- প্রচ্ছদ রচনা
- জুন ২৪, ২০২২
আরও কোণঠাসা হচ্ছেন উদ্ধব! সিণ্ডে শিবিরে ৫০ বিধায়ক, যোগ দিচ্ছেন সাংসদরাও।

সময় যত এগোচ্ছে ততই দলে নিঃসঙ্গ হচ্ছেন উদ্ধব ঠাকরে । একে একে বিধায়করা তো সঙ্গ ছাড়ছেনই, সাংসদরাও ধীরে ধীরে ভিড়ে যাচ্ছেন একনাথ সিণ্ডের দলে। যা পরিস্থিতি, তাতে কোনও অতিআশ্চর্য কিছু না ঘটলে উদ্ধবের গদি বাঁচা মুশকিল।বৃহস্পতিবার রাতে সিণ্ডে শিবিরের তরফে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। সেখানে দাবি করা হয়, শিব সেনার ৪২-সহ তাঁদের কাছে মোট ৪৯ জন বিধায়ক রয়েছেন। একটি ভিডিওতে গুয়াহাটির হোটেলে বিজেপির হেফাজতে থাকা অনুগামী বিধায়কদের উদ্দেশে সিণ্ডেকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘একটি জাতীয় দল আমাদের সমর্থন দিচ্ছে। তারা বলেছে আমাদের একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সবার সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ শুক্রবার আবার তিনি দাবি করেছেন, বিধায়ক সংখ্যা বেড়ে ৫০ হয়েছে। শুধু বিধায়করা নন, সিণ্ডের শিবিরে এবার যোগ দিচ্ছেন সাংসদরাও। জানা গেছে, অন্তত ৯ জন শিব সেনা সাংসদও সিণ্ডে শিবিরে যোগ দেবেন। তার মধ্যে জনা কয়েক ইতিমধ্যেই গুয়াহাটি পৌঁছে গিয়েছেন।
এই অবস্থায় শিব সেনার মুখপাত্র তথা দলের সাংসদ সঞ্জয় রাউত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর উদ্দেশে বলেন, “যদি আপনাদের সমস্যা নেতৃত্ব নয় জোট সরকার হয়, যদি আপনারা শিব সেনা ছাড়বেন না বলছেন, তাহলে আমরা মহা বিকাশ আগাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে রাজি। কিন্তু তার বাইরে এসে উদ্ধব ঠাকরের সামনে নিজেদের শর্ত রাখুন। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘরে ফিরলে দাবি নিয়ে ভাবনাচিন্তা হবে।’ পালটা সিণ্ডে শিবির জানিয়ে দিয়েছে, তাঁদের সঙ্গে ৫০ বিধায়ক রয়েছে। তাই ফেরার কোনও কারণই নেই।
বুধবার রাতেই মহারাষ্ট্রে বিজেপির সরকার গঠনের তৎপরতা প্রকাশ্যে এসে পড়ে। উপমুখ্যমন্ত্রী পদের আশ্বাস দিয়ে সমর্থন চাওয়া হয়। শিব সেনা শেষপর্যন্ত সিণ্ডেদের কাছে ‘আত্মসমর্পণ’করে এনডিএতে ফেরার চিন্তাভাবনা করে থাকলেও, তা ঠেকাতে তৎপর মহা বিকাশ আগাড়ির দুই শরিক এনসিপি এবং কংগ্রেস । তারা উদ্ধব সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে। কংগ্রেস ‘ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ’ নীতি নিয়ে চলার পক্ষে। এনসিপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর পাওয়ার দাবি করেছন, আগাড়ির হাতে এখনও যথেষ্ঠ সংখ্যক বিধায়ক আছে। বিধানসভাতেই গরিষ্ঠতার প্রমাণ নেওয়া হোক। কিন্তু, শিব সেনার কাছে সরকার বা জোট নয়, দলকে ভাঙনের হাত থেকে বাঁচানোই এখন সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। রাউত জানিয়েছেন, বিদ্রোহী বিধায়করা ঘরে ফিরলে শিব সেনা, কংগ্রেস এবং এনসিপির সঙ্গে জোট ভাঙতেও প্রস্তুত! এতেই স্পষ্ট, দলের ভাঙন ঠেকাতে এখন মরিয়া শিব সেনা।
মহারাষ্ট্রের ক্ষমতা দখলে বিজেপির প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করবে প্রদেশ কংগ্রেস। এমনই দাবি করলেন মহা বিকাশ অগাড়ি জোটের কংগ্রেস নেতা নানা পাটোলে। রাজ্যে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে তিনি বলেন, ‘ইডি-কে কাজে লাগিয়ে এ সব সাজাচ্ছে বিজেপি। ওরা ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। ওদের অবশ্যই মনে রাখা দরকার যে আজ ওরা (কেন্দ্রে) ক্ষমতায় রয়েছে, আগামিকাল অন্য কেউ সে জায়গায় বসবে।’
বহু বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও বিধায়কদের সঙ্গে দেখা করেননি শিবসেনা প্রধান তথা মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে। এমনই দাবি করলেন বিদ্রোহী সেনা বিধায়ক সঞ্জয় শিরসাট। তাঁর কথায়, ‘বিধায়কেরা আগে বার বার উদ্ধব’জিকে জানিয়েছেন যে কংগ্রেস এবং এনসিপি, দুই দলই শিবসেনাকে (জোট থেকে) সরাতে চাইছে। এ নিয়ে উদ্ধব’জির সঙ্গে দেখা করার সময় চাইলেও তিনি কখনই তাঁদের সঙ্গে দেখা করেননি।’
রাজ্যপাল এবং ডেপুটি স্পিকারকে ৩৭ জন সেনা বিধায়ক চিঠি লিখলেন। সেখানে তাঁরা স্পষ্ট ভাবেই জানিয়ে দিয়েছেন, আইনসভায় তাঁদের দলনেতা একনাথ সিন্ডে। চিঠিতে নাম ও গন্ধ নেই উদ্ধব ঠাকরের।ওই চিঠি আসলে পাল্টা চাল সিন্ডের। কারণ, তার আগেই উদ্ধব শিবির থেকে ডেপুটি স্পিকারকে চিঠি দিয়ে ১২ জন বিদ্রোহী বিধায়ককে ‘ডিসকোয়ালিফাই’ (অযোগ্য) করার আবেদন জানানো হয়। সিন্ডে ওই আবেদনকে শুধু ‘বেআইনি’ বলেননি, তাঁর পক্ষে থাকা বিধায়কদের দিয়ে পাল্টা চিঠি পাঠিয়েছেন ডেপুটি স্পিকারের কাছে। যে চিঠিতে তাঁকেই দলনেতা উল্লেখ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার বলেন, ‘আস্থাভোটেই স্থির হবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা কার সঙ্গে।’ আর পওয়ারের এই মন্তব্যেই নতুন করে বুক বাঁধছেন হতোদ্যম শিবসৈনিকদের একটি অংশ। বহু যুদ্ধের পোড়খাওয়া খেলোয়াড় পওয়ার বলেছেন, ‘সবাই জানে কী ভাবে বিদ্রোহী শিবসেনা বিধায়কদের প্রথমে গুজরাত এবং তার পর অসমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দুটো রাজ্যই বিজেপিশাসিত। কারা ওঁদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, তা সবাই বুঝতে পারছে। অসম সরকার কেন ওঁদের সাহায্য করছে? আমি বিশেষ কারও নাম করতে চাই না। কিন্তু আসল ব্যাপার হল বিধানসভায় আস্থাভোট। তখনই দেখা যাবে।’
❤ Support Us