- ক | বি | তা রোব-e-বর্ণ
- জুলাই ২৩, ২০২৩
স্বাতন্ত্র্যের খোঁজে
চিত্র: শান্তিলাল সোমনাথ দাভে
গুচ্ছ কবিতা এবার বাদ দিতে হল, বাংলা আর বাংলার বাইরে ছড়িয়ে থাকা কবিদের একক কণ্ঠের অনুভূতির বিস্তার দেখার অভিপ্রায় নিয়ে। কবিরা কতটা আত্মমগ্ন, তাঁদের কীভাবে স্পর্শ করছে পারিপার্শ্বিকের মালা ? শব্দ চয়ন আর বাক্-প্রতিমা নির্মাণে তাঁদের স্বাতন্ত্র্যের অভিমুখটা কী, কতটা দাঢ্য, এরকম প্রশ্ন উঠবে ? প্রশ্নের জবাব খুঁজতে খুঁজতেই আমরা অনুভব করব নতুনের উপস্থিতি। স্বীকার করতে বিলকুল সংশয় নেই, চারদিকে অবক্ষয় চলছে, একধরনের অবরোধ তৈরি করছে অনুশাসন ! এসব খান খান করে, আশা করি, ঝলসে উঠবে ব্যক্তিপ্রতিভা, নিয়ম ভাঙার কলরবে সায় দেবে কবিদের সমবেত প্রয়াস।
বাহার উদ্দিন
২৩.০৭.২০২৩
বিদিশা সরকার
এই ভ্রান্তদর্শীর চোখে
আসলে এই ভ্রান্তদর্শীর চোখে কারা ঠুলি পরিয়ে দিয়েছিল জানা নেই।…
কাজলদানীতে মিশিয়ে দিয়েছিল কর্পূর
স্বপ্নগুলো উড়ে যাচ্ছিল, না পুড়ে যাচ্ছিল বুঝতে পারেনি সে
শুধু হেমন্তের চাদরে নামাবলীর চৈতন্য,
গ্রামীণ সংস্কৃতির মেঠো প্রেমবাজারে ।
সে নদীর উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে
ডুবে গেল রাস্তায়
বিচলিত হলনা কোনো পথ
বেদুইন সভ্যতা বজরার রুটি সেঁকে নিচ্ছিল তাঁবুর আঁচে
জরিমানার অঙ্ক বাড়তে বাড়তে সে ভুলের পারিশ্রমিক
ঝাউবনের ভিতর হারিয়ে যেতে যেতে
হারিয়েই গেল
ছাঁকনি
যতবার তোমার কথা বলতে চেয়েছি…
থামিয়ে দেওয়া হয়েছে
যতবার তোমার কথা জানতে চেয়েছি
বোবা হয়ে গিয়েছে সব সকাল
এমনকি চাতার পাখিরাও
গমের দানার মত ঘোলাটে রোদ্দুরে
শ্যামল শস্যের মতো হাওয়ায় কথারা কাকে শোনাচ্ছে
মুস্তফা সিরিজ
সুরগুলো এক কাপ
বেদনার রসে
নেমে যাচ্ছে গলা দিয়ে
গিলে নিচ্ছি কান্নার সহবত
দেখা হাওয়ার দিনগুলো
না দেখা হওয়ার দিনগুলোকে
বাঁচিয়ে রাখতে রাখতে
শীর্ণ হয়ে গেছে যে নদী
একটা ডট পেন কী অনায়াসে ফুটো করে দিচ্ছে
কবিতার ছাঁকনি দিয়ে ঢুকে পড়ছে নদীবাহিত বিশেষ বিশেষ সংবাদ
♦–♦♦–♦♦–♦
তাপস ওঝা
ততদিন
আরো বিকৃত করো মুখ
মুখভঙ্গি তীব্র করো আরো
যেন কোনো প্রতিবাদ করতে না পারে কেউ —
চিৎকার করে যাও,
চিল যেন হার মানে।
সকাল-সন্ধে লোকদের ব্যতিব্যস্ত রাখতে
হুল ফুটিয়ে যাও।
সে সব করে করে এসে
একদিন দেখা যাবে সার্বিক ঘৃণা ছাড়া
কিছুই পাওয়া হচ্ছে না তোমার।
ততদিন বেঁচে থাকার জন্যে গোপনে
অত্যন্ত গোপনে
রসদ সংগ্রহ করে যাচ্ছি আমরা
♦–♦♦–♦♦–♦
আজিজুল হাকিম
আমাকে ভেজাও
অনেক দিন পর তুমি এলে ।
সত্যি কি এলে !
তখন আমি শুকনো খাঁ খাঁ মাঠ, অনুর্বর বন্ধ্যা চরাচর
তখন আমি চাষীর মনে বেদনার হা হুতাশ
তখন আমি জলবিহীন শূন্য নদী খাল
তখন আমার বুকে ব্যাঙের কান ফাটানো চিৎকার
তখন আমার বুকে উড়ে যাওয়া ধূসর বালুঝড়
তখন চাতকের আকাশ পানে চেয়ে চেয়ে ব্যর্থ হয়ে ফেরা ।
তখন তোমার পানে চেয়ে চেয়ে আমার ঘাস কপালে পোড়া ।
আমার পথে, আমার পাশে, আমার জীবনে
তখন লকলকে আগুনের জিভ ।
ঠিক তখন, আচমকা তুমি এলে
ঠিক অনাকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির ধারা !
তোমার ভালোবাসার স্পর্শে আমি ভিজতে লাগলাম
নাচতে লাগলো আমার অনুর্বর বুক
আমার কৃষক শরীরে লাগলো ভাটিয়ালি গান
আমার নদীর বুকে জেগে উঠল কল্ললিত তরঙ্গিনী শিহরণ ।
আমি অবশ হয়ে পড়ছি
আমাকে ভেজাও, আরো আরো ভেজাও
যত পারো…!
ভিজিয়ে ভিজিয়ে আমাকে স্যাঁতসেঁতে করে দাও—
আমাকে তো উর্বর হতে হবে !
♦–♦♦–♦♦–♦
অভিজিৎ রায়
অসমাপ্ত অনুভব
মৃতের চোখের কোণে জল হয়ে বাঁচি
মরণ মুঠোয় ধরে, আমি ভাল আছি ।
ফুলের সুবাসটুকু শোকসভা ঘিরে
সুগন্ধি ভুলেছি দিতে মৃতের শরীরে ।
এত শোক, এত কান্না, এর আয়ু কত ?
জীবন নিজেকে চিনে ভুলে যায় ক্ষত ।
নিজের মৃত্যুর পর এইটুকু লিখে
আমি কি বাঁচতে পারি ভালবাসতে শিখে ?
♦–♦♦–♦♦–♦
তুষার ভট্টাচাৰ্য
মাটির শিকড়ে
দুঃখের খড়কুটো, অক্ষর, ব্যর্থতা আর অভিমান
সবকিছু ভোরের জলে
নীরবে ভাসিয়ে দিয়ে চলে যাব
সূর্যাস্তের গ্রামে;
মাটির শিকড়ে, গাছের শরীরে কাঁপা হাতে লিখে দিয়ে যাব
নিরুদ্দেশ সংবাদ;
ফিরবো না আর
যতদিন না মানব জন্মের যোগ্য হয়ে উঠতে পারি।
♦–♦♦–♦♦–♦
চিত্র সৌজন্য : শান্তিলাল সোমনাথ দাভে
❤ Support Us