- ক | বি | তা রোব-e-বর্ণ
- জানুয়ারি ১৪, ২০২৪
কবিতার মনোবাসীর খোঁজে।পর্ব ৭
চিত্রকর্ম: আলি আকবর
ভাবতে আর বলতে ভালো লাগে
অদীপ ঘোষ কোন দশকের কবি, এরকম প্রশ্ন তোলা অসঙ্গত। অপ্রাসঙ্গিক। কবিকে, যে কোনো সৎ শিল্পীকে দশক দিয়ে চিহ্নিত করা যায় না, উচিত নয়। সময়ের চিহ্ন থাকতে পারে, তার কবিতার শরীরে, হৃদয়ে। তা বলে কি সাময়িকের ক্ষতে, কিংবা আনন্দে থমকে যায় তাঁর উচ্চারিত শব্দ ?
সম্ভবত ১৯৫০ এর পর, কোনো একদিন, রাস্তায় চলতে চলতে মোহিত, আবেগপ্লুত হয়ে অচেনা এক তরুণীর উদ্দেশে বলে উঠলেন, পরে তাঁকে নিয়ে ভাবতে থাকলেন কবি অরুণকুমার সরকার— ও দুটি চোখের তাৎক্ষণিকের পাব কি পরশ যৎসামান্য ! ভেতরের ধ্বনি আর আবেগের শাশ্বত হাহাকার।এরকম ঘটনা কি তাৎক্ষণিক শুধু ? না এ স্রোত চির তরুণ, চিন্ময়? এখানে তাৎক্ষণিকা কোথায়? যদি না থাকে, তাহলে কোনো কবিকে, চিত্রকরকে, প্রজ্ঞার উচ্চারণকে তারিখ দিয়ে, সন দিয়ে, দশক দিয়ে মাপা যায় না । স্মৃতি সব সময় জাগ্রত। সে ইতিহাস, সমাজতত্ত্বের অনুশাসন মানে না। মান্যতা দেয় যুক্তিকে । আবেগ তাড়িত মুহূর্তেও জেনে বা না জেনে তাকে যুক্তির দ্বারস্থ হতে হয়। কোন যুক্তির ? যে-শিক্ষিত আর বিবেকাশ্রিত।কবিতা আবেগ আর যুক্তির যোগফল। অদীপের কবিতা আমরা এভাবেই পড়ি। তাকে নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে। বলার পরিসর পেলে খুশি হই। কেননা, তার হাহাকার ও ক্ষোভের সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে দেখবার, মিশিয়ে দেবার ইচ্ছে জেগে ওঠে।
সম্পাদক ।১৪.১.২০২৪
স্বরবর্ণ জলে পড়ে গেছে
♦ কবিতার মুহূর্তে কি খুব অস্থির হয়ে ওঠেন ?অস্থিরতা তো একটা থাকে, কিন্তু সেটা তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। লেখার মুহূর্তে থাকে ভীষণ উদ্বেগ, লেখাটা কি আদৌ কিছু হচ্ছে— এই ভাবনা লেখার সঙ্গে সঙ্গে একই তালে চলতে থাকে ।
♦ ভেবেচিন্তে লেখেন, না স্বতঃস্ফূর্তভাবে ?ভাবনা-চিন্তা ও স্বতঃস্ফূর্ততার ঠিক মধ্যবিন্দু থেকেই লেখাটা সাধারণত শুরু হয়। কোনো বিষয় নিয়ে ভাবনা-চিন্তা যখন পরিণতির আভাস পায়, তখনই আমার সেনা ছাউনিতে থাকা শব্দ-সৈন্যগুলো যুদ্ধে নামে ; তবে কখনো কখনো ভাবনার উদ্দাম তাড়ায়, শব্দেরা লাগাম ছাড়িয়ে ছোটে, পরে সেগুলির কাটা- ছেঁড়া করতেই হয়।
♦ কখনো কি মনে হয়, কেউ আপনাকে ভেতর থেকে লিখিয়ে নেয়, এমন কোনো মনোবাসী ?না; মনোবাসী নয় , কোনো কোনো ঘটনা তথাকথিত মনোবাসীর কাজটা করে। অশোক মিত্রের
মৃত্যুতে মনে হয়েছিল, ‘পিছনে হাঁটার মতো সামনে এখন কেউ নেই’। এই ভাবনা থেকেই লিখেছিলাম ‘স্বরবর্ণ জলে পড়ে গেছে’।
♦ একটানা লেখেন, না থেকে থেকে লিখতে হয় ?…অধিকাংশ সময় একটানাই লিখে ফেলি।
♦ লেখার আগে কি মনে মনে পংক্তি আওড়ান ?
…না, এমন হয় নাকি !
♦ অন্তমিল, মধ্যমিল কি কবিতায় ফেরাতে চান ?বিষয়টি সম্পূর্ণভাবেই ভাবানুসারী আর ভঙ্গিনির্ভর। যে চলে যায়, সে কি অবিকল একইভাবে কখনো ফেরে ?
♦ ছন্দের ওলট পালট বা ভাঙচুর কতটা পছন্দ ?…প্রশ্নটি আরও আক্রমনাত্মক হলে ভালো হতো। ছন্দের ওলট পালট বা ভাঙচুর অপছন্দের নয়। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, এই অধিকার তাঁদেরই আছে,যাঁরা ছন্দ জানেন,বোঝেন। না বুঝে কোনো বিপ্লবই হয় না। কবিতাও তো একধরনের বিপ্লব। কখনো নিঃশব্দে, কখনো আসে স্রোতের তোড়ে।
এসময়
সময়ের স্বাদ ঠিক বুঝতে না পেরে কাক মাঝরাতে চিৎকারে নগর জাগালো
ঘুমের ভেতরে সেই আকস্মিক ডাকে খিল খুলে দেখা গেল —
তখনও আকাশ ভোর থেকে বেশ কিছু দূরে
অগত্যা কুকুরগুলো আবার নতুন করে নিরীহ বিশ্রামে
এটাই মাহেন্দ্রক্ষণ বুঝে নেকড়েরা খুব চুপ পায়ে প্রসূতি সদনে
ভোরের আগেই মায়ামন্ত্রে সব সাফ
ভোর হলে চারপাশে কান্নার কোরাস শুনে দেশান্তরী কাক
সময়ের পেট চিরে লিখে গেল— গাড়োলের সংখ্যা বাড়ছে
ভাতের আকাল
নিজের ছায়াকে দেখে আজকাল খুব ভয় পাচ্ছি
কারণ অন্ধকারেও সেই ছায়া রীতিমতো স্পষ্ট
একটানা সেই ভয় ক্রমশ বিরক্তি হয়ে দিনরাত দশদিকে ছড়িয়ে পড়ছে
ডাস্টবিন সব থেকে নিরাপদ স্থান ভেবে জঞ্জালের স্তূপে বসে আছি
নতুন জঞ্জাল দেখে অজস্র অচেনা পোকা রীতিমতো ধন্ধে পড়ে গেছে
আইন ভাঙার দায় তারা কেউ নিতে রাজি নয়
যদিও আমার ছায়া নিজেকেই ভেঙেচুরে পোকা হয়ে গেল
মারাত্মক একাকিত্ব নিয়ে আমি রাত্তির পেরোই
ভোরের প্রথম রোদে অজস্র ভাতের থালা নিয়ে বসে থাকে সেই পোকাদের ছায়া
♦–♦♦–♦♦–♦♦–♦♦–♦
❤ Support Us