- ক | বি | তা রোব-e-বর্ণ
- এপ্রিল ৭, ২০২৪
কবিতার মনোবাসীর খোঁজে। পর্ব ১৭

চিত্রকর্ম: নাওয়াল কিশোর
মৃত্যুর পরেও স্বপ্ন দেখে যাব
ইদানিং কান একটু কাত করলেই আমরা শুনতে পাই, ফেসবুক সব শুষে নিচ্ছে। যিনি লেখক নন, কবি নন, চিত্রকর নন, প্রাবন্ধিক নন, তাকেও উপযাজক হয়ে, প্রত্যাশার চেয়ে বেশি স্বপ্নময়, মোহাচ্ছন্ন করে তুলছে ইন্টারনেটের ফাঁদ। এই ধরনের ভাষণ আর আক্ষেপ অংশত সত্য। নেতির চোখ দিয়ে মুখপঞ্জির [ফেসবুক] বাস্তবতা উড়িয়ে দেওয়া অন্যায়। তথাকথিত সমাজ মাধ্যম যা করবার, তা করছে। অনবরত। সমস্ত অনুশাসন উড়িয়ে দিয়ে। তাকে কবি কিংবা যে- কোনো শিল্পসত্য কীভাবে ব্যবহার করবে, জায়গা দেবে সৃজনে, সেটা তা ঠিক করার দায়িত্ব ফেসবুকের নয়, রাষ্ট্রের নয়, একান্তভাবে শিল্পিত স্বভাবের।
চারপাশে ধোঁয়া উড়ছে। কোথাও যুদ্ধ হচ্ছে, অকথা কুথায় বিদ্ধ নির্বিশেষ। আমিত্বময় অহঙ্কার সহজকণ্ঠের সহজ কথাকে আড়াল করতে ব্যস্ত। রহস্যময়, প্রায় দুর্ভেদ্য পরিবেশে কেউ যদি সহজিয়া ভঙ্গিতে আমাদের শুনিয়ে দেন, তোমাদের রান্নাঘরে খেলা করে মেধাবী ফোঁড়ন। / স্বাদে কোনো ভুল হলে নুন তেলে দোষ ছিল,/ বোঝাও এখন/
সময়ের কাছাকাছি এরকম ভিন্নস্বরের উদ্দেশে বলতে হবে, বলতেই হবে, স্বাগত আবির্ভাব। তার মানে, দুর্দিন আর দুর্যোগের অবসান আসন্ন। ক্লান্ত হয়ে, হতাশ হয়ে কোনো কোনো বড়ো কবি ভাবতে পারেন, আপাতত লেখালেখি স্তব্ধ। এরকম ভাবনা পারেন, আপাতত লেখালেখি স্তব্ধ। এরকম ভাবনা অবশ্যই ব্যক্তিক পছন্দের [পার্সনাল চয়েস] বিষয়। সামাজিক পছন্দ [সোসাল চয়েস] বিষয়। সায় দেবে না অনাকাঙ্খিত অভিমানে।
অবক্ষয়ের চিহ্ন— পারিপার্শ্বিক সীমাবদ্ধ নয় শুধু, ব্যক্তিচিন্তায়ও ছড়িয়ে পড়ছে তার বিকৃত উপহাস। আবার, ক্ষয় আর আসন হারানোর ভয়কে বিলকুল আমল দেয় না যে তারুণ্য, যে নির্মল, নিভৃতে অথবা কলরবের মধ্যেও সে জানিয়ে দেয়; আমি ভিন্ন-অভিন্ন। বলতে এসেছি, যেতে যেতে অবশ্যই বলব। যে বলার অনিঃশেষকে আমাদের দেখবার সুযোগ হয়েছে শঙ্খ ঘোষ-এর ভাবনাচিন্তা আর প্রতিভার সংযত আয়োজনে।
কিছুই হচ্ছে না, হবে না, এরকম আক্ষেপের অর্থহীন উচ্চারণ বন্ধ হোক; গড়ে উঠুক স্বপ্ন দেখার নবীন অভ্যাস, কবিতায়–চিত্রকর্মে–নাটকে–শিল্পত স্বভাবের যে কোনো অনুশীলিত বিস্তারে। মৃত্যুর পরেও, যেন লিখতে পারি নিয়মিত খোয়াবনামা।
বাহর উদ্দিন । ৭.০৪.২০২৪

