Advertisement
  • প্রচ্ছদ রচনা
  • জুন ২৭, ২০২২

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটবে নাকি নতুন কোনও অধ্যায় রচিত হবে? শীর্ষ আদালতে মহারাষ্ট্রের বিদ্রোহীরা, তৈরি উদ্ধবরাও

উদ্ধব-পত্নীর ফোন, ২০ বিদ্রোহী বিধায়কের ঘর ওয়াপসির ইঙ্গিত

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটবে নাকি নতুন কোনও অধ্যায় রচিত হবে? শীর্ষ আদালতে মহারাষ্ট্রের বিদ্রোহীরা, তৈরি উদ্ধবরাও

শিবসেনার দুই শিবিরই এখন তেতে রয়েছে। একদিকে বিক্ষুব্ধ নেতা একনাথ সিন্ডে দাবি করছেন, ‘উদ্ধবের খেলা শেষ। আমরা মহাবিকাশ আগাড়ির সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছি। কারণ এটি একটি ‘অপবিত্র জোট।’ তখনই পাল্টা হুঙ্কার উদ্ধব-পুত্র আদিত্যর- ‘সাহস থাকে তো দল ভেঙে বেরিয়ে যান। ভোটে লড়ে প্রমাণ করুন। আমরা প্রস্তুত!’ তাঁর সংযোজন, ‘আপনাদের সামনে দুটো রাস্তা খোলা। যদি ফিরতে চান ফিরে আসুন, তা না-হলে ভোটে লড়ুন। বিশ্বাসঘাতকদের আমরা দেখে নেব।’

এই আবহেই রবিবার সন্ধেয় শিন্ডে শিবির সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে। তাদের বক্তব্য, শিন্ডে-সহ ১৬ জনকে ডিসকোয়ালিফাই করার যে নোটিস ডেপুটি স্পিকার দিয়েছেন, তা অবৈধ। এই বিষয়ে ডেপুটি স্পিকার যাতে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে না-পারেন, সে জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করুক সুপ্রিম কোর্ট। কারণ ডেপুটি স্পিকারের বিরুদ্ধেই অনাস্থা আনা হয়েছে, আবার উনি নিজেই তা খারিজ করেছেন। কিন্তু তা নিয়ে যতক্ষণ না চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হচ্ছে, তত ক্ষণ পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় থাক। এখানেই শেষ নয়, অজয় চৌধুরিকে বিধানসভায় শিবসেনার নেতা মনোনয়ন করাকেও সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে সিন্ডে শিবির। গুরুত্বের বিচারে এই মামলা আজ, সোমবারই শীর্ষ আদালত শুনবে।

সংবাদসংস্থা এএনআইকে আদিত্য ঠাকরে বললেন, গত ৩০ মে সিন্ডেকে মুখ্যমন্ত্রীর পদে মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসার প্রস্তাব দিয়েছিলেন উদ্ধব ঠাকরে । কিন্তু সেই সময়ে তিনি নাটক করেছিলেন এবং এখন মাত্র এক মাস কাটতে কাটতেই তিনি বিদ্রোহী রূপ ধারন করলেন। সিন্ডের চলে যাওয়ায় ভালই হয়েছে। আদিত্যর কথায়, এতে দল পরিষ্কার হবে। ঠাকরে পুত্র যোগ করেছেন যে বিদ্রোহী বিধায়কদের দল বর্তমানে গুয়াহাটির একটি পাঁচতারা হোটেলে জোটবদ্ধ হয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, শিবসেনায় বিশ্বাসঘাতকদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে না।যদিও সিন্ডের বিদ্রোহী দলের বিধায়ক-মন্ত্রীরাও এখনই মুম্বই ফেরার কথা ভাবছেন না। আরও অন্তত সপ্তাহখানেক গুয়াহাটিতেই থেকে যেতে চান তাঁরা। একনাথের আশঙ্কা, মুম্বই ফিরে গেলে একাধিক বিধায়ক আবার শিবির বদলে উদ্ধব শিবিরে নাম লেখাতে পারেন।
বিদ্রোহের পর শিন্ডে ও রাজ্যের ১৫ বিধায়কের বিধায়ক পদ খারিজের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিয়েছেন উদ্ধব ঠাকরে। এর বিরুদ্ধেই সুপ্রিম কোর্টে গেলেন সিন্ডে ও অন্যান্য বিধায়করা। তবে সর্বোচ্চ আদালতে তাঁদের দাবি, ডেপুটি স্পিকারের বিরুদ্ধে যতক্ষণ পর্যন্ত অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত ওই ১৫ বিধায়ক ও একনাথ সিন্ডের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।

