- ক | বি | তা রোব-e-বর্ণ
- মার্চ ২৪, ২০২৪
কবিতার মনোবাসীর খোঁজে। পর্ব ১৫

চিত্র: শান্তি দাভে
ঠুনকো কোলাহলে সংযত কব্জি
সহজভাবে সহজকথা, কঠিনকথা বলা কি খুব সহজ ? যা অদৃশ্য, অব্যক্ত, আজনবি কিংবা সেকেলে, তা বলবার সময়, তাকে বিভ্রান্ত সংশয়াচ্ছন্ন করে দেয় না— চিন্তার ভেতরে ঘাপটি মেরে বসে থাকা নানারকম সংঘর্ষ ? অন্তর আর বাইরের বিরোধ, এমন কি স্ববিরোধ পেরিয়ে যখন আমরা বেরিয়ে আসি, এবং কঠিনতর ভাবনাকে নিয়ে আসি সামনে, তখন অন্যরকম, অন্যস্বরের মূর্ত কিংবা বিমূর্ত আবহ আমাদের যে মুক্তির খোরাক দেয়, সে প্রাপ্তির, সে শিল্পশর্তের সত্যকে অনুভব করার সুযোগ ছড়িয়ে আছে চারপাশে ? এসব প্ৰশ্ন সহজতর কৌশলে বলা যেত, বলতে পারতাম যে অবনি রায়চৌধুরী কবিতার চিরায়ত ধর্মকে, ধর্মের নির্দেশিত সুন্দরকে পুরোপুরি অক্ষুণ্ণ রেখে, যা ভাবেন, অবিকল বলতে পারেন তা। এ এক সহজিয়া দক্ষতা। অবিনের আহরিত শক্তির উৎস পারিবারিক জাতিগত অথবা সমগোত্রীয়? না ব্যক্তিপ্রতিভা তাঁকে উর্ধ্বারোহনের সঙ্গে একাত্ম করে দিচ্ছে— একথা বলবার মতো সরঞ্জাম নাগালে নেই। এক্ষুনি তা বলা হয়তো উচিত নয়, হ্যাঁ সরাসরি, বলতে পারি, বলতেই পারি যে আমাদের অলিন্দে, আমাদের ছন্দ আর পছন্দের বারান্দায় নতুন গান এসে বসেছে, ওর শব্দে, ওর সম্ভবনায় সহজে হাত বোলাতে ভালো লাগছে। আশ্বস্তবোধ করছি, প্রায় অপ্রতিহত দুর্যোগ আর সর্বনাশের সবরকমের অনুশীলনকে মুছে দেওয়ার জরুরি আয়োজনে ব্যস্ত, মগ্ন (আত্মমগ্ন নয়) তাঁর সংহত, শক্তিমান কব্জি। সাম্প্রতিকতার ঠুনকো, কৃত্রিম আর শ্রুতিকটূ কোলাহলে আশা করি অবিনের নির্মাণ ও বিনির্মাণ নতুন শ্বাস জোগাবে কবিতায়।তাৎক্ষণিকের নির্বোধ নাগরিকতাকে স্মরণ করিয়ে দেবে, তাৎক্ষণিকের ছেড়া ছেঁড়া শব্দ ভেদ করে উঠে আসছে নদী আর মোহনার শাশ্বত প্রত্যয়, কবি মহম্মদ ইকবাল এরকম চির প্রবাহের নাম দিয়েছিলেন ‘জিন্দাদিল’।যার বাংলাকরণ নিয়ে শঙ্খ ঘোষের সঙ্গে চিঠিপত্রে স্বাস্থ্যময় বিরোধ বেঁধে যায় সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের। সে আরেক প্রসঙ্গ হলেও অবনি রায়চৌধুরীর আরোহনে জিন্দাদিল-এর মিতব্যয়ী সঙ্কেত লক্ষ করে নির্মল আনন্দ অনুভব করছি ।
বাহার উদ্দিন। ২৩/০৩/২০২৪
কখনো দুর্বল সেতু মুখ বুজে কাঁদে
♦ কবিতার মুহূর্তে কি খুব অস্থির হয়ে ওঠেন ?
অবশ্যই একধরনের অস্থিরতা কাজ করে কবিতা লেখার মুহূর্তে।
♦ ভেবেচিন্তে লেখেন, না স্বতঃস্ফূর্তভাবে ?
স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই লেখা আসে, তবে ফাইনাল করার আগে একটু সচেতন ভাবনায় জড়িয়ে পড়ি বৈকি।
♦ কখনো কি মনে হয়, কেউ আপনাকে ভেতর থেকে লিখিয়ে নেয়, এমন কোনো মনোবাসী ?
আমি লিখি না, লেখে অন্য কেউ।আমারই লেখা একটা কবিতার লাইন —”কবিতা লেখেন দেবদূত,আমি দূর থেকে চেয়ে থাকি তার দিকে…”
♦ একটানা লেখেন, না থেকে থেকে লিখতে হয় ?
দু’ভাবেই লিখে থাকি।
♦ লেখার আগে কি মনে মনে পংক্তি আওড়ান ?
লেখার আগে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পংক্তি আওড়াই না।
♦ অন্তমিল, মধ্যমিল কি কবিতায় ফেরাতে চান ?
ফিরে আসতেই পারে কখনো।
♦ ছন্দের ওলট পালট বা ভাঙচুর কতটা পছন্দ ?
কবিতা দাবি করলে ছন্দে লিখব,কবিতা দাবি করলে ছন্দ ভাঙব।গাছের কথা লিখতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই ছন্দ আসবে। ভাঙা মানুষের কথা লিখতে গেলে ছন্দ অবশ্যই ভাঙব।কোনোটাই আরোপিত নয়, সবটাই সহজ সরল পথে আসে আমার কাছে।
তরী সমগ্র
সেই গানটা আবার উড়ে এসে বসেছে আমার রাতে
আমি ওর মাথায় জ্বর বোলাই
কপালের চাঁদ ঠিক করে দিই
ওর চোখের চৌকাঠে একটা সনাতন লাল বারান্দা
পায়ে চুম্বন স্তব্ধ হয়ে আছে একলা বীর্যের মতো
হলুদ চুম্বন মুছে দিলাম যেই
গান উড়ে চলে গেল উদাসীন
এমন তো কথা ছিল না অন্ধকার…
অব্যয়
ও আর এবং লিখেছি প্রথম লাইনে
মাত্র দুটি অব্যয় লিখে থেমে গেছি
এগুতে পারছি না আর
আমি এই পারে আর আমার কবিতার
যাবতীয় শব্দ ওইপারে দাঁড়িয়ে
ও আর এবং সব ভাগ করে দিচ্ছে
আমার না লিখতে পারা কবিতার পাশে বসে
একটা দুর্বল সেতু মুখ বুজে কাঁদে…

চিত্র: শান্তি দাভে
সাঁতার
তোমার সাদা স্তনে লাল পিঁপড়ের বাসা
তোমার মুখ থেকে গড়িয়ে নামছে বিবাহ
পায়ের কাছে জেগে আছে অনন্ত পাঠশালা
ফেলে রেখে চলে এলাম তোমায়
যেভাবে খিদে ফেলে আসে প্রতিটি অন্ধকার গলি
প্রিয় ছায়া,তুমি মৃত্যু দেখোনি?
একবার দেখো,কী অপূর্ব বিষ লেগে আছে তোমার সাঁতরে…
♦–♦♦–♦♦–♦♦–♦
❤ Support Us