Advertisement
  • ক | বি | তা রোব-e-বর্ণ
  • জানুয়ারি ২৯, ২০২৩

কবিতা গুচ্ছ

মনোতোষ চক্রবর্তী
কবিতা গুচ্ছ

চিত্র১ অনিতা রায়চৌধুরী

স্তম্ভিত কবিতা

কবি নীলমণি ফুকনের (১০ সেপ্টেম্বর,১৯৩৩—১৯ জানুয়ারি ২০২৩) মৃত্যু স্তম্ভিত, স্তব্ধ করে দিয়ে গেল আমাদের। তাঁর মৃত্যুতে যে শূণ্যতা তৈরি হয়েছে, তা অবক্ষয়ে আক্রান্ত কবিতার অঙ্গনে, সহজে পূর্ণ হবে বলে মনে হয় না। কারণ স্পষ্ট, ভারতীয় কবিতায় খরা আর ছায়াহীনতা ক্রমশ দীর্ঘ, দীর্ঘতর হয়ে উঠেছে।

প্রসঙ্গত আরো একটি কথা বলা জরুরি। নালমণি ফুকনের মতো প্রগাঢ়, সংযত মেধার মৃত্যুতে, বঙ্গীয় সংবাদ মাধ্যম আর সমাজের উদাসীনতা, নির্বোধ নীরবতা বিস্ময়কর স্তব্ধতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিল। নীলমণি বাংলাভাষায় বহু চর্চিত, বহু অনূদিত কবি। তাঁর প্রগাঢ় অনুভূতি, তীর্যক ভাবাবেগ, বাস্তবের সঙ্গে অবাস্তবের সংযোগ স্থাপনের বিস্ময়কর দক্ষতা বাংলাভাষার বিশুদ্ধ কবি, আর নিখুঁত পাঠকদের বরাবর মুগ্ধ ও ঋদ্ধ করেছে। অবাক হতে হয়, এমন একজন মহান ও সর্বমান্য কবির মূত্যু সংবাদকে পুরোপুরি এড়িয়ে গেলাম আমরা। এই নির্লজ্জ উদাসীনতা কেন , কেন এই রহস্যময় নীরবতা ? ২০২১ সালেও, একইভাবে সামাজিক অবজ্ঞা লক্ষ্য করেছে বাংলার বিবেক। জ্ঞানপীঠ পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছিলেন নীলমণি। খবরটি উহ্য রেখে দিল সমস্ত গণমাধ্যম। একই ধরনের পীড়াদায়ক শীতলতা দেখা গেল আবার। নীলমণির মৃত্যুতে।

শুধু বড়ো কবি নন, বড়ো মাপের বিশুদ্ধ ব্যতিক্রম ছিলেন নীলমণি ফুকন। পাহাড়ের মতো সুদৃঢ় উচ্চতা আর তীক্ষ্ণ নির্জনতা বোধ তাঁকে অগ্রজ-অনুজের অসাধারণ আত্মীয় বানিয়ে দেয় তাঁর স্বভাবে, বাক সংযম গড়ে তোলে প্রায় দৃষ্টান্তহীন শিল্প ভাবনা, যা সম্ভবত বহুকাল জুড়ে অননুকরণীয় হয়ে থাকবে।

নীলমণিকে বাংলাভাষায় অনেকেই অনুবাদ করেছেন। মনোতোষের অনুবাদ স্বতন্ত্র, যথাসম্ভব ফুকনের ভাবনায় জারিত, অবলম্বিত। বিলকুল পূর্বাভিমুখী নয়

নীলমণি  ফুকনের ৬টি কবিতা

অনুবাদ: মনোতোষ চক্রবর্তী

ব্রহ্মপুত্রে সূর্যাস্ত

শূণ্যতার হাত থেকে খসে পড়ল
দিনের হিরণ্ময় হৃদয়-পাত্র
নিঃশব্দে খসে পড়ল
আর ডুবে গেল
বুদবুদে ঝলমলিয়ে উঠল
পাত্রের রক্তিম আধেয় –
মর্মন্তুদ তাঁর উজ্জ্বলতা
মানুষের অন্তিম লালসার
কি প্রজ্জ্বলন !
ঘরে ফিরেছে প্রতিটি দর্শক
জাগলে ব্যথা একই বেদনা সবার
ধোঁয়া আর অন্ধকারের আসমানী স্তরে
নামল স্বয়ংশূন্যতা
নামল হৃদয়ের শূন্যতা

[ কাব্যগ্রন্থ: আরু কি নৈশব্দ ]

হরিৎ প্রান্তরে হঠাৎ

হরিৎ প্রান্তরে হঠাৎ বেজে উঠল  ঘন্টা
জুই না নেভানো চিতার উপরে  এখন সন্ধ্যা ।

জুই: আগুন  [ কাব্যগ্রন্থ:  ফুলি থকা সূর্যমুখী ফুলটোর ফালে]

কী ফুল ফোটালে প্রাণে

কী ফুল ফোটালে প্রাণে
ঠোঁটে ফেটেছে বাঁশিক

ডালভরা তারাগুলি আঁধার নামায় চোখে
ফুরফুরে হাওয়া এসে যেন জামাতে লুকায়
আমি এখন কোথায় মরি , কোথায় মরি আমি
গন্ধ হয়ে গোধূলি জ্বলে আমার এই দেহদানিতে

[ কাব্যগ্রন্থ: কাইট আরু গোলাপ আরু কাইট ]

জন্মদিন

ধোঁয়ার ভিতর দিয়ে উড়ে গেল পাখিটি
জলাশয়ে হাবুডুবু খায়
ও কার ডাক
যুবতীটি এরকম বুক চাপড়ে
কাঁদছে কেন

আজ যে ওর জন্মদিন

[ কাব্যগ্রন্থ: কাইট আরু গোলাপ আরু কাইট ]

ঘুমের মধ্যেও সে আমাকে

ঘুমের মধ্যেও সে আমাকে তাড়া করেছিল
আচ্ছা, কোথায় আছে সে এখন

আচ্ছা নাকি তার মুখে
উপড়ে‌-পড়া সে ঝাঁকড়া গাছ

ঠোঁট দুটিতে বইছে নাকি আজও
রাঙা জলের দুইটি নদী

আচ্ছা নাকি তাঁর দু-চোখে এখনও
সেই দুটি কালো ঘোড়া

আজও সে নিত্য-নিশা
আমার কলজে চেপে রাখে

[ কাব্যগ্রন্থ: ফুলি থাকা সূর্যমুখী ফুলটোর ফালে ]

একজন কবির স্মরণে

আমার নিঃসঙ্গতম অনুভূতিতে
তুমি ফসল ফলাও

তুমি ফসল ফলাও নীল ফুলের
লাল ফলের

আমারা আঙুলের  ডগায় তুমি
লীন হতে চাও

আমার বুকের মধ্যে
তুমি লাল হয়ে ঝুলে থাকার জন্য

যখন শরৎ যায়
যখন হেমন্ত আসে

তুমি কোন কবি

[ কাব্যগ্রন্থ: ফুলি থকা সূর্যমুখী ফুলটো ]

♦♦♦♦♦—♦♦♦♦♦

 

 

 


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!