উল্লেখ্য বিদ্রোহীদের ঘরে পেরাতে পিছিয়ে নেই মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধবের স্ত্রী। আপামর শিবসৈনিকরা ভালোবেসে তাঁকে ডাকেন ‘বহিনীসাহেব’ নামে। মারাঠি ভাষায় যার অর্থ বউদি। শিবসেনা সংসারে গৃহযুদ্ধ থামাতে রশ্মি কোমড় বেঁধে নেমে পড়েছেন ময়দানে। বিদ্রোহী বিধায়কদের স্ত্রীদের মাধ্যমেই তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন তিনি। বার্তা দিচ্ছেন ঘরে ফেরার। প্রাথমিকভাবে বিদ্রোহীদের মান ভাঙাতে সফল মুখ্যমন্ত্রীর সহধর্মিনী। সূত্রের খবর, বহিনীসাহেবের বার্তা পেয়ে সিন্ধে শিবিরের অন্তত ২০ জন বিধায়ক ঘর ওয়াপসির ইঙ্গিত দিয়েছেন উদ্ধবকে।

মহারাষ্ট্রের ডোম্বিভালির এক মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান রশ্মি ঠাকরে। পড়াশোনা বাণিজ্য নিয়েই। স্নাতক হওয়ার পর ১৯৮৭ সালে জীবনবিমা নিগমে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। রাজ ঠাকরের বোন জয়বন্তীর অন্তরঙ্গ বন্ধু হওয়ার সুবাদেই বালাসাহেবের পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। আর উদ্ধবের সঙ্গে বিয়ে ১৯৮৯ সালে। মাতশ্রীর অন্দরমহলে প্রবেশের পর কোনওকালেই নিছক উদ্ধবের ঘরণী বা পরিবারের বড় বউ হিসেবে থাকতে পারেননি রশ্মি। দীর্ঘদিন সামলাচ্ছেন শিবসেনার দলীয় মুখপত্র ‘সামনা’র সম্পাদকের দায়িত্ব। সক্রিয় রাজনীতি না করলেও আড়াল থেকেই বেশ কিছু কঠিন পরিস্থিতি সামলানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। এবারও কঠিন সঙ্কটে স্বামীর পাশে এসে দাঁড়ালেন রশ্মি।

রশ্মি বিকল্প পথে বিদ্রোহীদের মান ভাঙানোর কাজ করছেন ঠিকই, কিন্তু প্রকাশ্যে সিন্ডে শিবিরকে চাপে রাখার কৌশল থেকে একচুলও সরতে নারাজ উদ্ধব অনুগামীরা। কীসের ভয়ে বিদ্রোহী বিধায়করা মুম্বই ফিরছেন না, রবিবার সরাসরি এই প্রশ্ন তুলে হুঁশিয়ারি দিলেন শিবসেনা সাংসদ সঞ্জয় রাউত। তাঁর কথায়, ‘বিদ্রোহীরা দাবি করেছেন, তাঁদের সঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। তাহলে কেন গুয়াহাটিতে লুকিয়ে রয়েছেন? মুম্বইতে আসুন। আমি নিজে বিমানবন্দরে গিয়ে ওঁদের অভ্যর্থনা জানাব।’ একইসঙ্গে হুঙ্কার, ‘সাহস থাকলে বিধায়ক পদ ছেড়ে আবার নির্বাচনে দাঁড়ান। ভোটভিক্ষা করুন নিজেদের নামে, শিবসেনা বা বালাসাহেবের নাম ব্যবহার করবেন না।’
সাংসদের এই হুঁশিয়ারির সুর ধরেই মহারাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ-আন্দোলন অব্যাহত শিবসেনা কর্মী-সমর্থকদের। নিশানায় সিন্ডে শিবির। রবিবার পুনে শহরে ‘জুতা মারো আন্দোলন’ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। একনাথ সিন্ডের ছবিতে জুতো মেরে প্রতীকী প্রতিবাদ চলে। এইসব কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে টুইট করে তাঁর উপর আস্থা রাখার আর্জি জানিয়েছিলেন একনাথ সিন্ধে। রবিবার সেই প্রসঙ্গ তুলে সঞ্জয় রাউতের তীব্র কটাক্ষ, ‘মুম্বই ফিরলে ওঁরা আসল বিদ্রোহ টের পাবেন।’ তবে, যাঁরা দলে ফিরতে ইচ্ছুক, তাঁদের জন্য শিবসেনার দরজা খোলা রয়েছে বলেও এদিন জানান তিনি। অর্থাৎ, নরমে-গরমে সিন্ডে শিবির ভাঙিয়ে বিজেপির ইচ্ছা বানচাল করাই এখন লক্ষ্য বালাসাহেবের উত্তরসূরি উদ্ধবের।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!