ্রহ বাড়ছে।’


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!