- ক | বি | তা রোব-e-বর্ণ
- অক্টোবর ২২, ২০২৩
গুচ্ছ কবিতা
চিত্র: এস এইচ রাজা, ১৯৬৮
দূরে আলো দেখে মনে পড়ে যায়
মধ্যমিল, অন্তঃমিল কবিতায় আবার প্রবেশ করছে। কখনো কখনো ক্লান্ত করে তুলছে পাঠককে? আবার অমিলকে শায়েস্তা করতে শ্রুতিমধুর হয়ে উঠছে অন্তমিল বা মধ্যমিলের তির্যকতা।
কবিতায় এখন কি অবক্ষয় যুগ চলছে ? ভাবনার বিষয়। হাজার হাজার কবিতা উড়ছে মুখপঞ্জিতে (ফেসবুক) কেউ কেউ নয় শুধু, সকলেই কবি হয়ে উঠছেন। এ আরেক সঙ্কট। আশা করি, সামনেই বজ্রনিনাদ কিংবা সংযত স্বরের গম্ভীর। ‘আমি’ থেকে কবিতার কি রেহাই নেই ? এ আমির আড়ালে কোন্ আমির বসবাস। সে আমিত্বময়, না আমিত্বহীন ? ভেবে দেখা দরকার। কবিতায় সঙ্গীত কোথায় ? কোথায় কোলাহল কিংবা নির্জনতার আগুন ? কবিতা কি নিজস্ব ভুবন ছেড়ে পালাচ্ছে?
কবিতাকে ঘিরে এরকম নানা প্রশ্ন উঠে আসছে পাঠকের সংক্ষেপিত ভিড় থেকে। এসব প্রশ্ন ভেতরে আর বাইরে রেখে, আসামের বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান উত্তরসুরি সুতপা চক্রবর্তীর দক্ষ অনুশীলন আর অবস্থান লক্ষ্য করছি আমরা।নিশ্চুপ, নির্ভার তার কবিতার দেহ। যা ধীরে ধীরে পুড়ে, ছাই হয় আর সে ছাই আমাদের নিয়ে যায় বিশেষণহীন গার্হস্থ্যে।
বাহার উদ্দিন
২২/১০/২৩
ভ্রমণ
নক্ষত্রের মতো জেগে থাকে যারা; বিশুদ্ধ প্রণয়
পত্র খুলে; আজো ক্লান্তি ঘিরে ধরে তাকে অসময়
এসে কেড়ে নেয় শোক, পীড়া। দেখি জন্মের সমান
আলো এসে খেয়ে নেয় জরা, মৃত্যু,উপবীত প্রাণ !
দেখি দেখি, দেখি তারে আচমকা জলের উপর
চাঁদ ফল পড়ে আছে, চোখে তার চন্দ্রপ্রভা ঘোর
ঘিরে ধরে । চারপাশে শূন্য দোলে শূন্যের জীবন
জল থেকে দেহ সরে, গায়ে লাগে চাঁদের গ্রহণ
দূরে ওই পড়ে থাকে শবদেহ, মাটির কবির
কারা যেন কাঁদে বসে সারারাত, তোমার শরীর
বেয়ে জল নামে ঘরে । পোড়া গন্ধে মাতায় শ্মশান
শূন্য গায়ে চন্দ্র ফোটে একাকার হয়ে ওঠে প্রাণ
নক্ষত্রের মতো, জেগে থাকি একা, নিশ্চুপ নির্ভার
ধীরে ধীরে দেহ পুড়ে, ছাই হয়, শরীর আমার
ছক
জন্মপত্র খুলে বসি; দেখি তাতে লেখা চন্দ্রকলা
দোষ ! গাঢ় রাতে ছক কেটে ছক করি । শোকজ্বালা
ঘুচে যাক, উড়ে যাক মায়াতীত কাল।চুপিসারে
দেখি খাদ্য, শস্য, ফল, ফুল,মুখ থেকে খসে পড়ে
মুখে। আমি দিন গুণে বৃষ্টি আনি জন্মছক দড়ি
রাত্রি চিরে বের হয়, রম্ভাফুল মাঙ্গলিক নারী
চন্দ্রকলা দোষে পায়। শিরশির করে ওঠে রাত
চিনে রাখে চন্দ্রকলা, রম্ভাফল মেখে রাখে চাঁদ
জন্মপত্র খুলে বসে পড়ি, রম্ভাফল মাখি হাতে
অচিরেই সাদা ফুলে ভরে ওঠে মুখ।আর তাতে
লেখা হয় জন্মছক রাশিরাশি, ভাগ্যবিপর্যয়
রম্ভাফলে মুখ রেখে ভুলে যাই—জন্মপরিচয়
দুইহাতে; রম্ভাফল ধরে রাখি, চেপে ধরি তারে
সাদাফুলে মুখ ঢাকে, চারদিকে জন্মছক ওড়ে
শাপ
নক্ষত্রের নীচে বসে আছি।আমাদের মাঝে আর
কোনো শোক নেই। দেহাতীত সবকিছু ঘিরে যার
কাছে আছে অফুরন্ত আলো, সেই আলো খুঁজে পেতে
বসি দুইজন; নক্ষত্রের নীচে,পৃথিবীর হাতে
একরাশ ধূলি ওড়ে। দুইজন ধূলি ঝেড়ে উঠে
পড়ি। পৃথিবীর সীমানায়, নক্ষত্রের মৃত্যু ঘটে
সেই মহামৃত্যু ঘিরে ঘিরে নেচে উঠি দুইজন
মনে পড়ে পৃথিবীর মোহমায়া,গার্হস্থ্য জীবন
ফেলে এসে ধূলি মেখে বসে আছি শেষতম তীরে
দূরে আলো দেখে মনে পড়ে যায়,খুব মনে পড়ে
আমাদের গতজন্ম, ফেলে আসা পৃথিবীর মায়া
মনে পড়ে, আলোহীন এক রাতে আমাদের ছায়া
খেয়ে নিয়েছিল পৃথিবীর লোক। খুব ভয় হয়
নক্ষত্রের নীচে দুইজন বসে থাকি, ভয় হয় !
♦–♦♦–♦♦–♦
❤ Support Us