- ক | বি | তা রোব-e-বর্ণ
- ডিসেম্বর ৩১, ২০২৩
কবিতার মনোবাসীর খোঁজে।পর্ব ৬
চিত্রকর্ম: জেরাড সেকোডো।শিরোনাম: প্যারিসের কফি হাউস
পায়ে পায়ে চলে এক মহাযান
এবার আমাদের প্রশ্নমালার উত্তরমালা রচনা করেছেন অভীক মজুমদার। যাদবপুর বিশ্ব বিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক। এটা তাঁর পরিচয় চিহ্ন নয়। অভীক খাঁটি কবি, মিতব্যয়ী। সংযত তাঁর উচ্চারণ, গড়তে জানেন ছন্দ, ভাঙতেও পারেন আনায়াসে। একধরণের দার্শনিকতা বোধ তাঁর, ঋদ্ধ করে, ভাবিয়ে তোলে কবিতার নির্বাচিত পাঠককে। সবাই তাঁর পাঠক নন, জনপ্রিয় হয়ে ওঠার ইচ্ছেকে থামিয়ে দেন প্রকরণের কৌশলে।দ্বন্দের অন্ধকারে, ছন্দের আলোকে জাগ্রত অভীকের কবিতার শর্ত। সচেতন, অকৃত্রিম তাঁর শিল্পিত স্বভাব। দূরে যায়, কাছে আসে আলোকিত জিজ্ঞাসা, চেতনে-অবচেতনে পায়ে পায়ে চলে এক মহাযান, নিশানা দূরবর্তী বন্দর।
সম্পাদক ।৩১.১২.২০২৩
‘ পৌঁছতে পারি না, জেদ বাড়ে ’
♦ কবিতার মুহূর্তে কি খুব অস্থির হয়ে ওঠেন ?না, বাহ্যিক কোনো অস্থিরতা দেখা যায় না।
♦ ভেবেচিন্তে লেখেন, না স্বতঃস্ফূর্তভাবে ?এক একটি লেখা এক-একরকমভাবে আসে।এটি সচেতন-অবচেতন সম্মিলিত রহস্যময় প্রক্রিয়া। অন্তত আমার মতে।কোনো একদিকে অতিরিক্ত জোর দিয়ে লাভ নেই।
♦ কখনো কি মনে হয়, কেউ আপনাকে ভেতর থেকে লিখিয়ে নেয়, এমন কোনো মনোবাসী ?মনে পড়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অমোঘ পঙক্তি –‘যে লেখে যে আমি নয়’।মনে পড়ে, অমিয়ভূষণের গদ্যরচনা বিষয়ক পুস্তক ‘লিখনে কী ঘটে’। সত্যিই, লিখনের সময় কী ঘটে, তার হদিশ অন্তত আমার জানা নেই। আমি নিশ্চিতভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চাই শব্দ– ছন্দ–চিত্রকল্প নিয়ে, তবে লেখার মুহূর্তে সেইসব সংকল্প কোথায় হারিয়ে যায় ! এ কথাও নিখাদ সত্যি, যে দুঃসাহসিকতা দেখানোর জন্য লেখায় আমি কোনোদিন বিশ্বাস করিনি। ব্যর্থতা ভবিতব্য জেনেও এক রহস্যময় অভিযাত্রায় পাড়ি দেওয়ার রোমাঞ্চ উপভোগ করি। নানা আলো-আঁধারি, চেতন-অবচেতনে পায়ে-পায়ে চলা।‘কবিতা’ কিনা জানি না, আমার ওই পারানির কড়ি। যাবতীয় সম্বল। ওটুকুই।
♦ একটানা লেখেন, না থেকে থেকে লিখতে হয় ?এক-একটি সময় একটানা। অনেকবার ‘থেকে- থেকে’। লেখার সময় আমার খুব ‘পরিকল্পনা’ থাকে না। অনেক সময়, লেখার পর সংশোধন, সংযোজন বা কাটাকুচি বরং সচেতনভাবে করি।
এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, জনপ্রিয়তা থেকে কবিতা কাছে না দূরে— এটা আমার চিন্তা নয়। আমার চিন্তা হলো, ‘অনুভব’ নামক বিমূর্ততাকে অক্ষরে-শব্দে-পঙক্তিতে সন্তোষজনকভাবে ধরতে পারলাম কিনা। অনেক সময়ই ব্যর্থতা। কখনো কখনো ত্বদাচিৎ প্রকাশযোগ্য। যা লিখতে চাই তার ধারে কাছেও পৌঁছতে পারি না। জেদ বাড়ে।
এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, লেখার সময় একটা ঘোরের মধ্যে চলে যাই। নইলে, লেখা দশ পঙক্তিতে শেষ হবে না আট কিংবা কুড়ি পঙক্তিতে, একথা কীভাবে ঠিক হয়, জানি না তো। কোন ছন্দে ধরা দেবে অধরা মাধুরী সে-ও অজানা।
♦ লেখার আগে কি মনে মনে পংক্তি আওড়ান ?তেমনও হয় মাঝে-মাঝে। নির্দিষ্ট কোনো পদ্ধতি নেই, আমার ক্ষেত্রে।
♦ ছন্দের ওলট-পালট বা ভাঙচুর কতটা পছন্দ ?ছন্দোবদ্ধ রচনার প্রতি আমার একটু দুর্বলতা আছে। তবে লেখার সময় অনেকটাই অনির্ধারিত প্রবাহে চলে আসে।
অভীক মজুমদার
কথা
কথা তো লুকোনো
শুধু যদি শোনো
হাহাকার বনে বনে
দুটি বক ওড়ে
গোধূলি ঘনায়
শৈশব মনে পড়ে !
২
হাতে যদি
হাত রেখেছিলে
বোঝোনি কি
শিরায়
সমানে
ঢাক বাজে: কখন ভাসান ?
জড়ালে নদীর মতো,
পাঁজরে পাঁজরে
গানে
শুনেছিলে
দিবা অবসান ?
৩
একটু একটু করে পৌঁছে গেছি সন্ধের মাসে।‘ লেপচা ভাষায় কোনো গালিগালাজ বা অপশব্দ না।’ কথাটা তখন বলেছিলেন, তখন গাছের গায়ে রোদ বসেছিল হীরামন পাখির মতো। মেট্রো স্টেশনের সিঁড়িতে একজন ফকির তাঁর চেলাকে গুণগুণ করে কী একটা গান শোনাচ্ছিলেন। আচ্ছা, দীপুদা, একদিন কি যন্ত্রেরাও প্রাণীর মতো আচরণ করবে ? তরুণ, তোর মেয়ের জন্য বেলুন কিনবি না আজ ? একবার, মনে আছে, আমরা দেওঘর গিয়েছিলাম ? ত্রিকূট পাহাড়ে ঘন্টা বাজতো।দুটো বেড়াল কার্নিশে লেজ ঝুলিয়ে ঝগড়া করছে।এরপর রক্তারক্তি হবে।আকাশগঙ্গা শব্দটায় কি কেউ আছে ? জোয়ার না ভাটা ?
অসমাপ্ত…
♦–♦♦–♦♦–♦♦–♦♦–♦
❤ Support Us