- প্রচ্ছদ রচনা
- ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩
ভারতে আইএসের জঙ্গি ভিত ! তিন রাজ্যের ৬০ এলাকায় একই সঙ্গে এনআইএ-র অভিযান। তল্লাশির উৎস কী, সন্দেহ না নির্দিষ্ট তথ্য ?
সন্ত্রাসের দুরূহ পরিসর কেন বাড়ছে ? প্রতিবেদনে বিশেষ বিশ্লেষণ

ভারতের তিন রাজ্যে আইএসআইএস সমর্থক ও সহানুভূতিশীলদের খুঁজে বের করতে তল্লাশি শুরু করল এনআইএ। সংবাদ সংস্থার খবর, তামিলনাড়ু, কর্নাটক ও কেরালার ৬০ জায়গায় অভিযান চালিয়েছে এনআইএ। এনআইএ সূত্রে খবর, বিভিন্ন ভিডিওর মাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছে ইসলামিক স্টেটস। নেপথ্যে কারা, তাদের খুঁজে বের করতে জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে ।
বুধবার সকালে তামিলনাড়ুতে তল্লাশি শুরু করেন এনআইএ -এর আধিকারিকরা। পরে কর্ণাটক ও কেরলেও অভিযান শুরু হয়। গত বছর কোয়েম্বাটোর ও মেঙ্গালুরুতে সিলিণ্ডার ফেটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। ওই ঘটনায় আইএস যোগের তথ্য পেয়েছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। তখনই সন্দেহ করা হয়, কর্ণাটক ও কেরলের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। তাদের সন্ধানে দুই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অনুসন্ধান চালায় কেন্দ্রীয় সংস্থা ।
এনআইএ আধিকারিকরা কয়েকমাস আগে হিন্দু মন্দিরে সন্ত্রাসবাদী হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে জামিশা মুবিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। দিন কয়েক আগে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর মুবিনের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু বিস্ফোরক বাজেয়াপ্ত করা হয়।
ইতিমধ্যে, নভেম্বরে মেঙ্গলুরুতে অটো রিক্সাতে প্রেসার কুকার নিয়ে যাওয়ার সময় আর একটি দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনায় জড়িত মহম্মদ শরিককে গ্রেফতার করে এনআইএ। ইউএপিএ আইনে শুরু হয় মামলা। পুলিশ সূত্রে খবর, ভারতের আইএসের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মহম্মদ শরিক। তিনি তার দুইজন সহপাঠী সৈয়দ ইয়াসিন ও মুনির আহমেদকে জঙ্গি সংগঠনে নিয়ে আসেন। তিনজনে মিলে কর্ণাটকের শিবমোগা জেলায় বিস্ফোরণের পরিকল্পনা করেছিলেন। ভারতে থেকে কীভাবে আইএস তাদের কার্যকলাপ চালাচ্ছে তা জানতে বহুদিন ধরেই তৎপর ছিল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা। বহু তথ্য সংগ্রহের পর স্পর্শকাতর দাক্ষিণাত্যের ৬০ টি জায়গায় তদন্ত অভিযান শুরু করেছেন সংস্থার কর্মীরা। সন্দেহ আর সংগৃহীত তথ্যই তাঁদের তল্লাশি অভিযানের উৎস।
বিশেষ বিশ্লেষণ
আইএসআইএস কিংবা আলকায়দার অবস্থান ভারতে কতটা জোরদার তার নির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। আলকায়দা উৎসভূমিতেই প্রায় নিশ্চিহ্ন। আইএসআইএসের প্রতিষ্ঠাতা আবু বকর আল বাগদাদির মৃত্যুর পর তার সংগঠনের জঙ্গিরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। একাংশ আশ্রয় নেয় আফগানিস্তানে আর বাকিরা ছড়িয়ে পড়েন সিরিয়া ও ইরাকে। আফগানিস্তানে এখনকার সরকারের বিরোধীরা আইএসআই-এর ভিন্নতর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে মসজিদে, প্রকাশ্য স্থানে হামলা চালাচ্ছে। আফগান মুলুক থেকে পাকিস্তান হয়ে ভারতে তাদের প্রবেশ সহজসাধ্য নয়। পাকিস্তানের শাহবাজ সরকার আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ চাপে জঙ্গিদের রুখতে বাধ্য হয়েছে। এইসব কারণে আইএস জঙ্গিদের ভারত প্রবেশ খুবই কঠিন। দ্বিতীয়ত, উগ্র ও উর্বর মস্তিষ্ক কিছু সংখ্যক নাগরিক ছাড়া ভারতের কোথাও জঙ্গিদের জনসমর্থন নেই। সমর্থনের সামাজিক ভিত বাড়াতে বাস্তববুদ্ধি রহিত নির্বোধরাই হঠাৎ এখানে ওখানে হামলা ঘটিয়ে থাকতে পারে। ভারত-বাংলাদেশ সহ বেশ দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ দেশই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে। শেখ হাসিনা সরকারের কঠোর নীতি গুঁড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে ওখানকার কয়েকটি রাজনৈতিক দল। আগামী নির্বাচনে তাঁরা শেখ হাসিনাকে দেখে নেওয়ার প্রতিজ্ঞা ঘোষণা করেছে। ভারতের অবস্থা স্বতন্ত্র। বিশাল তার বহুমুখী জনপদ। এখানে ওখানে জঙ্গিদের গা ঢাকা দেওয়ার পরিসর বিস্তৃত। তৃতীয়ত, সংখ্যালঘু বিরোধী ঘৃণার রাজনীতি বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর হিংসাকে প্রায়ই উস্কানি দিচ্ছে। সম্প্রদায়ঘেঁষা কয়েকটি সংগঠনের প্ররোচনা ও হুমকিও একধরনের সন্ত্রাস। বিকল্প সন্ত্রাসকে চাঙ্গা করে বহিরাগত অথবা অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসকে রোখা যায় না। দুর্ভাগ্য, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধারীরা সব সন্ত্রাসকে এক নজরে দেখতে অভ্যস্ত নন। আইএসআইএস কিংবা আলকায়দার উপস্থিতি যদি ভারতে নগন্যও হয়ে থাকে, তাকে প্রকারান্তরে রসদ জোগাচ্ছে বিদ্বেষের রাজনীতি। বিরোধীদের ভূমিকাও পরিষ্কার নয়। ঐক্যবদ্ধভাবে সব দল সমবেত কণ্ঠে কখনও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ‘জিরো টল্যারেন্স’ ঘোষণা করেনি। সন্ত্রাস আর সাম্প্রদায়িকতা দুটোই দেশদ্রোহিতার এপিঠ ওপিঠ। ভুল রাজনীতি দুই বিপজ্জনক শক্তিকে ইন্ধন যোগাচ্ছে। সন্দেহ অমূলক নয়, আত্মপরিচয়ের সঙ্কট থেকে রেহাই পেতে তাৎক্ষণিক সন্ত্রাস নির্বোধের অবলম্বন হয়ে উঠছে।
❤ Support Us