চিত্রকর্ম: দেব সরকার
কবিতা করুণা করে গ্রহ পর্যটনে আসে
♦ কবিতার মুহূর্তে কি খুব অস্থির হয়ে ওঠেন ?
‘কবিতার মুহূর্ত’ প্রসব মুহূর্তের মতোই পবিত্র ও গোপনীয়। সেই ঘোর বলুন অথবা অস্থিরতা— অবশ অনুভবের ওই প্রকাশ পবিত্র এবং অবর্ণনীয়।
♦ ভেবেচিন্তে লেখেন, না স্বতঃস্ফূর্তভাবে ?
ভেবেচিন্তে প্রবন্ধ লেখা যায়, কবিতা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই সম্ভব। কবিতাকে লেখা প্রকল্পের আওতায় এনে, অন্তত আমার পক্ষে, রূপায়ণ সম্ভব নয়।
♦ কখনো কি মনে হয়, কেউ আপনাকে ভেতর থেকে লিখিয়ে নেয়, এমন কোনো মনোবাসী ?
কবিতা এই গ্রহের কেউ নয়। তা হলে এই গ্রহে অনাহার, হিংসা, দ্বেষ বা যুদ্ধ থাকত না। কবিতা করুণা করে পৃথিবী পর্যটনে আসে, মাঝে মাঝে, ধরা দেয়, তাই লেখা হয়।
♦ একটানা লেখেন, না থেকে থেকে লিখতে হয় ?
যখন যেরকম আসে, তখন সেরকম। কখনও তিনমাসে একটিও লাইন আসে না, কখনও সাত দিনে উনিশটা কবিতা পরপর নেমে আসে— তখন একটানা।
♦ লেখার আগে কি মনে মনে পংক্তি আওড়ান ?
ঠিক পংক্তি আওড়ানো বলতে যা বোঝায়, হয়তো সেরকম নয়। তবে, কিছু শব্দ, কিছু দৃশ্যকল্প বারবার ফিরে ফিরে এলে, বুঝতে পারি কবিতারা কাছাকাছি আছে, ধরা দিলেও দিতে পারে। ওই শব্দ, ওই দৃশ্যকল্পগুলি মন থেকে সরে যেতে দিই না, আওড়াই।
♦ অন্তমিল, মধ্যমিল কি কবিতায় ফেরাতে চান ?
তেমন কোনও, যাকে বলে, এজেন্ডা নেই। প্রথমে গদ্যে লিখতাম, পরে ছন্দে ফিরেছি। ভুল বললাম। কবিতা, আমার কাছে এই ভাবেই এসেছে। ঘুমের মধ্যে পাওয়া সম্পূর্ণ একটা কবিতা ঘুম জড়ানো গলায় কোনওক্রমে রেকর্ড করে রেখে আবার ঘুমিয়েছি। সকালে উঠে, টাইপ করার সময় দেখছি, নিখুঁত মন্দাক্রান্তা। রাস্তায় চলতে চলতে ধরা দিয়েছে অক্ষরবৃত্ত।
♦ ছন্দের ওলট পালট বা ভাঙচুর কতটা পছন্দ ?
বেশ ভাল লাগে। এক মাত্রা কম দিয়ে শূন্যতা বা একটু আকাঙ্ক্ষা তৈরি করার চেষ্টা অথবা একমাত্রা বেশি দিয়ে একটু উথলে দেওয়ার চেষ্টা খারাপ লাগে না। ছন্দ ঠিকমতো রপ্ত না করে অপটু হাতের ছড়িয়ে ফেলা দেখলেও বেশ মজা লাগে।

চিত্রকর্ম: নাওয়াল কিশোর
জ্বর
ঘোরতর অসুখের
বিফল বাহানা নিয়ে—
তোমার ছোঁয়ার দিকে যাই।
যেন তাপ শুষে নেয়—
তোমার আঙুল।

চিত্রকর্ম: নাওয়াল কিশোর
কৌতুক
ঝাঁপ দিয়ে চলে গেলে
উভচর জীবনের দিকে।
শুনেছি এখন রোজ
তোমাদের রান্নাঘরে খেলা করে
মেধাবী ফোড়ন।
স্বাদে কোনও ভুল হলে
নুন তেলে দোষ ছিল
বোঝাও এখন ?

চিত্রকর্ম: নাওয়াল কিশোর
দাম্পত্য
তুমি খুব রাগ করে
ক্রদ্ধ অন্ন বেড়ে দিলে তাকে।
রাত থেকে ভোর হল
পড়ে আছে সব।
ঘুম ভেঙে তুমি দেখো
নেশাঘোরে শুয়ে আছে—
তোমার ভৈরব।
♦–♦♦–♦♦–♦♦–♦
চিত্র সৌজন্য: চিত্রকরের সোশ্যাল মিডিয়া পেজ
❤ Support Us